আজকের তারিখঃ | বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বরিশালে তালাশ বিডি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন বরিশাল কর অফিসের রতন মোল্লার হাতে আলাদিনের চেরাগ,একই কর্মস্থলে ১০ বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ২৩৭ আসনে বিএনপি প্রার্থীর নাম ঘোষণা নুর, সাকি, মান্নাসহ মিত্রদের জন্য ৬৩ আসন ফাঁকা রেখেছে বিএনপি তিন আসনে লড়বেন বেগম খালেদা জিয়া ১ হাজার ৮৯ ইবতেদায়ি মাদরাসা অনুমোদন পেয়েছে এমপিওভুক্তির জামায়াত মানুষের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না : নুরুল কবির বরিশালের ১৬টি আসনে বিএনপির প্রার্থী যারা বরিশালে সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজি ও অপসাংবাদিকতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ ৩৫ সংগঠন গণপূর্তের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সমবায় বিভাগের সংস্কার জরুরি,ফরিদপুরে সমবায় বিভাগের হয়রানি আর কূটকৌশল ভোটে কোটি টাকা খরচকারীদের চক্র ভাংতে হবে - ঝালকাঠিতে ব্যারিস্টার ফুয়াদ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করতে হবে-হাসনাত আবদুল্লাহ দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা ঝুকিপূর্ণ,আটকে আছে ১৭শ কিলোমিটার সড়ক মেরামত ও উন্নয়ন কাজ বরিশালে পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় অটোচালক নিহত বরিশালে বিএনপি'র লিফলেট বিতরণ অপসোনিন শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ বাকেরগঞ্জের রাঙামাটি নদী থেকে হাত-পা বাঁধা যুবকের লাশ উদ্ধার বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের বরিশাল শাখার উদ্বোধন বরিশালে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির ৯ নেতাকর্মী জেলহাজতে

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা: সম্পাদনা: অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

রিপোর্টারের নাম: বরিশাল খবর
  • সংবাদ প্রকাশের তারিখ : Oct 11, 2025 ইং
  • ৭৮১ বার
ছবির ক্যাপশন:

প্রতিটি ভালো প্রতিবেদনের জন্যই একজন সম্পাদককে প্রয়োজন। সাড়া জাগানো অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে ভালো সম্পাদকের প্রয়োজনীয়তার কথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু কেন? কারণ রিপোর্টাররা নিজেদের প্রতিবেদন নিয়ে এতটাই মেতে থাকেন যে, অনেক কিছুই তাদের চোখ এড়িয়ে যেতে পারে। একজন দক্ষ সম্পাদক নিরপেক্ষ কাজের মাধ্যমে সেই দুর্বলতাগুলো পুষিয়ে দেন। শূণ্যতা পূরণ করে এমন একটি শক্তিশালী প্রতিবেদন তৈরিতে সাহায্য করেন যা একাধারে হয় সহজবোধ্য ও নিখাদ।
ভালো সম্পাদনার ভিত্তি ভালো তথ্য-উপাত্ত। আর ভালো তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, সম্পাদনার কাজে এমন নিবেদিত সম্পাদক পাওয়াটা সবসময় সম্ভব নয়। তাছাড়া প্রতিবেদকদের মধ্যে অনেকেই ছোট পরিসরের কোনো বার্তাকক্ষের হয়ে কাজ করেন। যেখানে সাংবাদিকের সংখ্যা একেবারেই কম। প্রতিবেদকদের পালাক্রমে সহকর্মীদের সাথে মিলে একে অপরের কাজগুলো সম্পাদনা করতে হয়। তাই সংবাদমাধ্যমের বাইরের কারো সহযোগিতা নিতে পারেন। সৃজনশীল হোন। তথ্য সমৃদ্ধ হোন। আপনার লেখা রিপোর্টটি সম্পাদনার জন্য চমৎকার একজন সম্পাদককে খুঁজে বের করুন। কারণ দিনশেষে ভালো সম্পাদকের হাত দিয়েই আপনার গল্পটি শক্তিশালী হয়ে উঠবে।


পরিকল্পনা, পরিকল্পনা আর পরিকল্পনা

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সম্পাদনা মানে কেবলই ব্যাকরণগত ভুলগুলোকে খুঁজে বের করা, বাড়তি কথা ছেঁটে ফেলা, বা প্রতিবেদনের শেষ পর্যায়ে অতিরিক্ত তথ্য যাচাই করা নয়। বরং লেখাটিকে ভিন্ন মাত্রা দেয়া। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিবেদনের যথার্থতা বজায় রেখে লেখাটি পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা। তবে অবশ্যই আইনগত ও নৈতিক সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না। লেখাটি এমন ভাবে সম্পাদনা করতে হবে যেন পাঠকেরা গল্পের মূল বিষয়বস্তু বোঝার পাশাপাশি সংযোগ স্থাপনেও সক্ষম হন। তাই একজন সম্পাদক হিসেবে আমাদের নিশ্চিত করা জরুরী যে, পাঠকরা প্রতিবেদনের মর্ম উপলব্ধির পাশাপাশি নিজের সঙ্গেও গল্পের প্রাসঙ্গিকতাগুলোকে মেলাতে পারেন।

কিন্তু কীভাবে সম্ভব? ভালো সম্পাদনার ভিত্তি ভালো প্রতিবেদন ও তথ্য উপাত্ত। আর ভালো তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা। শুরুতে একটি পরিচ্ছন্ন রুপরেখা ও পরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবেদনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই অসংলগ্নতা আর অসংখ্য ফাঁকফোকর থেকে যায়।

তাই পরিকল্পনাই মূল ভিত্তি: প্রতিবেদন তৈরি ও সম্পাদনার প্রতিটি পর্যায়ে নিখুঁত পরিকল্পনার মাধ্যমে অসংখ্য ফাঁকফোকর ও বিচ্যুতিগুলো সাংবাদিকরা এড়াতে পারেন। জটিল অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নিয়ে মাসের পর মাস ঘাম ঝরাতে হয়। এ ধরনের প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করার সময় তাই এভাবে অগ্রসর হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া যথাযথ পরিকল্পনা একদিকে যেমন আপনার সময় বাঁচিয়ে দেয়, তেমনি অহেতুক সমস্যাগুলোও ছেঁটে ফেলতে সাহায্য করে। তখন সম্পাদনার কাজটিও সহজ হয়।

এমন নয় যে, রিপোর্টারের অনুসন্ধান শেষ হওয়ার পর সম্পাদক হিসেবে আপনার কাজ শুরু হবে। আপনার বরং কাজ শুরু হবে প্রতিবেদন নিয়ে পরিকল্পনার শুরুর দিন থেকেই; প্রতিবেদক কীসের ভিত্তিতে রিপোর্টটি পিচ করছেন, তা জানতে চাওয়ার মাধ্যমে। পিচটি যথেষ্ট শক্তিশালী কিনা এবং প্রভাবশালী ও আকর্ষণীয় প্রতিবেদন হয়ে উঠতে পারবে কিনা, তা নিশ্চিত করাটাও সম্পাদকেরই দায়িত্ব।
প্রথম ধাপ: গল্পটিকে সংজ্ঞায়িত করুন

একটি ভালো পিচ এক পৃষ্ঠার বেশি হওয়া উচিত নয়, যা মৌখিকভাবে এক থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। এটি যদিও প্রতিটি বার্তাকক্ষ আর তাদের সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে। যেখানে গল্পের মূল ভিত্তি, পটভূমি বা প্রাসঙ্গিকতা— এবং প্রাথমিক অনুসন্ধানগুলোর কথা উল্লেখ থাকে। পাশাপাশি প্রতিবেদনটি কী ধরনের প্রশ্ন করতে চায়, তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদক যখন তাঁর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সম্পর্কে বলতে শুরু করবেন আপনাকে তখন গোটা গল্পটি নিজের মধ্যে সাজিয়ে নিতে হবে। অনেক প্রতিবেদক তথ্য ও পরিসংখ্যানের ওপর অতিরিক্ত জোর দেন এবং প্রতিবেদনের মূল বিষয় ছেড়ে অন্যদিকে চলেন যান। লেখা সম্পাদনার সময় এই দিকে খেয়াল রাখাটা আপনার দায়িত্ব।

দ্বিতীয় ধাপ: কিসের ওপর জোর দেবেন তা নির্ধারণ করুন

একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের অনেকগুলো দিক থাকতে পারে। প্রতিবেদক সহজেই তথ্যের গোলকধাঁধায় খেই হারিয়ে ফেলতে পারেন। সম্পাদক হিসেবে এ অবস্থায় তাকে সাহায্য করা আপনার দায়িত্ব; প্রতিবেদক যেন তাঁর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে সবার সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি তুলে ধরতে পারেন। আর এ প্রশ্নটিই গল্পের বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে একটি যোগসূত্র গেঁথে দিবে। স্টোরি আউটলাইন নিয়ে আপনাদের ঐকমত্যে পৌঁছানোর পরই প্রতিবেদকের উচিত তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করা।
তৃতীয় ধাপ: অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যগুলো সাজানো
সংগৃহীত তথ্যগুলোকে কীভাবে নথিভুক্ত করা হবে তা নিয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছানোর মাধ্যমে একজন সম্পাদক হিসেবে রিপোর্টারকে আপনি সহায়তা করতে পারেন।

শতভাগ প্রস্তুত না করে রিপোর্টারকে কখনও মাঠে পাঠাবেন না। নিশ্চিত করুন যে কাজে নামার আগে তিনি প্রয়োজনীয় গবেষণাগুলো করেছেন। বিশেষ করে কারও সঙ্গে সাক্ষাতের আগে ওই সোর্স সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জোগাড় করা। প্রতিবেদনের মূল ফোকাস কে আর আর কাদের অনুসরণ করা হবে—তা নিয়ে সবসময় আলোচনা করুন। একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিন।

প্রথম সোর্সটি সাধারণত গল্পের পটভূমি সরবরাহ করে। কাজগুলো কীভাবে করা হয় তা ব্যাখ্যা করে। প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুন এবং কাঠামো সম্পর্কে জানায়। তবে তাঁরা বিশেষজ্ঞ হলেও সরাসরি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নাও হতে পারেন। পরবর্তী সোর্সটি হচ্ছে মূল সাক্ষী, তাঁরা সরাসরি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন বা অপরাধী নন তবে তাঁরা জানেন যে, কী ঘটছে। এরপর চূড়ান্ত সোর্সটি হচ্ছে তাঁরা, যাঁরা আপনাকে গল্পের মূল উপাদান, প্রমাণ এবং অপরাধীদের নাম সরবরাহ করবে।

সংগৃহীত তথ্যগুলোকে কীভাবে নথিভুক্ত করা হবে তা নিয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছানোর মাধ্যমে একজন সম্পাদক হিসেবে রিপোর্টারকে আপনি সহায়তা করতে পারেন। তথ্য নথিভুক্তির জন্য বিভিন্ন টুল ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে প্রধান লক্ষ্য হলো তথ্য ও ডেটা কীভাবে সংগঠিত হবে এবং কে এগুলোর অ্যাক্সেস পাবে তা নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছানো। যেমন, অনুসন্ধানী দলটি গুগল বা মাইক্রোসফট ডক ব্যবহার করতে পারে, যেগুলো কাজ করবে “লিভিং ডকুমেন্ট” হিসেবে। রিপোর্টিং চলাকালীন খসড়ার বিভিন্ন অংশে ক্রমাগত ডেটা, লিঙ্ক এবং ফাইল যোগ করা হবে।

একজন সম্পাদক হিসেবে আপনার প্রধান দায়িত্বের একটি হচ্ছে সমস্ত সহায়ক নথিগুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে সংগঠিত রাখা।
চতুর্থ ধাপ: নিয়মিত খোঁজখবর করুন

বড় অনুসন্ধানী প্রকল্প শেষ করতে মাসের পর মাস লেগে যেতে পারে। রিপোর্টারও অনুপ্রেরণা কিংবা মনোযোগ হারিয়ে ফেলতে পারে। সম্পাদক হিসেবে আপনার কাজ প্রকল্পের অগ্রগতির দিকে নজর রাখার। আর মাঝেমাঝে রিপোর্টারকে মনে করিয়ে দেয়া যে, কাজটি কেন শুরু করেছিলেন, এর গুরুত্ব কী এবং গল্পটি প্রকাশ হলে কী ধরনের প্রভাব পড়বে। তাই তাদের উৎসাহিত করুন। বাড়তি অনুপ্রেরণা দেয়ার চেষ্টা করুন। কখনও কখনও একটি অতিরিক্ত তথ্য বা সোর্স গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।

যখন অনেকগুলো কানাগলির মুখোমুখি হবেন, তখন ঠিক কোন জায়গায় প্রতিবেদনের ইতি টানবেন—একজন সম্পাদক হিসেবে আপনাকেই চূড়ান্ত সে সিদ্ধান্তটি নিতে হবে। কেননা একজন সম্পাদক হিসেবে আপনি জানেন, আপনার বার্তাকক্ষের সক্ষমতা কতটুকু। নিয়মিত ভালো গল্প প্রকাশের চাহিদা সম্পর্কেও আপনি ওয়াকিবল। তাই প্রতিবেদকের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ-খবর নেয়াটা জরুরী। এভাবে আপনি বুঝতে পারবেন, কোন জায়গায় এসে থামতে হবে কিংবা কতটা পথ বাকি। কখনও কখনও তা শুধু সময়ের ব্যাপার। তাছাড়া ভবিষ্যতের যে কোনো সময় আপনি এটি নিয়ে আবার কাজে নামতে পারেন।
পঞ্চম ধাপ: লেখাটিকে সুগঠিত ও পরিশীলিত আকার দিন
একজন সম্পাদক হিসেবে আপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রিপোর্টার কীভাবে ও কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে পাঠক যেন তা বুঝতে পারে যে সম্পর্কে ধারণা দেয়া।

একজন সম্পাদকের লেখা সম্পাদনার কাজে হাত দেয়ার মানে রিপোর্টিং দলের বেশিরভাগ কাজ শেষ। অর্থাৎ সফল রিপোর্টিং হয়েছে: প্রতিবেদক সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ সোর্সের সাথে দেখা করেছেন ও নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করেছেন। আর কাজটি করতে গিয়ে রিপোর্টারের যেমন গোটা বিষয় সম্পর্কে বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে, তেমনি প্রাথমিক ধারণার বিপরীতে তথ্য-প্রমাণও যোগাড় হয়ে গেছে।

এ পর্যায়ে সম্পাদককে অসংখ্য নথিপত্র দেখতে হবে। যেমন সাক্ষাৎকার নেয়ার রেকর্ডিং ও ট্রান্সক্রিপ্ট, চিঠির পিডিএফ, আলোচনার ব্যাপ্তি , ইমেইল এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথিপ্রমাণ। তবে সম্পাদক হিসেবে আপনি ততক্ষণে দলের তৈরি করা গল্পের খসড়া পর্যালোচনা ও প্রাথমিক অনুমানগুলো পরীক্ষা করেছেন। এখন আপনাকে অবশ্যই ওই তথ্য এবং দাবীগুলোর বিপরীতে সুস্পষ্ট তথ্য প্রমাণ হাজির করতে হবে। আপনার অনুসন্ধানী দলটি এরই মধ্যে মূল ব্যক্তির বা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মতামত জানার চেষ্টা করেছে। প্রথম খসড়া লেখাও শেষ। এখন সম্পাদনার সময়।

আপনি যখন একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নিয়ে মাসব্যাপী কাজ করেন, তা কিন্তু আর তখন কোনো সাধারণ প্রতিবেদন নয়। এটি বরং জটিল এবং একাধিক সূত্র থেকে আসা তথ্য দিয়ে ভরা। সম্পাদক হিসেবে আপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রিপোর্টার কীভাবে ও কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রতিবেদনটি করেছে পাঠক যেন তা সহজে বুঝতে পারে তা নিশ্চিত করা। এখানে যদি আপনি সফল না হন, প্রতিবেদনটি তাহলে প্রভাব সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হবে।

সমস্ত তথ্য-প্রমাণ জড়ো করা এবং প্রথম খসড়াটি হাতে পাওয়ার পর আপনার কাজ হচ্ছে লেখাটিকে ঘষামাজা করে পরিশীলিত করা। যেহেতু আপনি শুরু থেকেই রিপোর্টিং প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাই গল্পটিকে বুঝতে পারা আপনার জন্য কঠিন হওয়া উচিত নয়।

প্রথমত, শুরুর বাক্যটি এবং প্রথম দিককার অনুচ্ছেদগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী হওয়া উচিত যেন পাঠকদের মনোযোগ কাড়তে পারে। তারা যেন গল্পে বাঁধা পড়ে যান। জটিল তথ্যগুলোকে সরল করে বলুন, পাঠকরা যেন সহজে তা বুঝতে পারেন।

আপনি যদি আপনার পাঠকদের গল্পের প্রাসঙ্গিকতা বা গুরুত্বের বিষয়টি বোঝাতে পারেন—গল্পটি তাহলে তাদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।

দ্বিতীয়ত, শক্তিশালী ও আকর্ষণীয় চরিত্রগুলোকে দিয়ে আপনি একটি ন্যারেটিভ ফ্লো তৈরি করতে চাইবেন। সে জন্য আপনার প্রয়োজন একটি ন্যারেটিভ আর্ক তৈরি করা। এবং ঘটনার সাথে জড়িত চরিত্রগুলোকে বর্ণনার দুর্দান্ত উপায় খুঁজে বের করা।

সবশেষে, বার্তাকক্ষ, প্রতিবেদক এবং প্রতিবেদনটিকে সুরক্ষিত রাখতে আপনাকে অবশ্যই নৈতিকতা ও ভারসাম্য ধরে রাখতে হবে। সব নথিপত্র সংগ্রহ আর তা নিখুঁতভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমেই আপনি তা নিশ্চিত করতে পারেন। আমি সবসময় আমার প্রতিবেদককে প্রতিটি বাক্যের সাথে একটি লিঙ্ক যুক্ত করতে বলি। বিশেষ করে যে জায়গাগুলোতে আরও সমর্থন বা প্রমাণের প্রয়োজন। ওই লিঙ্কটি এ সম্পর্কিত ডকুমেন্ট, প্রকাশিত প্রতিবেদন, অথবা এ সম্পর্কিত অন্য কোনো লেখার সাথে আমাকে যুক্ত করতে পারে।

কিছু সম্পাদক লেখাকে ছোট ছোট বাক্যে ভেঙে ফেলেন। প্রতিটি বাক্যের মধ্যে একটি ফাঁকা স্থান রেখে দেন। তারপর খুব সতর্কতার সাথে প্রতিটি বাক্য পর্যালোচনা করেন এবং সঙ্গতিপূর্ণ উপাদানগুলো যোগ করেন।

ফ্যাক্ট–চেকিং

আপনার অনুসন্ধানী দলের মধ্যে যদি কোনো ফ্যাক্ট-চেকার না থাকে, তবে প্রতিটি তথ্য, পরিসংখ্যান এবং বক্তব্য যাচাই করতে লেখার সম্পাদক হিসেবে আপনাকেই সে ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রতিটি তথ্য বিভিন্ন সূত্র, যেমন ডকুমেন্ট, সাক্ষাৎকার এবং পাবলিক রেকর্ড যাচাই করুন। ডেটাবেস এবং টুলস ব্যবহার করুন। যেমন LexisNexis, Pipl এবং Factiva। (আরো তথ্যের জন্য এই গাইডের ফ্যাক্ট-চেকিং অধ্যায়টি দেখুন।)


গল্পের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা

আপনার গল্পের শুরুটা, মাঝের অংশ আর শেষটা দুর্দান্ত হওয়া চাই। এরপর পাঠকের আকর্ষণ ধরে রাখতে ন্যারেটিভ স্টোরিটেলিং পদ্ধতি ব্যবহার করুন। যেমন পাঠকের মনে উত্তেজনা ও শঙ্কা সৃষ্টি করা, দৃশ্য তৈরি করা এবং চরিত্রগুলোর বিকাশ ঘটানো।

 

অনুসন্ধানে উঠে আসা তথ্য উপস্থাপন

অনুসন্ধান থেকে পাওয়া তথ্যের তাৎপর্য বুঝতে পাঠককে প্রাসঙ্গিক ঘটনার বর্ণনা প্রদান করুন। এর মধ্যে রয়েছে পটভূমির তথ্য, ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ, এবং প্রযুক্তিগত শব্দ বা ধারণার ব্যাখ্যা।


ন্যায্যতা ও ভারসাম্য নিশ্চিত করা

সবগুলো পক্ষকে উপস্থাপন করুন। পক্ষপাতিত্ব এড়িয়ে চলুন। নিরপেক্ষতা বজায় রাখুন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের এই অভিযোগের বিপরীতে জবাব দেয়ার সুযোগ দিন। প্রতিবেদনে আপনি যে অভিযোগগুলো এনেছেন তা সমর্থনে যথেষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ করার পর অভিযুক্তদের কাছে একটি চিঠি লিখুন। সেই চিঠিতে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করার জন্য তাদের কাছে নিশ্চিতকরণ চেয়ে নিন এবং তাদের মন্তব্য করার সুযোগ দিন।

প্রতিক্রিয়া জানাতে সময় দেয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ভিন্ন ভিন্ন মত থাকতে পারে, তবে সাধারণভাবে এটি চার দিন থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে হওয়া উচিত। তবে, কখনই পুরো লেখাটি তাদের পর্যালোচনার জন্য পাঠানো উচিত নয়। বরং যে প্রশ্নগুলোর উত্তর চান এবং প্রতিবেদনে যে দাবিগুলো করেছেন, শুধু সেগুলোর একটি তালিকা পাঠানোই যথেষ্ট।
আইনি ও নৈতিক দিক বিবেচনা

নির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশের আইনি প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকুন। সাংবাদিক এবং প্রকাশনার সুরক্ষার জন্য আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন, যেন মানহানি, মিথ্যা অভিযোগ বা গোপনীয়তা লঙ্ঘনের মতো ঝুঁকি এড়ানো যায়। সোসাইটি ফর প্রোফেশনাল জার্নালিস্টস বা পেশাদার সাংবাদিক সংস্থার নৈতিক দিকনির্দেশনা অনুসরণ করুন।


কেস স্টাডি

প্যাঙ্গোলিন রিপোর্ট
এটি ছিল প্রায় এক বছরের দীর্ঘ অনুসন্ধান, যা একটি অপরাধচক্রের কার্যকলাপ উন্মোচন করেছিল। এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চীনের মূল ভূখণ্ডে প্যাঙ্গোলিন (স্তন্যপায়ী প্রাণী—স্কেলি অ্যান্টিটার নামেও পরিচিত) পাচার করত। এই অনুসন্ধানে ১৫টি দেশ ও অঞ্চলের ৪০ জনেরও বেশি সাংবাদিক একত্রে কাজ করেছেন। তাঁরা অসংখ্য শিকারি, ব্যবসায়ী, এবং ক্রেতার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এমনকি প্রমাণ সংগ্রহের জন্য গোপনে কাজ করেছেন। এবং পরিবেশগত অপরাধের নথি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন।

স্ক্রিনশট প্যাঙ্গোলিন রিপোর্টস

শুরু থেকেই সম্পাদকরা সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। রিপোর্টিং পরিকল্পনা করেছেন। প্রতিবেদনের আউটলাইন নিয়ে সম্মত হয়েছেন। এছাড়া রিপোর্টাররা যখন কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারছিলেন না বা হাল ছেড়ে দিতেন তখন তাদের বিভিন্ন পরামর্শ ও নিদের্শনা দিয়েছেন। বিশাল পরিসরে সহযোগিতার মূল চাবিকাঠি বিস্তারিত পরিকল্পনা। কাজের শুরুতে সম্পাদক এবং মূল রিপোর্টারদের একটি দল হংকংয়ে বৈঠক করেন। সেখানে তাঁরা গল্পের আউটলাইন, অ্যাঙ্গেল এবং রিপোর্টিং পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। কোনো বিষয় নিয়ে একবার সবাই সম্মত হওয়ার পর তাঁরা সাপ্তাহিক মিটিং করতেন। কাজের অগ্রগতির খোঁজ নিতেন। কোনো ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ের পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে তাঁরা আবার নতুন পরিকল্পনা করতেন।

গোটা অনুসন্ধানের কাজ শেষ হওয়া এবং সব রিপোর্টার তাদের খসড়া প্রতিবেদন পাঠানোর পর, সম্পাদকদের একটি দল সেগুলো মূল্যায়ন এবং সম্পাদনা শুরু করেন। যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে ভাগে ভাগে প্রতিবেদনগুলো এসেছিল, সম্পাদকরা তখন গোটা প্রতিবেদনকে বিভিন্ন অধ্যায়ে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রতিটি অধ্যায়ে পাচারকারীর নেটওয়ার্কেগুলো কীভাবে কাজ করে তা বিভিন্ন অংশ ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। যেমন প্যাঙ্গোলিনগুলোকে কীভাবে বন থেকে ধরা হয়, অবৈধভাবে সংরক্ষণ করা হয় এবং কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে চীনে পাচার করা হয়—তার বর্ণনা করা হয়। তবে পুরো প্রতিবেদনের চূড়ান্ত পর্যালোচনার দায়িত্বে ছিলেন একজন প্রতিবেদক। কোনো নির্দিষ্ট অধ্যায় নিয়ে যদি বিভিন্ন সম্পাদকের আলাদা আলাদা মতামত জানাতেন, সেক্ষেত্রে তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেন।


কমেন্ট বক্স

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

সম্পাদক ও সিইও: মামুনুর রশীদ নোমানী

বরিশাল খবর অফিস: সিএন্ডবি রোড, বরিশাল

ইমেইল: nomanibsl@gmail.com

মোবাইল: 01713799669 / 01712596354

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি

© বরিশাল খবর সর্বস্ব সংরক্ষিত

Developed by : BDIX ROOT