আমতলীতে অনলাইন ভিডিও গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ছে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা!
প্রকাশ: ২ জুন, ২০২১, ৯:৩৮ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
মহিউদ্দিন লিমন ,আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
মরনঘাতি করোনা ভাইরাসের কারনে দীর্ঘদিন ধরে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকা এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাশ করার প্রয়োজনে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষৎতের কথা চিন্তা করে তাদের এন্ড্রোয়েট মোবাইল ফোন কিনে দিচ্ছেন। কিন্তু বরগুনার আমতলী উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাশের চেয়ে বেশী সময় দিচ্ছেন অনলাইন ভিডিও গেমসে। ফলে বেশীর ভাগ সময় তারা ওই গেমস খেলে সময় কাটাচ্ছে। এতে দিন দিন অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা অনলাইন ভিডিও গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকদের অনলাইনে ক্লাশ করার কথা বলে সকালে বাসা থেকে বের হয়ে বন্ধুদের নিয়ে দল বেঁধে, পৌরশহরসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের হাট- বাজারে বসে অনলাইন ভিডিও গেমস খেলে সময় কাটাচ্ছে। প্রতিদিন এমন দৃশ্য চোঁখে পড়েছে। বেশীরভাগ শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ফ্রি-ফায়ার ও পাপজি গেমস খেলতে খেলতে তার অনুরাগী হয়ে গেছে। অনেক শিক্ষার্থীরা আবার তাদের বন্ধুদের সাথে ওই গেমস খেলা দেখাদেখি করতে গিয়ে তারাও আসক্ত হয়ে পড়ছে। বাসায় পড়াশোনার তেমন চাপ নেই। নেই পাঠ্যবইয়ের সাথে কোন সম্পর্ক। মোবাইল নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ৫ থেকে ৭ জন একত্রিত হয়ে বসে গেমস খেলায় মেতে থাকে।
অনলাইনে ফ্রি-ফায়ার ভিডিও গেমস খেলায় আসক্ত একাধিক স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গেমস খেলি। প্রাইভেট পড়া বা অনলাইনে ক্লাশ করার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে কয়েক বন্ধু একত্রিত হয়ে টিফিন ও হাত খরচের টাকা থেকে কিছু টাকা রেখে সেই টাকা দিয়ে মোবাইল ফোনে এমবি কিনে ফ্রি- ফায়ার এবং পাপজি অনলাইন ভিডিও গেমস খেলি। এখন এমনভাবে ওই ভিডিও গেমস খেলার নেশা হয়ে গেছে তাতে নেট সমস্যার কারনে খেলতে না পারলে মুঠোফোন ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে করে। অনেকে আবার এই গেমস দুটি খেলতে গিয়ে অনেক সময় নাওয়া খাওয়ার কথাও ভূলে যায়। আবার অনেকে এমনভাবে এ গেমসে আসক্ত হয়েছে তাতে তাদের পক্ষে এ গেমস খেলা ছেড়ে দেওয়া সম্ভব না বলে জানায়।
অপরদিকে উপজেলা ও পৌর শহরের কোথাও শিশু- কিশোরদের জন্য বিনোদনের যথেষ্ট জায়গা না থাকায় বেশির ভাগ সময় তাদের বাসায় বসে সময় পার করতে হচ্ছে। ফলে তারা সারাক্ষণ টিভি, মোবাইল এবং অনেকে ল্যাপটপ নিয়ে সময় পার করছে। পরিচিত হচ্ছে তারা নতুন নতুন গেমসের সাথে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক বলেন, মহামারী করোনায় দীর্ঘদিন পর্যন্ত দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় ও অনলাইনে কøাশ করার জন্য এবং সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষৎতের কথা ভেবে তাদের এন্ড্রোয়েট ফোন কিনে দিয়েছেন। ওই ফোন দিয়ে তারা ক্লাশ না করে অনলাইনে ফ্রি-ফায়ার ও পাপজি ভিডিও গেমস খেলে সময় কাটাচ্ছেন। তারা এখন মোবাইলে এতটা আসক্ত হয়ে পড়ছে অনেক সময় মিথ্যা অযুহাতে টাকা নিয়ে এমবি কিনে গেমস খেলে। তারা আরো বলেন, পড়াশোনা তো নাই বললেই চলে। তাদের সন্তানরা এখন একগুঁয়ে হয়ে গেছে। ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া তো করেই না বরং অরুচিতে ভূগছে। এভাবে আরো কিছু দিন চলতে থাকলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আমতলী সরকারী একে হাই স্কুলের শিক্ষক মোঃ সেকান্দার আলী (বিএসসি) বলেন, করোনায় দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ভিডিও গেমসে আসক্ত হয়ে পরেছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ওয়েফাই কানেকশন থাকায় প্রতিদিন বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এখানে এসে বারান্দায় বসে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনলাইনে গেমস খেলে। এতে অনেক শিক্ষার্থী মানসিক ভারসাম্যহীনতার মধ্যে পড়ছে।
আমতলী সরকারী কলেজের কম্পিউটার বিভাগের প্রধান, প্রভাষক মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, মহামারী করোনায় দীর্ঘ মেয়াদী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সুযোগে অনলাইন ক্লাশ করার জন্য অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এন্ড্রোয়েট ফোন কিনে দিয়েছেন। কিন্তু তারা লেখাপড়া না করে সারাদিন মোবাইল ফোনে অনলাইনে ভিডিও গেমস খেলে সময় কাটাচ্ছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা সারাক্ষণ ফ্রি- ফায়ার ও পাপজি গেমস খেলায় ব্যস্ত থাকছে। অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের দিকে খেয়াল রাখা যাতে তারা আর এ গেমস খেলতে না পারে। আর সরকারের উচিৎ অনলাইন থেকে ফ্রি-ফায়ার ও পাপজি অনলাইন ভিডিও গেমস খেলাগুলি বন্ধ করে দেওয়া।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবদুল মুনয়েম সাদ বলেন, বেশি সময় মোবাইল বা ল্যাপটপ নিয়ে যারা পরে থাকবে তাদের মানুষিক ভারসাম্য হয়ে পড়া ও মানুষিক বিকাশে বাঁধাগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তিদের বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে খাবারে রুচিহীনতা এবং দৃষ্টি শক্তির সমস্যাও হতে পারে।