শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



উপকূলীয় এলাকায় দেশের প্রাচীন হোগলা শিল্প অস্তিত্ব সংকটে
প্রকাশ: ১৮ মে, ২০২০, ৩:১৯ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

উপকূলীয় এলাকায় দেশের প্রাচীন হোগলা শিল্প অস্তিত্ব সংকটে

সাব্বির আলম বাবু :
বাংলাদেশের নদী ও সাগরকূলীয় প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিম্নবিত্ত পরিবার বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের প্রায় অধিকাংশ সদস্যই বংশ পরম্পরায় হোগলা বিছানা তৈরীর পেশার সাথে জড়িত। কিন্তু বর্তমানে সমগ্র বিশ্বের মতো এদেশেও করোনা রোগের প্রকোপে দীর্ঘ সময় লকডাউন,মুলধন ও বাজার মূল্য কমে যাওয়া, এনজিওর ঋনের কিস্তি, মহাজনের টাকার চড়া সুদের দৌরাত্য, হোগলা পাতা চাষের জমি কমে যাওয়া ইত্যাদি কারনে এই শিল্প এখন অস্তিত্ব সংকটে। অথচ প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এটি হতে পারে দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক যোগানদাতা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, হোগলা পাতার বৈজ্ঞানিক নাম টাইপা, পরিবার টাইপাসিয়া। এটি গ্রামীন পরিবেশে জন্মানো একটি বিশেষ পাতা সর্বস্ব ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। হোগলা, হোগল, ধাড়িপাতা এসব নামেই পরিচিত এটি। হোগলা ফুলের রেনু থেকে এক ধরনের গুড়া হয় দেখতে অনেকটা হলুদের গুড়ার মতো। এর থেকে মিষ্টি, ফিরনি, পোলাও, হালুয়া, সন্দেশ, পীঠা-পুলি ইত্যাদি তৈরী হয়। যার একশ গ্রাম ওজনে ২৬৬ কিলো ক্যালোরী খাদ্য শক্তি পাওয়া যায়। হোগলা গাছ প্রতি হেক্টর জমিতে ১৮ কেজি নাইট্রোজেন জমা করতে পারে। বড় বেশী অনাদর-অবহেলায় এই উদ্ভিদটি বাংলাদেশে জন্মে। গাছের প্রতি গুছিতে ৮/১২টি পাতা জন্মে। বছর পেরুলে পাতার মধ্যে গোড়া থেকে লম্বা পুষ্প দন্ডের মাধ্যমে ফুল আসে। ফুল থেকে ফল হয়,ফল থেকে বীজ হয়। বীজ গুলো তুলার মতো আশের সাথে লেগে থাকে। হোগলাপাতা গড়ে ২০/২২ ফুট লম্বা হয়। কাঁচা অবস্থায় সবুজ ও পাকলে ধুসর হলুদ রং হয়। হোগলা শিল্পী প্রভাত দাস জানা, সাধারনত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে হোগলা পাতার কাদিডগা লাগানো উপযুক্ত সময়। জমি চাষ দিয়ে তৈরী করে গোবর ও নানা রকম জৈব সার দিয়ে কাদিডগা এক দেড় ফুট ফাকে ফাকে লাইন করে লাগানো হয়।

১৬/২০ দিন পর কাদি ডগায় চারা গজাতে শুরু করে। এই চারা ১০/১২ ইঞ্চি লম্বা হলে নিড়ানী দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে পাতা মোটা ও ২০/২২ফুট লম্বা হয়। পৌষ মাসে পাতা কেটে ভালো করে রোদে শুকিয়ে আটি বাধা হয়। একবার কোন জমিতে হোগলা পাতার চাষ করলে ঐ জমিতে আর নতুন করে পাতা লাগানোর দরকার হয় না। হোগলা গ্রামবাংলার প্রাচীন শিল্প। এই শিল্পের মূল কারিগর নারীরা। গ্রামের নারীরাই এ পেশা টিকিয়ে রেখেছে। পারিবারিক বিভিন্ন কাজে হোগলা ব্যবহৃত হয় যেমন – ঘরের বিছানা, খাদ্যশস্য রোদে শুকাতে দেয়া, জায়নামায, মিলাদ-মাহফিল-কীর্তন-পূজা-পার্বনে অনেক জমায়েত মানুষকে বসতে দেয়ার জন্য এমন কি লাশ বহন- সৎকার ও দুর্ঘটনায় নিহত ব্যাক্তির লাশ পরিবহনে ও হোগলা ব্যবহৃত হয়। হোগলা কারিগর মরন দাস জানান, এক সময় হোগলার তৈরী মাদুর ছিল সৌখিনতার প্রতীক। কিন্তু এখন এই পাতার সরবরাহ কম, আধুনিক প্লাষ্টিক ও অন্যান্য উপাদানে তৈরী পণ্য সামগ্রীর আধিপত্য এবং প্রয়োজনীয় পুজির অভাবে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। শীতের দিনে হিন্দু পরিবার গুলো হোগলার পণ্য তৈরীর কাজে নেমে পরতো সংসারের বাড়তি আয়ের আশায়। গ্রামের কৃষক, দিনমজুর, মুচি অনেকেই এ পেশায় জড়িত। এ সকল কুটির শিল্পীদের অভিযোগ মুজুরীর ন্যায্য মূল্য না পাওয়া ও মুলধন সংকটে তারা উৎসাহ হারাচ্ছেন। হোগলা কারিগর রামদাস জানান, বাজারে সাধারনত ৫ হাত দৈর্ঘ্য ও ৪ হাত প্রস্থ্য হোগলা বিছানা পাওয়া যায়। একেকটির দাম ৫০/৬০ টাকা। আর দড়ি তৈরীর জন্য বড় এক বান্ডেল হোগলা পাতার দাম ৩০০/৪০০ টাকা যা থেকে ৭ হাজার হাতের বেশী দড়ি তৈরী হয় এবং প্রতি হাত দড়ি ১০/১২ টাকা বিক্রি হয়। হোগলা চাষে সুবিধা হলো এর চাষাবাদে খরচ কম, রোগ বালাইও কম। এটি জমিতে জলাবদ্ধতাও সহ্য করতে পারে। উপকূলীয় এলাকার মানুষদের কাছে এই হোগলা দৈনন্দিন কর্মকান্ডের পাশাপাশি একটা বাড়তি আয় রোজগারের মাধ্যম। বেত ও বাঁশের উৎপাদিত পণ্যের চেয়ে দাম তুলনামুলক কম হওয়ায় এটি বেশ সহজলভ্য। পাশাপাশি পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় হোগলার দড়ি দিয়ে তৈরী নানা তৈজসপত্র আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। সুযোগ বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রা আহরনের।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া