আমার প্রতিশ্রুতি একটাই তা হচ্ছে– নতুন বরিশাল : খোকন সেরনিয়াবাত
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল, ২০২৩, ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
বরিশাল নগরে মধ্যম মানের আবাসিক এলাকা ‘কালুশাহ সড়ক’। বিএনপি নেতা ও সাবেক মেয়র (প্রয়াত) আহসান হাবিব কামালের বাসভবন থাকায় সড়কটি সাধারণ মানুষের কাছে বেশ পরিচিত। তাঁর বাসভবন থেকে ৪০০ গজ দূরে ছয়তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি ইউনিটে প্রায় দেড় বছর আগে ভাড়াটিয়া হিসেবে আসেন ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। ব্যবসার প্রয়োজনে ঢাকা ও খুলনায় বসবাস করেন তিনি। মাসে দু-একবার শুক্রবারে এসে আবার শনিবার চলে যেতেন। দিনে সর্বোচ্চ ১০-১২ জন লোক তাঁর কাছে আসতেন বলে জানালেন ভবনটির কেয়ারটেকার। পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে তেমন পরিচিতি ছিল না তাঁর। ভাড়াটিয়া সেই ব্যক্তি এখন শুধু কালুশাহ সড়ক নয়, গোটা বরিশাল নগরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন।
নীরবে আসা-যাওয়ার প্রথা ভেঙে গত বৃহস্পতিবার তিনি এলেন শত শত মানুষের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়ে। এখন প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাড়িটিতে ভিড় থাকে। বাড়িটি এখন ‘নতুন বরিশাল’ গড়ার সূতিকাগার। এর স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুর ভাগনে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। আগামী ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
গত ১৬ এপ্রিল তাঁর মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর গোটা বরিশালের রাজনীতির দৃশ্যপট বদলে গেছে। একদিকে আলোকিত হয়েছে খোকন সেরনিয়াবাতের বাসভবন, অপরদিকে কালীবাড়ি সড়কে তাঁর পৈতৃক বাসভবন যেন অন্ধকারাচ্ছন্ন। পৈতৃক এই বাড়িতে বসেই আশির দশক থেকে বরিশাল আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন খোকন সেরনিয়াবাতের বড় ভাই জেলা সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি। পারিবারিক দ্বন্দ্বে কালীবাড়ি সড়কের পৈতৃক বাড়িতে কয়েক যুগ ধরে যান না খোকন সেরনিয়াবাত। হাসানাতের বড় ছেলে সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এই বাসভবন থেকে গোটা নগর নিয়ন্ত্রণ করতেন। মনোনয়ন বঞ্চনার পর ঢাকায় অবস্থান করছেন মেয়র সাদিক ও তাঁর বাবা হাসানাত আবদুল্লাহ। নগরীতে সাদিক সমর্থকরা এখন নীরব। জানা গেছে, ঈদের দিন কালীবাড়ি সড়কের বাসায় অনুসারীদের ফিরনি-মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন ঢাকায় অবস্থানরত মেয়র সাদিক।
এদিকে খোকন সেরনিয়াবাতের বাসভবনে এখন পর্যন্ত যাননি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর, সহসভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুসসহ হাসানাত পরিবারের আস্থাভাজনরা। এ কারণে প্রার্থী হিসেবে খোকন সেরনিয়াবাতকে কতটুকু মেনে নিয়েছেন ভাই হাসানাত আবদুল্লাহ ও ভাতিজা সাদিক আবদুল্লাহ– এ নিয়ে নগরীতে চলছে নানা গুঞ্জন।
খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ‘দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। কে আমার কাছে এলো না, আমাকে সহযোগিতা করল না, সেটা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দেখবেন। বরিশালের জনগণও এসবের মূল্যায়ন করবে।’ দলের মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার খোকন সেরনিয়াবাত বরিশালে ফিরলে দলীয় কার্যালয় চত্বরে তাঁকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর ও জেলা সাধারণ সম্পাদক তালুকদার ইউনুসসহ কয়েকজন নেতা। দু’জনই বক্তব্যে বলেন, ঈদের পর মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের যৌথ বর্ধিত সভা করে বিসিসি নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এর আগে গত মঙ্গলবার মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করেন ঢাকায় অবস্থানরত মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি চাচা খোকন সেরনিয়াবাতকে সমর্থন জানিয়ে নেতাকর্মীর উদ্দেশে একই কথা বলেন।
সক্রিয় সাদিকবিরোধীরা
মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার আগেই খোকন সেরনিয়াবাতকে নিয়ে তৎপরতা শুরু করেন সাদিকবিরোধী ১০ সিটি কাউন্সিলর ও প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক অনুসারী কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। সাদিকের তোপের মুখে নগর রাজনীতিতে গত পাঁচ বছর নিষ্ক্রিয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও এখন খোকন সেরনিয়াবাতকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। খোকন সেরনিয়াবাতের সমর্থনে রোববার কর্মিসভা করেছে মহানগর শ্রমিক লীগ। এতে সভাপতিত্ব করেন সাদিকের বিরোধিতা করে নিষ্ক্রিয় থাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন। অপরদিকে সাদিক অনুসারী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক পরিমল দাস ওই সভায় যাননি। এর আগে শুক্রবার রাতে সভা করে মহানগর যুবলীগ। সাদিকবিরোধী হিসেবে পরিচিত মহানগরের আহ্বায়ক নিজামুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন ও শাহিন সিকদার এ সভার নেতৃত্ব দেন।
মহানগর ও সদরের এমপি হয়েও কোণঠাসা হয়ে থাকা পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম অগ্রভাগে থেকে খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচন দেখভাল করছেন। শুক্রবার তাঁকে নিয়ে নগরের কসাই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। গত পাঁচ বছরে বরিশাল নগরে কোনো উন্নয়ন হয়নি। খোকন সেরনিয়াবাত বৃহস্পতিবার সংবর্ধনার বক্তৃতায় বলেন, আমার প্রতিশ্রুতি একটাই তা হচ্ছে– ‘নতুন বরিশাল’।