ফরেনসিক রিপোর্টে তর্কিত বিষয়ে কোন কিছু না পাওয়ার পরেও পুলিশ বহুল সমারোচিত ও বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক নোমানীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেছে। নিম্মআদালতে চার্জসীট দাখিলের পরে মামলাটি বর্তমানে বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনালে স্থান্তরিত হয়েছে। মামলার বিবাদী পক্ষ চার্জশীট বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন ।আবেদনটি শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে।
মামলাটির ব্যাপারে বিবাদী মামুনুর রশীদ নোমানীর আইনজীবী এ্যড,কাজী মনির জানান,
পুলিশের দেওয়া চার্জশিট সম্পুর্ন মিথ্যা,বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। কারন মামলাটিতে বাদী প্রতিপক্ষের আনীত অভিযোগ এর সত্যতা সম্পর্কে ফরেনমিক প্রতিবেদনে কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বিবাদীদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৬ (২) /৩৩ (২) ধারার কোন উপাদান বিদ্যমান নাই।
এ্যড.কাজী মনির আরো বলেন,বিবাদীরা সম্পুর্ন নির্দোষ,নিরাপরাধ।বাদী পক্ষ শুধুমাত্র হয়রানী, আর্থিক ক্ষতি সাধন ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই হয়রানীর জন্য মামলাটি দায়ের করেছেন। তিনি বলেন,ইতিমধ্য আমরা ফৌজধারী কার্যবিধি আইনের ২৬৫ (সি ) ধারা মোতাবেক মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন জানিয়েছি সাইবার ট্রাইব্যুনালে।
বিতর্কিত ও কথিত এ মামলার বিবাদী বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানী বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত ছাড়াই মামলার এজাহার কপিটি চার্জশিট হিসেবে আদালতে দাখিল করেছেন। অভিযোগপত্রটি সম্পূর্ণ মিথ্যা গল্পে ভরা। যার কোন সত্যতা নাই। নোমানী বলেন বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ক্ষেত্রে,
তদন্তকারী অফিসারের হাতে প্রথমে ৬০ (ষাট) দিন, তারপর ১৫ (পনের) দিন ,মোট ৭৫ দিনের মধ্য তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করার কথা কিন্তু আমাদের মামলায়
তদন্তকারী কর্মকর্তা ১ (এক) বছর ১১ (এগারো) মাস ১৭ (সতের) দিন পর আদালতে
চার্জশিট দাখিল করেন। মামলাটি ১৩/০৯/২০২০ তারিখে দায়ের করা হয় ।অথচ
তদন্তকারী অফিসার এক বছর এগারো মাস ১৭ দিন পরে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এ ব্যাপারে বরিশাল বারের সিনিয়র আইনজীবী এড. পান্না বলেন তদন্তকারী অফিসার সম্পূর্ণ আইনের অপব্যবহার করে এবং বাদী পক্ষের সাথে
যোগসাজশ করে হয়রানীর জন্য সময় ক্ষেপন করেছেন । হয়ত বাদী পক্ষ ক্ষমতাসীন দলের একজন প্রভাবশালী ও উচ্চপদস্থ
সদস্য তাই তদন্তকারী কর্মকর্তা এরকমটি করেছেন । জনাব পান্না বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন দিতে ১ (এক) বছর ১০ (দশ) মাস ১৭ (সতের) দিন সময়ের প্রয়োজন হয়না। শুধুমাত্র হয়রানীর জন্য অতিরিক্ত সময় নিয়েছেন। তিনি বলেন,
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ক্ষেত্রে বলা আছে, সর্বোচ্চ ৭৫ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। কিন্তু, নানাবিধ কারণে প্রায়ই আমরা দেখি, আইনে নির্দিষ্ট থাকা সত্ত্বেও তা কার্যকর করা হয় না। অর্থাৎ সময়ের ক্ষেত্রে যে নির্দেশনা থাকে তা অনুসরণ করা হয় না। সময়ের এই সীমাটা মেনে চলাটা ‘বাধ্যতামূলক’ কিনা তা উচ্চ আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি।
মামলার চার্জশীট প্রসঙ্গে বরিশাল বারের সদস্য ও সাংবাদিক নোমানীর পক্ষের আরেক সিনিয়র আইনজীবী জনাব গিয়াস উদ্দিন বলেন,আমি মামলার এজাহার আর চার্জশীট কপি দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছি। হুবহু একই। যেটি এজাহার কজি সেটিই চার্জশীট কপি। তিনি বলেন ফরেনসিক রিপোর্ট সম্পর্কে অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা এক জায়গায় উল্লেখ করেছেন, ফরেনসিক
পরীক্ষার জন্য পাঠানো আলামতের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়,
বিশেষজ্ঞ গাজী তাজমিলুর রহমান উপ-পরিদর্শক-পরিদর্শক, বিপি ৮৮১৪১৬৯৬৬২,
আইটি ফরেনসিক বাংলাদেশ পুলিশ, সিআইডি, ঢাকা। অভিমত দিয়েছেন যে ১ নং আলামত,
“ samsung glaxy note-5 sm-n920p “ মোবাইল ফোনে প্রাপ্ত বিতর্কিত ৫টি
স্থিরচিত্রের মুখ দেখা যাচ্ছে না বলে কোনো মতামত দেওয়া যায়নি। আর এটি
সম্পাদনাও করা হয়নি বলে মতামত প্রদান করেন ফটোগ্রাফি বিশেষজ্ঞ ফটোগ্রাফি শাখা, বাংলাদেশ পুলিশ, সিআইডি, ঢাকা।
ফটোগ্রাফিক স্পেশালিস্ট, ফটোগ্রাফিক ব্রাঞ্চ, বাংলাদেশ পুলিশ সিআইডি,
ঢাকা মতামত দিয়েছেন যে ১. বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত
সাদিক আবদুল্লাহর নমুনা ছবি সহ ডিভিডিতে সংরক্ষিত বিতর্কিত স্থির ছবিতে
ভিকটিমটির মুখ দেখা যাচ্ছে না। এজন্য মতামত দেোয়া গেলনা। এবং নমুনা ছবি সম্পাদনা করা হয়নি তাই মতামত দেয়া গেলনা।
এ ব্যাপারে মামলার দুই নম্বর বিবাদী কামরুল ইসলাম বলেন বাদী ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বরিশাল শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ভিকটিম ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ
বরিশাল শাখার সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ
ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার আত্মীয় তাই তিনি একজন প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন এবং মিথ্যা চার্জশিট দিতে বাধ্য করেছেন পুলিশকে।
সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় হওয়ার
আশঙ্কায় আদালত নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে কিনা এমন প্রশ্ন বিবাদী পক্ষের রয়েছে । বর্তমানে বিবাদী পক্ষ শর্ত সাপেক্ষে ও মুচলেকায় জামিনে রয়েছেন।
জনাব কামরুল বলেন ,আমরা
আমাদের আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেছি। যার তারিখ ছিল ২ মার্চ’২৩ তারিখ। আদালত আমাদের আবেদন শুনানীর জন্য সময় দিয়েছেন আগামী ধার্য্য তারিখে।
বরিশাল বারের সিনিয়র আইনজীবি জনাব গিয়াস উদ্দিন বলেন ,
ফরেনসিক রিপোর্টে প্রমাণ হয়নি তার পরেও তদন্তকারী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬(২)/৩৩(২) ধারায়
অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন তা খুবই দুঃখজনক ও আইনের অপব্যবহার । পুলিশের বানোয়াট ও মিথ্যা চার্জশীটে মামলা পরিচালিত হলে ডিজিটাল
নিরাপত্তা আইনের ২৬ (২) ধারায় ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা
উভয় দণ্ড এবং ডিজিটাল
নিরাপত্তা আইনের ৩৩ (২) ধারায় ১৪ বছরের কারাদণ্ড ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা। বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
সম্ভাবনা থেকে যায়। এর বহু কারনও রয়েছে। কারন বাদী পক্ষ ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী।
মামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিক নোমানী বলেন, সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত আমাদের মামলা থেকে অব্যাহতি না দিয়ে আমার বিরুদ্ধে
অভিযোগ গঠন করলে এবং আমাদের দায়েরকৃত মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন খারিজ হলে আমরা সেই আদেশের কপিসহ
হাইকোর্টে রিট দায়ের করব। উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় আমাদের
সিনিয়র আইনজীবীদের মতামত ও পরামর্শ নিয়ে মামলা পরিচালনা করবো। আশা করি আমরা ন্যায় বিচার পাবো।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আরিফুর রহমান বলেন , আমি মামলাটির দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দ্বায়িত্ববার গ্রহন করে প্রাপ্ত তথ্যাদি ও উদ্ধর্তন কর্তৃকপক্ষের সাথে আলোচনা করে তাদের নির্দেশাবলী যথাযথবাবে পালন করে আদালতে চার্জশীট প্রদান করেছি। ফরেনসিক রিপোর্টের ব্যাপারে তিনি বরেন, ফরেনসিক রিপোর্টে মামলায় উল্লেখিত ছবির সাথে মুখমন্ডল দৃশ্যমান না হওয়ায় সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ কোন মতামত প্রদান করেন নি যা বিস্তারিত ফরেনসিক রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।
উল্লেখ্য,২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি ধারণ করার কথিত অভিযোগে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘বরিশাল খবর’–এর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী, যুবলীগ নেতা কামরুল মৃধা ও গাড়ির ড্রাইভার লাবু গাজীকে পুলিশ আটক করে।
আটকের পরে তাঁদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা করা হলে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
মামলায় তারা ১৪ দিন কারাগারে থাকার পরে আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হোন। বর্তমানে মামলাটি বর্তমানে বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে।