কুমিল্লার লালমাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হুমকি দিয়েছেন লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হামিদ। তিনি নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ কামরুল হাসানের বাবা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বড় ভাই।
নির্বাচন উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার লালমাই উপজেলার ভুশ্চি এলাকায় দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমি হামিদ কত খারাপ, এটা টের পাইবা। আমি ২৭ তারিখ পর্যন্ত সময় দিছি দুইজনকে যে আমার ছেলের সঙ্গে নির্বাচন করবা না। হয় বন্ধ করো, আর না হয় ২৮ তারিখ দেখা হবে রাস্তায়। আমার বয়স ৮০ বছর। আর কয় বছর বাঁইছছাম, আমার বাঁচার আর সাধ নাই।’
আবদুল হামিদের বক্তব্যের সোয়া এক মিনিটের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন আগামী ১৬ মার্চ। ২৭ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার বিষয়টি গতকাল শনিবার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসারকে জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কামরুল হাসান কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এবং কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি। তাঁর বাবা আবদুল হামিদকে বলতে শোনা যায়, ‘এখন যাঁরা দাঁড়াইছে আমার ছেলের সঙ্গে, কথা বোঝেন, ওনারা অনেক দায়িত্বে ছিলেন। লোটাস কামাল (অর্থমন্ত্রী) তাঁদের অনেক কিছু দিয়েছেন। এ হারুনকে (মো. হারুন অর রশিদ মজুমদার) ছাড়া। হারুনকে কিছু দিছে কিনা, আমি জানি না। এটা কামাল জানে, আর হারুন জানে। কিন্তু মমিনকে (আবদুল মমিন মজুমদার) অনেক কিছু, অনেক কিছু দেওয়া হয়েছে। সে যা পাইছে, লালমাই উপজেলার মানুষ তা পায়নি।
লালমাই কলেজে প্রিন্সিপাল করে দিছিল, কালাম মজুমদারে (সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম মজুমদার) চাকরি দিছে, লোটাস কামালে প্রিন্সিপাল বানাইছে। এই যে প্রিন্সিপাল অইল, ভুশ্চির কোনো ছেলেমেয়েকে সে বিনা বেতনে ফরম ফিলআপ করাইছে? দেখাইতে বলেন, পুরা লালমাই উপজেলাতে একটা ছেলে অথবা একটা মেয়েকে ফরম ফিলআপ করাইছে টাকা দিয়া বা ২০০ টাকা কমাই দিয়া এমন নজির আছে কিনা।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আবদুল হামিদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘দলের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের নির্বাচনী মাঠে না দেখে আব্বা দলীয় নেতা হিসেবে হয়তো এই বক্তব্য দিয়েছেন।’ বর্তমানে কামরুল হাসান ছাড়া চেয়ারম্যান পদে ভোটের মাঠে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল মমিন মজুমদার এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বিদ্রোহী প্রার্থী মো. হারুন অর রশিদ মজুমদার। এই দুই প্রার্থীর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। এ ধরনের বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। দায়িত্বশীল পদে থেকে কেউ এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না।