৮০ বছর ধরে জনশূন্য একটি গ্রাম। হয়তো পাঠক ভাববেন ইউরোপ-আমেরিকার কোনো গ্রাম হবে। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এটা অসম্ভব।
যে দেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১২৬৫ জনের বেশি মানুষ বাস করে, সেখানে এমন গ্রাম থাকতে পারে?
কিন্তু এমন ভাবনাকে অবাক করে দিতে পারে যে তথ্য, ঝিনাইদহের মঙ্গলপুর নামের গ্রামটি এমনই জনশূন্য।
গ্রামে মসজিদ, ঈদগাহ, পুকুরসহ বাড়ি-ঘর সবই আছে; শুধু মানুষ নেই। এমন অদ্ভূত গ্রামটি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নে অবস্থিত।
কেন ওই গ্রামে মানুষ থাকে না তা জানতে পেছনের ইতিহাস ঘাটতে হবে।
আশপাশের গ্রামের প্রবীণরা জানিয়েছেন, বহু বছর আগে মহামারি কলেরায় ওই গ্রামের অনেক মানুষ প্রাণ হারান। মহামারি থেকে বাঁচতে গ্রামের মানুষেরা অন্যত্র চলে যান। তখন থেকেই গ্রামটি জনশূন্য হয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দিনের বেলায় প্রয়োজনে সেই গ্রামে গেলেও বিকালের আগেই ফিরে আসেন। ভূতের ভয়ে সেখানে কেউ রাত্রিযাপন করেন না।
অথচ একটা সময় লোকে-লোকারণ্য ছিল গ্রামটি। ইতিহাস বলছে, এক সময় মঙ্গলপুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস ছিল। সেই গ্রামের জমিদারের নাম ছিল মঙ্গল পাঠান। তার নামেই গ্রামের নাম। মঙ্গল পাঠান ছিলেন প্রতাপশালী। গ্রামে তিন একর জমি নিয়ে বিশাল এক বাড়ি ছিল জমিদার মঙ্গলের। মঙ্গল পাঠান একসময় মারা গেলে তার জমিদারিত্ব হারিয়ে যায়। তার সমাধি এখনো আছে মঙ্গলপুর গ্রামে। তবে সেই বাড়ি ধ্বসস্তূপে পরিণত। বাড়ির চারিদিকে করা ৩০-৪০ ইঞ্চি চওড়া মাটির প্রাচীরেরও অস্তিত্ব নেই। তবে তার সমাধি এখনো জমিদারিত্বের প্রভাব প্রতিপত্তির চিহ্ন বহন করছে।
সম্প্রতি জনশূন্য মঙ্গলপুরে বসতি স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে গ্রামটিতে ভূমিহীন পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। যে কারণে মানুষের আনাগোনাও বেড়েছে।
সরকারি প্রকল্পের উদ্যোগে শিগগিরই ৮০ বছরের অমঙ্গল কাটিয়ে ফের লোকে লোকারণ্য হবে মঙ্গলপুর গ্রাম।