সাব্বির আলম বাবুঃ
আমরা যখন যেই বয়সে খেলেছি পুতুল খেলা
তোমরা এখন সেই বয়সে
লেখা পড়া কর মেলা,
আকাশের তরে আমরা যখন উড়াইয়াছি শুধু ঘুড়ি
তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি…
কবি সুফিয়া কামালের এই কবিতায় বাংলার ভবিষ্যত প্রজন্ম তথা শিশুদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যে বয়সে শিশুরা নিজের মনে হেসে-খেলে বেড়াবে যাতে তার মানষিক বিকাশ যথার্থ ভাবে বৃদ্ধি পাবে সে বয়সে দুরন্ত শৈশব কেড়ে নিচ্ছে কিন্টারগার্ডেন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, কোচিং সেন্টার, একাডেমী সহ নামী-দামী সব শিক্ষা প্রতিস্ঠান। গোল্লাছুট, খোপাতি বা বনভোজন, সাতচাড়া, দাবা, লুডু, হা-ডু-ডু, দাড়িয়াবান্দা, কুতকুত, কাবাডি, মোরগলড়াই ইত্যাদি আবহমান কালের গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় শিশুতোষ খেলাগুলো বিলুপ্ত হয়ে ইতিহাসের বইয়ের পাতায় আশ্রয় নিচ্ছে। ইদানিং কালের ধনাঢ্য পরিবারের শিশুদের অভিভাবকদের মাঝে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ভাল রেজাল্টের প্রতিযোগীতা ও শিক্ষকদের অতি পেশাদারিত্ব নিয়ে শিশুদের উপর পড়াশোনার জন্য অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা হয়। অপরদিকে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের শিশুদের অধিক জন সংখ্যার কুফলের কারনে বালির মাঠে, পুকুর-খালের পাড়ে আপন মনে কচি হাতে মাটি-বালি দিয়ে ঘর-বাড়ী-গাড়ী নির্মানের বদলে পিতা-মাতার সাথে অল্প বয়সেই লেখাপড়া ছেড়ে অর্থ যোগানের আশায় কর্ম জীবনে ঢুকে পড়ে। এতে প্রায়ই শিশুদের নানারকম মানষিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়, তারা হীনমন্যতায় ভোগে, শারীরীক ভাবে দুর্বল হয়ে এক সময় মেধা শুন্য হয়ে পড়ে। শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে এভাবে ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকলে মানষিক বিকাশের বদলে মানষিক চাপে বাংলাদশের ভবিষ্যত প্রজন্ম মেধাহীন, দুর্বল, অথর্ব জাতীতে পরিনত হবে। শিশুদের লেখাপড়ার জন্য বইয়ের বোঝা কমানোর পাশাপাশি যাতে পর্যাপ্ত চিত্ত বিনোদনের সুযোগ পায় সে জন্য সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জোড়ালো ভূমিকা রাখা দরকার বলে সমাজের সচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন।