কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে ৬টি ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ইট পোড়ানো লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিসের সার্টিফিকেট এমন কি ভ্যাট-আয়কর প্রদানের কাগজপত্র ছাড়াই ইটভাটার মালিকরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আবাদি জমি ও জনবসতি এলাকাসহ স্কুল-কলেজের পাশে ২৪ ঘণ্টা ইট পোড়ানো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইটভাটার কারণে ক্ষতিতে পড়েছেন শতশত একর আমন ও বোরো আবাদকারী কৃষকরা। এছাড়া রবিশস্য, সুপারি, নারিকেল, আম-জামসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে ইটভাটার পার্শ্ববর্তী এলাকার শতশত পরিবার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের আজোয়াটারী গ্রামের বিস্তৃর্ণ কৃষি জমিতে মেসার্স ডব্লিউএএইস ব্রিকস্ ফিল্ড, এবি ব্রিকস্, মেসার্স এমএসএইচ ব্রিকস্, বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবশ এলাকায় সাইফুর রহমান সরকারি কলেজের পাশে মেসার্স এএমবি, ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের খামারের বাজার এলাকায় মেসার্স কেএমবি এবং শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের জকুরটল এলাকায় মেসার্স জেএমএস নামে ছয়টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এ সব ইটভাটার একটিরও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নাই।
পরিবেশ অধিদপ্তরে নামমাত্র আবেদন করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। ইটভাটার আয়তন দুই একরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার নিয়ম থাকলেও বিস্তৃত এলাকা দখলে নিয়েছে তারা। ভরাট করেছে পানি নিষ্কাষণের পথ। ইটভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় সরকারি নিয়মনীতি মানছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় কৃষক রফিকুল ইসলাম (৩৮), হজরত আলী (৬২) ও খলিল উদ্দিন (৪৫) জানান, ভাটার মালিকরা জমি ভাড়া নিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ করছে। এসব ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় গত ৫ বছর ধরে বোরো এবং আমন আবাদের ফলন বিঘা প্রতি ৬/৭ মন কমে এসেছে। ভাটার কালো ধোঁয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে সুপারি বাগানের। ধোঁয়ার বিষক্রিয়ায় গত কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় সুপারির ফলন কমে গেছে। তাছাড়া আম, কাঁঠাল, নারিকেলসহ অন্যান্য ফলের ফলনও কমে গেছে। ভাটার মালিকরা ইট পরিবহনের জন্য উঁচু রাস্তা তৈরি ও সেতুর মুখ বন্ধ করায় বর্ষা মৌসুমে প্রতিবছর এই এলাকার শতশত বিঘা আমন খেত পানিতে তলিয়ে নষ্ট হচ্ছে।
মেসার্স ডব্লিউ এএইচ ব্রিকস্ ফিল্ডের মালিক মোশারফ হোসেন জানান, শুধু আমার ভাটার না জেলার কোনো ইট ভাটারই পরিবেশ অধিদপ্তরসহ আনুসাঙ্গিক কাগজপত্র নাই। মালিক সমিতির লোকজনসহ ডিসি অফিসে কথা বলেছে। ভাটা চালনোর মৌখিক অনুমতি দেওয়ায় ইট পোড়ানোর কাজ চলছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, ৮ ডিসেম্বর ৩টি ভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। ওই ৩টি ভাটার কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তাদেরকে ২২ ডিসেম্বর তারিখ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এরপরও কাগজ দেখাতে না পারলে ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাকি ৩টি ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।