তৌফিক রাসেল: একজন আদর্শ শিক্ষিকার অনেক গুনাবলী থাকে।একটা ভাল অভ্যাস শিখালে সেটা শিক্ষার্থীর জীবন টাই পরিবর্তন করে দিতে পারে।শিক্ষার্থীদের পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলা। অনেক শিক্ষক শিক্ষিকা জানেই না যে শিক্ষার্থীরা তাকে পছন্দ করে না। বা তাকে পছন্দ করলেও তার বুঝানোর ধরন কঠিন হওয়ার কারনে তার পাঠ বুঝতে পারে না।তাই আদর্শ শিক্ষক- শিক্ষিকা হলে বুঝতে পারবে,শিক্ষার্থীরা কতটুকু পছন্দ করে বা পড়া বুঝতে পারে কি না?এ রকমই একজন আদর্শ শিক্ষিকা লায়লা ফেরদাউস জাহান ঝর্ণা ।যিনি বরিশাল ব্যবটিসমিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ।যিনি শিক্ষার্থীদের যেমন ভালোবাসেন,তেমনি পাখিদের খুব ভালোবাসেন।যদি কখনো খাঁচা বন্দি পাখি দেখেন উম্মুক্ত করে দেন তাদের।যা একজন আদর্শ শিক্ষিকার সুন্দর দিক।এই ধরনের ভালো মনের মানুষ হচ্ছেন জ্বলন্ত মোমবাতির ন্যায় ৷ নিজে জ্বলে শিক্ষার্থীদের মাঝে আলো বিলিয়ে যান ৷উক্ত শিক্ষিকার পঞ্চাশ বছর জীবনে দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করছেন।তার শিক্ষক জীবন ঘরে থেকেই শিক্ষা নেন।দশ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। ছোট ভাই বোনদের পরালেখা করাতে গিয়ে চাকুরি নেয়ার আগেই শিক্ষকতা শুরু করেন ঘরে থেকেই।বাবা সরকারী চাকুরে ছিলেন বলে পরিবারে সময় দিতে পারতেন না বাবা।মা অসুস্থ ।এমন অবস্থায় অনেক কস্ট করেই বেড়ে উঠে দশ ভাই-বোন।সময়ের তালে তালে নিজের সংসার হয়।সংসার জীবনে তার এক ছেলে, এক মেয়ে ।ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ।মেয়ে এইচএসসি পরালেখা করছে।যাইহোক তার পাখির প্রতি ভালোবাসা দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন।তার এক স্ট্যাটাস দেখে মনে খুবই কম্পনের সৃষ্টি হয়েছে আমার।বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারনে লকডাউনে সারা পৃথিবী।তার ব্যতিক্রম নয় বরিশাল ।ফলে তার ঘরে বসেই দিন কাটছে।যেহেতু স্কুল বন্ধ ।তার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হয়েছে, করনার দিনগুলি:-
১৭ই মার্চ স্কুলে মুজিব বর্ষের সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি পালনশেষে বাসায় ফিরার পথে আম্মার জন্য দুই কেজি গরুর মাংস আর এক কুড়ি ডিম কিনে বুড়ো বাবা মাকে দেখে বাসায় ফিরতে বেলা তিনটা বাজে। বাসায় ফিরে সংসারের টুকিটাকি কাজ করছি কিন্তু মনে র মধ্যে একটা অস্বস্হিবোধ করছি ঠিক বুঝতে পারছি না।আমার মেয়েটি বিকালের প্রাইভেট সেরে বাসায় সন্ধ্যার মধ্যেই বাসায় আসে। ওর সাথে আমার স্কুলের মুজিববর্ষের বিভিন্ন কর্মসুচি নিয়ে আলোচনা করলাম। করোনা ভাইরাস সেই উহান নগরী থেকে বাংলাদশে চলে এসেছে। বাংলাদশের জনগনের মধ্যে এই ভাইরাস টি মহামারী আকারে সংক্রমিত হতে পারে, তাই সরকার মুজিববর্ষের কর্মসুচি সংক্ষিপ্ত করেছেন এবং দেশের সমস্হ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করেছেন।
ভালো লাগছে না। আসলে ভালো না লাগার অনেক কারন রয়েছে আমার এই দীর্ঘ পঞ্চাশোর্ধ জীবনে। না-ই বা বললাম সে কথা। ঘরের কাজ সেরে তড়িঘড়ি করে স্কুলে ছুটে যাই, শুধু যে চাকুরী সুবাধে সেটা মুখ্য হলেও আমার আরও একটা লোভ বল বা আকাঙ্খা বল সত্যি বলছি ওই ছোট ছোট হাসি মাখা কচি মুখগুলো দেখলে আমি আমার জীবনের সব কষ্ট ভুলে থাকতে পারি, ওরাই যেন আমার জীবনের সব আনন্দের উৎস।এভাবেই দুটোদিন কেটে গেল। আমি দুপুরে কাপড় মেলে দিতে ছাদে উঠতেছিলাম। সিঁড়ির ঠিক মাঝ বরাবর উপরের টিনের কাঠের বাতার ফাঁকে বুলবুলি বাসা বেধেছে আমি আগেই দেখেছিলাম, কিন্তু আজ দেখছি বাসায় বাচ্চা ফূটছে। বাচ্চাগুলো দেখে আমার আর আমার ঘরের সবাই খুব খুশি। কয়েকটা দিন বাচ্চাগুলো দেখাশুনা করেই আমার সময় কাটছিল।
২৪শে মার্চ আমার ছেলের অফিস ছুটি হয়। দুপুরে বাসায় ফিরে আমাকে ফোন দিয়ে ছুটি হওয়ার কথা আমাকে জানায়।
রাতের ফোনে ওর রুমমেটদের চলে যাওয়ার খবর দেয়। পরেরদিন থেকে সড়ক/ নৌ সব ধরনের যানবাহন বন্ধ ঘোষনা করে সরকার। ছেলেটা বাসায় ফিরতে পারলনা। আবার দুঃশ্চিন্তা!কয়েকদিন যাবৎ ছাদে যাওয়া হয় না।মেয়েটাও সেই যে কলেজ ছুটি হলো আর পড়ালেখার মন বসাতে পারছে না। শুধু মোবাইলের মধ্যেই পড়ে রইলো।রাতে মেয়ের কাছে বাচ্চাগুলোর খবর নিলাম ঠিকঠাক আছে কিনা। নাকি বিড়ালে খেয়ে ফেলল। এখানে হরেক রংয়ের বিড়াল আছে। কালো,বাদামী, সাদাকালো। একটা কালো কুচকুচে বিড়াল পাখীর বাসার ঠিক নিচেই ( সিঁড়ি তে) থাকে।ঘরের কর্তাকে বলেছিলাম ওটাকে তাড়াতে। সে বলল বিড়ালটা অসুস্থ , ও উপরে উঠে বাচ্চা খেতে পারবেনা। যাইহোক-
আমি পরেরদিন ঘরের কাজ সেরে বেলা দশটার দিকে ছাদে গেলাম।পাখির বাসায় একটি বাচ্চা বসে আছে। আর একটি পার্শ্বের দরির উপর বসা,আমাকে দেখেই ফুরুৎ করে ছাদের টিনের চালে গিয়েে বসল।দৌড়ে গিয়ে দেখি মা পাখিটার কাছাকাছি দুটো বাচ্চাই আছে।যাক বাবা- একটা স্বস্হির নিঃশ্বাস ছাড়লাম। ভাবলাম ওরা উড়তে শিখে গেছে, এবার ওরা মুক্ত আকাশে ডানা মেলে মনের আনন্দে নিঃশ্চিন্তে ঘুরবে।একটু মন খারাপ ও হয়েছিলো আমার। ওরা সন্ধ্যায় বাসায় ফিরবে তো?
আছরের নামাজ পড়ে বাসার সামনে একটু হাটাহাটি করছিলাম। হঠাৎ আমার নজরে পড়ল একটি পাখি বারবার কি যেন নিচ থেকে তুলতে চেষ্টা করছে, দেখি আমার ছাদের সেই মা পাখিটা! বাবা পাখিটা কাছাকাছি একটা গাছের ডালে বসা। দৌড়ে গেলাম। দেখি একটি বাচ্চা জঙ্গলে পড়ে আছে উড়তে পারছে না, মা ওকে উঠানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে। আমি তুলে এনে আমার পেয়ারা গাছের ডালে বসিয়ে দিলাম। কিছুতেেই উড়তে পারছেনা। ইতিমধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে,কি করব ভেবে পাচ্ছিনা। বাকী বাচ্চা দুটোও দেখছি না। আমি বাচ্চাটাকে বাসায় এনে ঝুড়ির মধ্যে রেখে খাবার দিলাম কিন্তু খেতে পারছে না।পরেরদিন বেলকুনিতে মা পাখিটা আমাকে দেখেই উড়ে এসে পেয়ারা গাছে বসল,আমি বাচ্চাটিকে গাছের ডালে বসিয়ে দিলাম। আজ সারা দিন একটু পরপর বাচ্চাটিকে নজরে রাখি।দেখি মা পাখিটা বা্চ্চাটিকে ঠোটে খাবার এনে খাইয়ে দিচ্ছে।বিকালে আজও নামাজ শেষে সামনে হাটছিলাম।দেখলাম মা পাখিটার পিছুপিছু বাচ্চাপাখিটা মাঠ পেরিয়ে ওপারের গাছের দিকে উড়ে যাচ্ছে। না এবারও পারলো না।বাচ্চাটি গহীন জঙ্গলে পরে গেল,যেখান থেকে তুলে আনা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মা পাখিটাকে নির্বোধ পাখি বলে বাসায় চলে আসলাম।মনে মনে আল্লাহ্ কে ডাকলাম তিনি দেখবেন বাচ্চা পাখিটাকে ।