মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাবনায় শুরু হয়েছে ‘অন্তরাত্মা’ ছবির শুটিং। ছবিটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী শাকিব খান। আজ তাঁর ৪২তম জন্মদিন। কাজের মধ্যেই কাটবে তাঁর এবারের জন্মদিন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় জন্মদিনসহ নানা প্রসঙ্গে তিনি কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা। কীভাবে কাটাবেন দিনটা?
কাজ করে যাচ্ছি। কাজ করে যেতে চাই। শুটিং স্পটে যেহেতু আছি, এখানেই কাটবে জন্মদিন। তা ছাড়া আমি কাজের মধ্যে থাকতেই ভালোবাসি।
এখন পর্যন্ত আপনার জীবনে জন্মদিনে পাওয়া সেরা উপহার কী?
বস্তুগত কিছু নয়, ভক্তদের ভালোবাসাই জন্মদিনের সেরা প্রাপ্তি। তাঁদের ভালোবাসা পেলেই বেশি খুশি হই। আমাকে সামনা–সামনি দেখেননি, আদৌ দেখা হবে কি না জানেন না, তারপরও অন্ধের মতো ভালোবাসা দিয়ে যান। জন্মদিন উদ্যাপন করেন। এমন সব পাগলামি করেন, মাঝে মাঝে এসব দেখে একা একাই কেঁদে ফেলি। তাঁদের এই ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। আমার ব্যক্তিগত জীবনেও এত বেশি ঝড় গেছে, এত দিনে হয়তো ভেঙেচুরে যেতাম। কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা আমাকে সাহস জোগায়, অনুপ্রাণিত করে। মনে হয়, আমাকে সুস্থভাবে বাঁচতে হবে। কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা আমার ব্যক্তিগত অনেক সমস্যার মাঝেও শক্তি দিয়েছে। নব উদ্যোমে কাজ করার প্রেরণা জুগিয়েছে।
জন্মদিনে নতুন কোনো ইচ্ছা বা পরিকল্পনা করেছেন?
করোনা গেলে পৃথিবী নতুন সমীকরণে চলবে। সে লক্ষ্যে আমাদেরও ভালো কাজ করতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিবেচনায় ভালো কাজ করতে হবে। আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। আগে উদ্দেশ্যহীনভাবে বেশ কিছু কাজ করেছিলাম, এখন আর না। করোনায় যতটা পিছিয়েছি, দ্বিগুণ গতিতে আগাতে হলে ভালো মানের কাজ করতে হবে।
উদ্দেশ্যহীন যেসব কাজের কথা বলছেন, এসব নিয়ে ভাবলে কোনো আফসোস হয়?
একদমই না। আমি অনেক কাজ করেছি, অনেককে সহযোগিতা করতে। অনেকের অনুরোধ রাখতে। ওই সময়টা এখন আর নেই। করোনার পর সব সেক্টরে অন্য রকম গতি আসবে। একটা অন্য রকম প্রতিযোগিতা হবে। সবাইকে সবার সঙ্গে মিলেমিশে ভালো কাজ করতে হবে।
‘অন্তরাত্মা’ ছবির শুটিং কবে শেষ হবে? কেমন হচ্ছে কাজ?
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই শেষ হবে। খুব গোছানো কাজ হচ্ছে। কাজ করে আমিও আনন্দ পাচ্ছি। এই ছবির শুটিং শেষে আমাকে ব্যস্ত হতে হবে ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’ ছবির কাজে। তপু খানের সেই ছবিটি আবার অন্য রকম এক দেশপ্রেমের গল্পের ছবি।
ঢালিউডে লম্বা সময় কাজ করছেন। টালিউডেও কাজ করেছেন। যে কয়টা ছবিতে কাজ করলেন, সব কটি ছিল আলোচিত। জানতে ইচ্ছে করে, বলিউডে আপনাকে কবে দেখা যাবে?
আমার জীবনে যখন কিছু হয়, ভালোভাবেই হয়। এখন পর্যন্ত যে অঙ্গনে পা রেখেছি, সফল হয়েছি। ঢালিউডে হয়েছি, টালিউডেও সাফল্য পেয়েছি। অন্য কোনো ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করলেও সফল হব। এখন মহামারি চলছে। এটা কেটে গেলে হয়তো আমার ভক্তদের সেই স্বপ্নটাও পূরণ হবে।
যখন শুরু করেছিলেন, তখন দেশ ও বিশ্বের ছবির বাজার ব্যবস্থাপনা ছিল এক রকম। এখন চিত্র পাল্টেছে। পুরো পৃথিবীর বাজার উন্মুক্ত। এই সময়ে কাজ করাটা কতটা চ্যালেঞ্জ মনে করেন?
যে বা যিনি পারেন, সবকিছুর মধ্যেই পারেন। সমস্ত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে তিনি এগিয়ে যান। আর যে বা যারা পারে না, তারা নানা অজুহাত দেখায়। কেউ তো আর কাউকে কোনো কিছু মুখে তুলে খাইয়ে দেবে না। রাস্তাটা নিজেকেই তৈরি করতে হয়। যার যার কাজ নিজেদেরই করতে হবে। সরকারও এসে দিয়ে যাবে না। অমুক করে দেবে, তমুক করে দেবে, মুখে তুলে খাইয়ে দেবে—এটা মোটেও ভাবা উচিত না। মন দিয়ে কাজ করে যেতে হবে। একটা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে হলে সব সময় বাড়তি একটা যত্ন থাকতে হয়। চোখ–কান খোলা রাখতে হয়। সময়ের সঙ্গে নিজেকে আপ–টু–ডেট করতে হয়। কমবেশি বাজার আগেও খোলা ছিল। এসব কোনো বিষয় না। আসলে বাজার ওপেন ক্লোজ ম্যাটারও করে না। কোরিয়ান ছবি ‘প্যারাসাইট’ অস্কার পেয়েছে। তারা তো আর চলচ্চিত্রবিশ্বের প্রথম সারির না। অনেকে তাদের চেয়েও অনেক এগিয়ে আছে। আমি মনে করি, ভালো কাজ করেছে বলেই তারা অস্কার জিতে নিয়েছে। মন দিয়ে ভালো কাজ করে যাও, গন্তব্যে ঠিকই পৌঁছে যাবে—এই মন্ত্রে আমি চলেছি, চলছি।
বাবা-মায়ের মাসুদ রানা এখন ভক্তদের শাকিব খান। এই যাত্রাপথটা কেমন ছিল?
মোটেও মসৃণ ছিল না। হিমালয়ের চূড়ায় যে পৌঁছেছে, সে কি মসৃণ রাস্তা দিয়ে পৌঁছেছে? অনেক চড়াই–উতরাই পার করে তাকে যেতে হয়। যে ভাববে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাবে, কিন্তু পথটা মসৃণ হবে—এটা বোকার স্বর্গে বাস করার মতো। শুরু থেকেই আমি কাজ করেছি দেশের মানুষের জন্য। কোনো বিশেষ গোষ্ঠী, দলের জন্য কাজ করিনি। মানুষ আমাকে ভালোবাসা দিয়েছে। সেই ভালোবাসায় অমসৃণ যাত্রাপথটা মসৃণ করেছি।
চলচ্চিত্রে অঙ্গনে পলিটিকসের শিকার হয়েছেন?
আমি পলিটিকস বুঝি না। তাদের জন্য আমার দুঃখ হয়, যারা নিজের সময় নষ্ট করে ক্ষতি করার জন্য অন্যের পেছনে লেগে থাকে। এই সময়টা তারা নিজেদের কাজে ব্যয় করলেও সফলতা পেত। যারা অন্যের পেছনে লেগে থাকে, তাদের লক্ষ্য ঠিক নেই। ভালো জায়গায় পৌঁছানোর তাড়নাও নেই।
সবাই বলে, ঢালিউডে আপনি একটা রাজত্ব কায়েম করেছেন। এই রাজত্ব ধরে রাখতে আপনি পলিটিকস করেন না?
আমাকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা ভালো করেই জানেন, আমি কোনো ট্রিকস পলিটিকস করি না। এসব পলিটিকসে আমি বিশ্বাসীও নই। আমি পেশার সঙ্গে পলিটিকস করি না, মূলধারার রাজনীতিও করি না। আমি শুধু একটা জিনিসই জানি, মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। ভালোভাবে চলো, লক্ষ্যে অটুট থাকো। দু-চারজনের সঙ্গে যে খারাপ আচরণ করি না, তা কিন্তু নয়। তাদের সঙ্গেই খারাপ আচরণ করি, যাদের ভাই-বন্ধু বলার পরও সম্মানটা রাখতে জানে না, অসততা করে। আত্মসম্মান বাঁচাতে তখন প্রতিবাদ করতে হয়। নিজের কর্মক্ষেত্রটা অস্থিতিশীল হয়ে গেলেও কঠোর হতে হয়। আমি সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে কাজ করতে চাই। আমি নিজের কাজটা করতে ভালোবাসি। কাজ শেষে বাসায় চলে যাই। খাই-দাই, ঘুমাই। কাছের যাঁরা মানুষ আছেন, সময় পেলে তাঁদের সঙ্গে আড্ডা দিই, গল্প করি। মাঝেমধ্যে পার্টি–টার্টি করি। এটা হলফ করে বলতে পারি, আমি কোনো দিনই কারও জন্য ক্ষতিকর ছিলাম না, ব্যক্তিগত জীবনেও না। যে আমার সঙ্গে থাকতে চায়নি, আমি বলেছি, ঠিক আছে। যেখানে ভালো থাকতে চাও, থাকো।
আপনাকে নিয়ে সমালোচনা হয়, নিন্দাও হয়। এসব কীভাবে সামাল দেন?
জনপ্রিয় মানুষদের পেছনে সব সময় একটা কালো ছায়া ধাওয়া করে বেড়ায়, এটাই স্বাভাবিক। এটাই হওয়ার। বাঙালিকে নিয়ে একটা কথা চালু আছে, একজন উঠতে গেলে কয়েকজন টেনে তাঁকে নামাতে চায়। এসব না ভেবে ভালোবাসার শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত। নিন্দা করা মানুষের দিকে তাকানোর সময় নাই। আমি ভালোবাসা নিয়ে ভাবি।
আপনাকে নিয়ে এমনও শোনা যায়, যাঁর সঙ্গে টানা কাজ করেন, তাঁর সঙ্গেই আপনার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এটা কি সচেতনভাবেই করেন, নাকি হয়ে যায়?
প্রেমটা তো বলে–কয়ে হয় না, এটা সম্পূর্ণ মনের ব্যাপার। মানুষ যে কখন প্রেমে পড়ে, এটা সে–ও জানে না। কখন কার সঙ্গে কী হয়, তা তো আমিও জানি না। প্রেমটা তো আসলে মনের বিষয়। মনকে তো আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। যত দিন বাঁচব, প্রেম তো আসবেই। ফাইনালি সেটেল্ড হতে চাই। বিশেষ কাউকে নিয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে চাই।
কতগুলো প্রেম করেছেন জীবনে?
(হাসি) প্রেমে আমি পড়েছি, আমার প্রেমেও পড়েছে অনেকে। অনেক সময় না চাইতেও প্রেম হয়ে গেছে। সংখ্যা তো গুনে বলে যাবে না, বলতে চাইও না। সংখ্যা গুনে কি আর প্রেম হয়? এখন আসলে স্থির হতে চাই। বাসায় তো আমার বাবা-মা ছাড়া কেউ থাকে না। তারাও বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে।
পাত্রী হিসেবে কেমন মেয়ে চান?
ভালো একটা মেয়ে। এখন কি আর ডিমান্ড করার সময় আছে। (হাসি) এই কথা প্রকাশিত হলে তো পাত্রীর লাইন পড়ে যাবে। (হাসি) একটা ভালো মেয়ে বিয়ে করতে রাজি হলেই আমি অনেক হ্যাপি।
ভালো মেয়ে বলতে কেমন মেয়ে?
লক্ষ্মী একটা মেয়ে। সংসার ও আমাকে সুন্দর করে আগলে রাখবে। বাকি জীবনটা সুন্দর ও সুখে কাটাতে চাই।
‘অন্তরাত্মা’ ছবির ভারতীয় নায়িকা দর্শনা বণিক ও আপনার অসাধারণ একটি প্রেমের সম্পর্ক দেখানো হবে? পর্দার দর্শনার মতো মেয়ে হলে চলবে?
একদমই না। সিনেমার মতো বা গল্প উপন্যাসের নায়িকা নয়। বাস্তবের লক্ষ্মী একটা মেয়ে চাই। পর্দায় অনেক কিছুই হয়, বাস্তবে তা সম্ভব নয়। জীবনের বাকি পথ চলাটা যেন মসৃণ হয়, সেটাই চাইছি।
সেটা কবে আসবে? শাকিব খান কবে সংসারী হবেন?
আমারও খুব ইচ্ছে করে। এখন তো খুব একা লাগে। মানুষ কখনোই একা থাকতে পারে না। এই করোনায় তা আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করেছি। কথা বলার জন্য হলেও কেউ একজন দরকার।
সেটা কবে আসবে? শাকিব খান কবে সংসারী হবেন?
আমারও খুব ইচ্ছে করে। এখন তো খুব একা লাগে। মানুষ কখনোই একা থাকতে পারে না। এই করোনায় তা আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করেছি। কথা বলার জন্য হলেও কেউ একজন দরকার।
কী নেই আপনার, যার জন্য আপনার প্রাণ কাঁদে?
সেটা তো বলা যাবে না। (হাসি) এটা খুবই ব্যক্তিগত। ব্যক্তিগত বিষয়টা গোপনই থাক।