ভোলা থেকে সাব্বির, আলম বাবুঃ নাম তার আব্দুল মন্নান। চল্লিশোর্ধ একজন পড়ন্ত যৌবনের দৃঢ় মানষিকতার প্রতিচ্ছবি। ভোলা জেলার চরফ্যাশন পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মন্নানের জীবনটা বিচিত্র। নিম্নবিত্ত পরিবারের এই লোকটি স্বল্প শিক্ষিত তাই কপালে জোটেনি ভালো কোন চাকরি, ব্যবসা বা কর্ম-সংস্থান। তাছাড়া পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশী হওয়ায় অল্প বয়সেই ছুটতে হয় রোজগারের ধান্ধায়। বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, হোটেলে ওয়েটার বা মেসিয়ারের কাজ করে খাবার তৈরীর কারিগরদের সাথে থেকে থেকে এক পর্যায়ে নিজেই নিজের কর্ম-সংস্থানের পথ তৈরী করে নেন। চা-সিঙ্গারার ছোট দোকান দেন। হাতের যশ আর নিজের কর্ম সক্ষমতাকে পুঁজি করে আজ এই পেশায় তার ২২ বছর অতিক্রম করছে। এরই মাঝে নিজে বিয়ে করেছেন, তিনটি ছেলে সন্তানের গর্বিত জনক হয়েছেন। প্রত্যেক ছেলে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। বড় ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স করছে, মেজ ছেলে এইচএসসি, ছোট ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী। আব্দুল মন্নানের সাথে আলাপকালে জানা যায়, দরিদ্র পরিবারের মানুষ বিধায় ছোট বেলা থেকেই তিনি রেস্টুরেন্টের কাজের সঙ্গে জড়িত। তার দোকানের বিশেষত্ব হলো খুবই সস্তায় ক্রেতারা এখানে চা-সিঙ্গারা-নাস্তা খেতে পারে। ১টি সিঙ্গারা ৩ টাকা, ১টি পেয়াজু ৩ টাকা, ১প্লেট বুট ৫ টাকা, ১কাপ চা ৫ টাকা ইত্যাদি। দামে সস্তা হলেও গুনে-মানে এই তৈরী সুস্বাদু খাবার গুলো ক্রেতাদের বেশ পছন্দের। পৌরসভার ফ্যাশন স্কয়ারে তার নিজস্ব বেশ কিছু রসনা বিলাসী ক্রেতা তৈরী হয়েছে। এই ক্রেতাদের প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও মন্নানের দোকানের চা-সিঙ্গারা খেয়ে রসনা তৃপ্ত করতেই হবে। এই দোকানে দৈনিক ৫/৬ কেজি ময়দা, ১২/১৫ কেজি আলু, মরিচ, পেয়াজ, ডাল, লবন, তৈল ইত্যাদি লাগে। এতে ৪০০/৫০০ পিচ সিঙ্গারা, ১৫০/২০০ পিচ পেয়াজু তৈরী হয়। দৈনিক প্রায় ৫০০০/৬০০০ টাকা বিক্রি হয়। এই দোকানের জন্য কোন ঋন নেয়া লাগেনি। নিজ পরিবারের কথা জানতে চাইলে মন্নান বলেন, ছোট বেলা থেকে দরিদ্র পরিবারে বড় হয়েছি তাই জীবনের উপর দিয়ে অনেক ঝড়-ঝাপ্টা গেছে, কিন্তু হতাশ হইনি। নিজে বেশী লেখাপড়া শিখতে পারিনি তবে স্বপ্ন ছিল সন্তানদের যেভাবেই হোক উচ্চ শিক্ষিত করবো। নিজে অপূর্ন সাধ তাদের মাধ্যমে পুরন করবো। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় তারা সে পথেই এগুচ্ছে। সেজন্য আমার দোকান ও ক্রেতারা আমাকে নিঃস্বার্থ সহযোগীতা করেছে, আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।
একজন আব্দুল মন্নানের মতো মানুষের এই কর্মকান্ড সত্যিই অনুকরনীয়।