৩০ হাজার নথি গায়েব, রাজউকের ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট
প্রকাশ: ৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ৩:২৭ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সার্ভার থেকে প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের নথি গায়েবের ঘটনায় ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়েছে।
সোমবার (২ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এসময় দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আদালতে এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, নথি গায়েবের বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনলে রাজউক চেয়ারম্যানের ব্যাখ্যা তলব করেছেন। আদালত এ বিষয়ে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
এর আগে, গত ২৯ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সার্ভার থেকে ভবন নির্মাণের অনুমোদন-সংক্রান্ত প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের আবেদনের নথিপত্র গায়েব হয়ে গেছে। পরে ৬ ডিসেম্বর বিষয়টি প্রথম জানতে পারে রাজউক। তবে ঘটনার তিন সপ্তাহ পরও সরকারি এই সংস্থা কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি।
যেসব গ্রাহকের নথিপত্র হারিয়েছে, তারা ২০১৯ সালের মে মাস থেকে চলতি বছরের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অনুমোদন পেতে আবেদন করেছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ এসব নথি হারিয়ে যাওয়ার কারণে ওই গ্রাহকরা নানা রকম ভোগান্তির শিকার হতে পারেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
একই সঙ্গে দুর্নীতির সুযোগও তৈরি হতে পারে। যেমন অনেকেই ভবন বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চান। তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নথিপত্র যাচাইয়ের জন্য রাজউকে চিঠি পাঠায়। নথি উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ওই গ্রাহকের ব্যাংকঋণ পেতে সমস্যা হবে। কারণ, ব্যাংকে জমা দেওয়া গ্রাহকের নথি ঠিক আছে কি নেই, সেটি যাচাই-বাছাই করার সুযোগ রাজউকের থাকছে না।
অন্যদিকে নথি হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে কোনো গ্রাহক চাইলে রাজউক অনুমোদিত মূল নকশা ঘষামাজা করে অনিয়ম করতে পারবেন। এতে রাজউকের বাধা দেওয়ার সুযোগও কম থাকবে। কারণ, চ্যালেঞ্জ করার মতো নকশা এখন রাজউকে নেই। আবার ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ ভবনের উচ্চতা বাড়ালেও রাজউক ধরতে পারবে না—বলছেন রাজউকের কর্মকর্তারা।
রাজউকের আওতাধীন এলাকায় কোনো ভবন নির্মাণ করতে হলে রাজউক থেকে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র ও নির্মাণের অনুমোদন নিতে হয়। আগে সনাতন পদ্ধতিতে কাজটি হতো। ২০১৬ সালে প্রাথমিকভাবে রাজউকের আটটি অঞ্চলের মধ্যে শুধু একটি অঞ্চলে (অঞ্চল-৫) ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র দেওয়ার মাধ্যমে অনলাইন কার্যক্রম শুরু করে রাজউক। ২০১৮ সালে সব অঞ্চলে অনলাইনে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র দেওয়া শুরু হয়। এরপর ২০১৯ সালের মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের পাশাপাশি নির্মাণ অনুমোদন দেওয়ার কাজটিও শুরু হয়।
অনলাইনে এ কাজ করতে ব্যবহার করা হয় এই ওয়েবসাইট। এখানে গিয়ে নিবন্ধন করে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র ও নির্মাণ অনুমোদনের আবেদন করতে হয় গ্রাহককে। ভবনের নকশাসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র গ্রাহককে এই ওয়েবসাইটেই আপলোড করতে হয়।
পরে যাচাই-বাছাইসহ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে এই ওয়েবসাইটেই ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র ও রাজউক অনুমোদিত ভবনের নকশা আপলোড করা হয়। এগুলো ডাউনলোড করে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারেন গ্রাহক।
রাজউক সূত্র জানায়, গত ৬ ডিসেম্বর হঠাৎ ওয়েবসাইট অকার্যকর হয়ে যায়। রাজউকের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) শাখার প্রধান কাজী মোহাম্মদ মাহাবুবুল হক বলেন, হারিয়ে যাওয়া সব নথি পুনরুদ্ধারে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ ঘটনায় থানায় জিডিও (সাধারণ ডায়েরি) করেন তারা।