অযত্নে-অবহেলায় নিশ্চিহ্ন হচ্ছে লাকুটিয়া জমিদারবাড়ি
প্রকাশ: ১২ আগস্ট, ২০২২, ৭:৩১ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
॥ শুভব্রত দত্ত ॥
জেলার সদর উপজেলার কাশিপুরে অযত্নে অবহেলায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী জানাগেছে, জমিদার বাড়িটি আনুমানিক ১৬০০ কিংবা ১৭০০ সালে জমিদার রাজ চন্দ্র রায় নির্মাণ করেন। রাজ চন্দ্রের পুত্র পিয়ারী লাল রায় একজন লব্ধ প্রতিষ্ঠিত ব্যারিস্টার ও সমাজসেবী ছিলেন। তাঁর দুই পুত্র বিখ্যাত বৈমানিক ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী ও মুষ্টিযোদ্ধা (বক্সার) শ্রী পরেশ লাল রায়। তবে এ জমিদার বংশের মূল প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রূপ চন্দ্র রায়। জমিদার বংশের লোকেরা অনেক জনহিতকর কাজ করে গেছেন। তারা তখনকার সময়ে উল্লেখযোগ্য “রাজ চন্দ্র কলেজ” ও “পুষ্প রানী উচ্চমাধ্যমিক এবং প্রাইমারী বিদ্যালয়” নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে এখানে তাদের কোনো উত্তরসূরি নেই। এখানে শেষ জমিদার ছিলেন দেবেন্দ্র রায় চৌধুরী। পরে তিনি ভারতের কলকাতায় স্ব-পরিবারে চলে যান এবং সেখানেই মৃত্যুবরন করেন। তবে তিনি তার মেয়ে মন্দিরা রায় চৌধুরী (মুখার্জী) কে বরিশালের কাশিপুর ফিসারী রোড মুখার্জী বাড়িতে বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী মুকুল মুখার্জীর সঙ্গে বিয়ে দেন। তিনি এখনো এখানে বসবাস করেন। বসবাসের জন্য দ্বিতল একটি প্রাসাদ রয়েছে।
এছাড়াও জমিদার বাড়িটিতে একটি মঠ, দিঘী ও মাঠ রয়েছে। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এ জমিদার বাড়িটির অনেকাংশ প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ভবনগুলো শ্যাওলা পরে আচ্ছাদিত হয়ে আছে। বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় দিন-দিন তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। অথচ এ বাড়িতে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ট্রেনিং ক্যাম্প ছিলো। বহু বীর মুক্তিযোদ্ধাকে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল। বাড়িটির দরজা জানালাগুলো ভেঙে গেলেও সুপ্রাচীন এ দোতলা বাড়িটি কালের স্বাক্ষী হিসেবে এখনো মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।
স্থানীয় সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে জমিদার বাড়িটি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়নে রয়েছে। এখানে বিভিন্ন সময় দেশী-বিদেশী পর্যটকগণ পরিদর্শন করতে আসেন। এছাড়াও বাড়িটি “বরিশাল জেলার প্রতœতাত্ত্বিক স্থাপনা” বিষয় শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে লাকুটিয়া জমিদার বাড়িটির উত্তরাধিকারী মন্দিরা রায় চৌধুরী (মুখার্জী)-এর স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী মুকুল মুখার্জী বলেন, স্থানীয় একটি চক্র মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি এবং এর আশপাশের জমি দীর্ঘদিন ধরে দখল করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। বর্তমানে বাড়িটি রক্ষার্থে মামলা পরিচালনা করছি।
এ বিষয়ে জমিদার বাড়িটির উত্তরাধিকারী মন্দিরা রায় চৌধুরী (মুখার্জী) বলেন, এ বাড়িটি সৌন্দর্য দেখতে এখনো বহু দেশি-বিদেশী পর্যটক আসেন। অনন্য এ স্থাপনাটি রক্ষার্থে সরকারের পক্ষ থেকে এগিয়ে আসা উচিৎ।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা প্রসাশক জসিম উদ্দিন হায়দার বাসস’কে বলেন, ব্যক্তিগত ভাবে বিগত রোজার ঈদে আমি ও আমার পরিবার জমিদার বাড়িটি দেখতে গিয়েছিলাম। এ জমিদার বাড়িটি বৃহৎত্তম বরিশালের প্রাচীন জমিদার বাড়িগুলোর মধ্যে অন্যতম বাড়ি। তাছাড়া এটি একটি অনন্য স্থাপনা।
তিনি আরো বলেন , জমিদার বাড়িটি সংস্কারের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। যা আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শুরু করা হবে।