সবার অগোচরে : দায়িত্ব হস্তান্তর না করেই চলে গেলেন বরিশাল সরকারি মডেল কলেজ’র অধ্যক্ষ
প্রকাশ: ৫ জুন, ২০২১, ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার : দায়িত্ব হস্তান্তর না করেই সবার অগোচরে চলে গেলেন বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ’র অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদার। যাওয়ার সময় গাছ থেকে একটি কাঠাল কেটেও নিয়ে গেলেন। কাউকে না বলে চুপি চুপি চলে গেলেও গাছ থেকে কাঠাল নিতে ভুল করেন নি।অফিসের চাবি রেখে গেছেন একটি খাম্ভার নীচে।
সিসিটিভি ক্যামেরায় এমন চিত্রই দেখা গেল। এ চিত্র দেখে শিক্ষকরা হতবাক।
২ জুন’২১তারিখ বিকেল পৌনে চারটার দিকে চারদিক সুনসান নিরবতা। কলেজে দুজন গার্ড ছাড়া কেউ নেই। এদুজন গার্ড কলেজের প্রধান গেটে দ্বায়িত্ব পালন করছিলেন। অধ্যক্ষের ভবনটির পশ্চিম পার্শ্বের পিছনের গেট দিয়ে একটি গাড়ি প্রবেশ করে। আগত গাড়িটির ড্রাইভার ও অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদার গাড়িতে মালামাল উঠাচ্ছিলেন।অঝোড়ে ঝড়ছিল ঘাম। ঘামে টুপ টুপ জামা কাপড়। কেউ যেন দেখে না ফেলে এমন ভাবে নিরবে নিঃশব্দে চলে গেলেন বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ’র অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদার। তিনি চলে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ,কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা স্বস্তি প্রকাশ করেন। হাফ ছেড়ে বেচেঁ যান অহেতুক হয়রানী ও মানষিক নির্যাতন থেকে। তবে কাউকে দায়িত্ব না দেয়ায় সৃষ্টি হয়েছে নানান জটিলতা।
এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির একাধিক সিনিয়র শিক্ষকরা জানিয়েছেন,২৯ মে থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদারের দায়িত্ত্ব হস্তান্তর না করার প্রতিবাদসহ ১২ দফা দাবীতে অবস্থান ধর্মঘট ও কালোব্যাজ ধারন কর্মসুচী পালন করে আসছিলেন। এসব কর্মসুচীতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা একাত্মতা প্রকাশ করেন। বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের চলমান কর্মসুচীর মাঝে ২ জুন ‘২১ তারিখ বুধবার কোন সিনিয়র শিক্ষককে দায়িত্ব না দিয়ে চলে যান সকলের অগোচরে।
ফলে প্রতিষ্ঠানটি এখন অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছে।সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন জটিলতা। বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ন প্রত্যাহিক কাজকর্ম। সিনিয়র শিক্ষকরা ইতিমধ্য বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, বরিশাল অঞ্চলের শীর্ষ কর্মকর্তা,শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় অবহিত করেছেন।
সবার অগোচরে নিরবে চলে যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের নিরাপত্তা প্রহরী বজলুর রহমান। তিনি বলেন, আমি একজন শিক্ষকের ফোন পেয়ে অধ্যক্ষের বাস ভবনের পিছনের গেটে যেয়ে দেখি গেট খোলো রয়েছে এবং একটি গাড়িতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ও অধ্যক্ষ বিছানাপত্র এবং মালামাল গাড়িতে লোড করছেন। আমাকে দেখে অধ্যক্ষ চুপি চুপি বললেন,কাউকে কিছু বলোনা আমি চলে যাচ্ছি গেট বন্ধ করে দেও। বজলুর রহমান গেট বন্ধ করে দিলে তার নিকট গেটের চাবি রাখতে বলেন। পরে অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদার বজলুর রহমানকে কল করে বলেন কলেজের অফিস কক্ষের চাবী বাসভবনের একটি খাম্ভার নিচে রয়েছে ওখান থেকে নিয়ে হিসাব রক্ষক আমির হোসেনকে দিও।ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে বজলুর রহমান বলেন অধ্যক্ষ স্যার আমাদের সকলকে না বলে কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে সকলের অগোচরে চলে যাবেন সে এমন পরিস্থিতি অধ্যক্ষ স্যারই তৈরী করেছেন। কলেজের ইতিহাসে এই ঘটনা বিরল বলে দাবি করলেন বজলুর রহমান।
এ ব্যাপারে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ’র কম্পিউটার অপারেটর মোঃ জাহিদুর রহমান বলেন, যতটুকু জানি তাহলো অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদার কাউকে দায়িত্ব হস্তান্তর না করেই ২ জুন’২১ তারিখ কাউকে কিছু না বলেই চলে গেছেন।
এ ব্যাপারে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ’র শিক্ষক পরিষদের সাধারন সম্পাদক মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন,আমরা ১২ দফা দাবীতে কলেজে শান্তিপূর্নভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে অবস্থান ধর্মঘট ও কালোব্যাজ ধারন কর্মসুচী পালন করেছি। তিনি বলেন,২২ এপ্রিল ‘২১ তারিখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদারকে প্রত্যাহার করে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে ন্যস্ত করা হয়। ২৯ এপ্রিল ২০২১ তারিখে সামরিক সচিবের পক্ষে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু হায়াত মোঃ রীশাদ মোরশেদ স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে তাকে বিএমএ পদায়ন করা হয়। কিন্তু তিনি বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বভার অর্পণ করে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি।শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মসুচীর মাঝে ২ জুন’২১ তারিখ কাউকে কিছু না বলে এবং দায়িত্বভার কাউকে না দিয়ে চলে গেছেন। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবহিত করেছি।
এব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর,বরিশাল অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন,হয়তো কলেজের কাউকে দায়িত্ব দিবেন না তাই দায়িত্ব না দিয়ে চলে গেছেন। নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ হলে তার কাছে হয়তো দায়িত্ব দিবেন। তিনি বলেন, আশা করি শিঘ্রই কলেজে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদারের মোবাইলে সাংবাদিকরা কল করলে তিনি কল রিসিভ না করে কল কেটে দেন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে একাধিকবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদার।তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগের তদন্তে সকল বিষয়বস্তুর প্রমান পেয়ে তদন্ত কমিটির তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় অধ্যক্ষকে প্রত্যাহার করে নেয় ২২ এপ্রিল’২১ তারিখ।