ইতালি প্রবাসীর বাড়িতে তরুণীর অনশন, আত্মহত্যার চেষ্টা
প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১১:৫৯ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
বিয়ের দাবিতে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার এক মেয়ে ২১ দিন ধরে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় এক ইতালি প্রবাসীর বাড়িতে অনশন করছেন। এর মধ্যে মেয়েটি হারপিক খেয়ে আত্মহত্যারও চেষ্টা চালিয়েছেন। এতে বিপাকে পড়েছে প্রবাসীর পরিবার।
জানা গেছে, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার উথলী ইউনিয়নের এক মেয়ের (২০) সঙ্গে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের চান্দনী গ্রামের আব্দুর রব শেখের ছেলে ইতালি প্রবাসী ইয়াছিন শেখের (২২) ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ইয়াছিন বর্তমানে ইতালিতে রয়েছেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ওই তরুণী ৮০ হাজার টাকা ও দেড় ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে ইয়াছিনের বাড়ি চলে আসেন।
বিষয়টির কোনো সুরাহা না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই তরুণী। ইয়াছিনের পরিবার দ্রুত তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হওয়ায় তাকে শনিবার দুপুরে আবারো ওই বাড়িতে নিয়ে আসেন। বর্তমানে ওই তরুণী ইয়াছিনের বাড়িতেই অবস্থান করছেন।
ওই তরুণী বলেন, ইয়াছিনের সঙ্গে আমার দেড় বছরের প্রেমের সম্পর্ক। তার সঙ্গে সরাসরি দেখা না হলেও ভিডিও কলে দেখা ও কথা হয়। ইয়াছিন আমাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়েছেন এবং টাকাপয়সা ও সোনাগয়না নিয়ে তাদের বাড়ি আসতে বলেছেন। ইয়াছিনের আশ্বাসে ২১ দিন হয় আমি তার বাড়ি এসেছি। সে এখন আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এজন্য গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমি হারপিক খেয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছি। ইয়াছিনের সঙ্গে আমার বিয়ে না দিলে আমি এ বাড়িতেই আত্মহত্যা করব। কারণ আমার আর কোনো যাওয়ার জায়গা নাই। আমার পরিবারও আমাকে জায়গা দেবে না।
ইয়ামিনের বাবা আব্দুর রব শেখ বলেন, আমার দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে বিয়ে করে বাসা ভাড়া নিয়ে আলাদা সংসার করছে। ছোট ছেলে ইয়াছিন এক বছর হয় লিবিয়া যায়। সেখান থেকে এক মাস হয় ইতালি গেছে। সে বর্তমানে ইতালির একটি আশ্রয় কেন্দ্রে আছে। ছেলে ইতালি যাওয়ার পথে ধরা খাওয়ায় তার পেছনে আমার ২০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আমার জায়গা জমি বসতভিটা যা ছিল সব বিক্রি করে ছেলের জন্য টাকা পাঠাতে হয়েছে। আমি এখন অন্যের জায়গায় আশ্রয় থাকছি। এখন পর্যন্ত আমার ছেলে বাড়িতে দুই টাকাও পাঠাতে পারেনি। আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে রিকশা চালিয়ে স্ত্রী ও মেয়ে নিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি। রিকশা চালাতে পারলে খাইতে পাই, না পারলে না খেয়ে থাকি। এর মধ্যে হঠাৎ করে ঘাড়ের ওপর বাড়তি ঝামেলা এসে পড়েছে।
তিনি বলেন, আমি থানা পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়েছি। কারো কথাই ওই মেয়ে মানছে না। আমি থানায় মামলা করতে চেয়েছি কিন্তু পুলিশ আমার মামলা নেয়নি এবং মেয়েটিকে তার পরিবারের কাছে পাঠানোর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমি মেয়েটিকে আমার ছেলে দেশে আসলে সে যদি রাজি থাকে তাহলে তার সঙ্গে বিয়ে দেব; কিন্তু মেয়েটি কিছুতেই মানছে না। বিয়ে না দেওয়ায় সে হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আমরা দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে সুস্থ করে আবার বাড়ি নিয়ে এসেছি। মেয়েটি আবার না জানি কী অঘটন ঘটায়। আমরা বড় বিপদের মধ্যে আছি।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা রমিজ উদ্দিন সরদার বলেন, মেয়েটি ৭০ হাজার টাকা ও সামান্য কিছু স্বর্ণালংকার নিয়ে এসেছে। সেগুলো আমার কাছে জমা রেখেছে। ছেলে দেশে নাই, আর মেয়ে কোনো কথাই মানছে না। এর মধ্যে মেয়ে হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। ছেলের পরিবারও অসহায়। বিষয়টি দ্রুত মীমাংসা হওয়া দরকার।
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে আমি নিজে ওই ছেলের বাড়িতে গিয়ে উভয়ের কথা শুনেছি। মেয়ের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি; কিন্তু মেয়ের পরিবার মেয়ের ব্যাপারে কোনো দায়দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না। আর মেয়েও ছেলের বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আমাদের কী করার আছে।
নড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. পারভেজ বলেন, আমরা বিষয়টি জানি। আমরা মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি; কিন্তু তারা আসতে চাচ্ছে না। যেহেতু ছেলের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হয়নি, সেহেতু মেয়েটি ছেলের বাড়িতে থাকার আইনগত ভিত্তি নাই; কিন্তু মেয়েটিও কিছুতেই যেতে চাচ্ছে না। আর জোর করে তাকে পাঠানোও যাচ্ছে না। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, দেখি কী করা যায়।