আমতলী হাসপাতালে পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় বিপাকে রোগীরা
প্রকাশ: ৩ এপ্রিল, ২০২২, ৭:৪৩ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
মহিউদ্দিন লিমন আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ
বরগুনার আমতলী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের চতুর্থ তলার পানি সরবরাহ লাইনে ক্রুটির কারনে গত ৪ দিন ধরে পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা পরেছে মহাবিপাকে।
হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের পানি সরবরাহের পানির মূল পাম্পটি গত ১ বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। এতদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল মুনয়েম সাদ নিজস্ব অর্থায়নে মসজিদের গভীর নলকূপের সাথে একটি মটার বসিয়ে পানি সরবরাহ চালু রাখলেও ২৯ মার্চ মঙ্গলবার সকালে আকস্মিকভাবে নতুন ভবনের রোগী ভর্তি ওয়ার্ডের পানির পাইপে সমস্যা দেখা দেয়। এরপর থেকে আজ (রবিবার) পর্যন্ত ৪দিন ধরে ওই ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তাৎক্ষনিক উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রোগীদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে পুরাতন ভবনের দোতলার ২টি ওয়ার্ডে এনে রাখেন। ওই দুটি ভবনের ভর্তি রোগীদের পুরাতন হাসপাতাল ভবনের ওয়ার্ডে রাখায় জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অনেক রোগীকে এখন মেঝেতে অবস্থান করতে হচ্ছে।
তাছাড়া পুরাতন ভবনে বাথরুম কম থাকায় এখন রোগীরা ঠিকমত গোসলসহ শৌচাগার ও ঠিকমত সারতে পারছে না।
আমতলী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপতালের পানি সরবরাহের প্রধান পাম্পটি ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের ২ তারিখ বিকল হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ দিন ধরে হাসপাতালে পানি সরবরাহ বন্ধ থাকার পর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মুনয়েম সাদ নিজ উদ্যোগে ১২ এপ্রিল হাসপাতালের মসজিদের গভীর নলকুপের সাথে একটি বিকল্প সংযোগ দিয়ে স্বল্প আকারে পানি সরবরাহ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। বর্তমানে হাসপাতালটিতে প্রায় শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। কিন্তু যে সামান্য পানি সরবরাহ হচ্ছে তা দিয়ে রোগীদের গোসল এবং টয়লেট ব্যহারের পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। অনেক সময় রোগী এবং রোগীদের স্বজন হাসপাতালের বাহির থেকে বালতি ভরে পানি এসে গোসলসহ টয়লেটের কাজে ব্যবহার করছেন।
অপরদিকে হাসপাতালের আবাসিক ভবনে চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীসহ বসবাসরত চাকুরিজীবিরা পরেছে মহাবিপদে। এখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য কর্মকর্তাতাদের জন্য রয়েছে ৪টি আবাসিক ভবন। এসকল ভবনে বসবাসরত চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মচারীরা পানির অভাবে তারা ঠিকমত গোসলসহ সাংসারিক কাজকর্ম করতে পারছে না। বিকল্পভাবে যে সামান্য পানি সরবরাহ করা হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
হাসপাতালে ভর্তি রোগী রিনা বেগম, রেবা ও মোর্শেদা বেগম বলেন, পানির অভাবে ঠিকমত গোসল এবং কাপর চোপর ধৌত করতে পারছি না।
হাসপাতালে ভর্তি কুকুয়া গ্রামের অপর রোগী ফাতেমা বেগম, আবদুলালাহ বলেন, পানি সমস্যায় ঠিকমত গোসল এবং বাথরুম ব্যবহার করতে পারছি না।
রোগীর স্বজন মাহামুদুল হাসান বলেন, বাইরে থেকে পানি আইনা সব কাজ করতে অয়। ডায়রিয়ার সমস্যা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগী ছাহেরা বেগমের মা জয়নব বেগম বলেন, ওবাবা হাসপাতালে ঠিকমত পানি পাইনা। দেহেনতো এহন কি সমস্যায় আছি।
আজ (রবিবার) দুপুরে সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, পানির অভাবে রোগী এবং তাদের সাথে আসা স্বজনরা ঠিকমত গোসল এবং টয়লেট ব্যবহার করতে পারছে না। টয়লেটে পানি কম ব্যবহার করায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ব্যাপক হারে। বর্তমানে ডায়রিয়ার কারনে প্রতিদিন শতশত শিশু, নারী, পুরুষ হাসপাতালে আসছেন চিকিৎসা নিতে। পর্যাপ্ত পানির অভাবে তারা ঠিকমত টয়লেট ব্যবহার করতে পারছেন না বলেও অভিযোগ করেন।
হাসপাতালের আবাসিক ভবনে বসবাসরত নার্স সালমা, মোর্শেদা ও আখি বলেন, হাসপাতালের পানি তোলার পাম্প মেশিনটি নষ্ট থাকায় এখন আমরা নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পাই না। বিকল্প ভাবে যে পানি সরবরাহ করা হয় তা দিয়ে আমাদের সাংসারিক কাজের জন্য রান্না বান্না এবং ধোয়া মোছাসহ বাসা ঠিক ভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা যায় না। বর্তমানে প্রচন্ড গরমে পানির অভাবে খুবই কষ্টে আছি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পটুয়াখালীর উপ-সহকারী প্রকৌশলী দেবব্রত হালদার বলেন, আমতলী উপজেলায় পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় পুরাতন পাম্পে পানি উঠছে না। তাই আমতলী হাসপাতালের পানি সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নতুন পাম্প মেশিন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আবদুল মুনয়েম সাদ বলেন, হাসপাতালে ১বছর ধরে পানি তোলার পাম্পটি নষ্ট হওয়ায় পানি সমস্যা প্রকট আকার ধারন করছে। বিষয়টি একাধিকবার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বর্তমানে বিকল্প পদ্ধতিতে আমার নিজ উদ্যোগে হাসপাতালের গভীর নলকুপের সাথে সংযোগ দিয়ে সামন্য পানি সরবরাহ চালু রেখেছি। তাও আবার ৪দিন আগে নতুন ভবনের ওয়ার্ডের পানি সরবরাহের পাইপে সমস্যার কারনে সম্পূর্ন বন্ধ হয়ে যায়। ওই ওয়ার্ডের রোগীদের অসুধিার কথা বিবেচনা করে পুরাতন ভবনে স্থান্তান্তর করা হয়েছে। নতুন পাম্প বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। তবে এখনো সমস্যা সমাধানে আরো ৮ থেকে ১০ দিন অপেক্ষা করতে হবে।