সোমবার ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   সোমবার ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



হিরো আলমকে হেয় করে বড় দলের নেতাদের দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা
প্রকাশ: ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১১:৫৪ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

হিরো আলমকে হেয় করে বড় দলের নেতাদের দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা

বিবিসি :
বাংলাদেশে জাতীয় সংসদের একটি আসনের উপনির্বাচনে পরাজিত হয়েও আলোচনায় থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলমকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে, যাতে জড়িয়ে পড়েছে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারাও।

ইউটিউবে বিচিত্র অভিনয়, গান আর নাচ দেখিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনায় আসা মিস্টার আলম হিরো আলম নামে সারাদেশে সুপরিচিত।

বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত।

গত সপ্তাহে বগুড়ার দুটি আসনে উপনির্বাচন করে তিনি পরাজিত হয়েছেন। তবে এর মধ্যে একটি আসনে মাত্র সাড়ে আটশ ভোটের ব্যবধানে হেরে যাওয়ার পর তাকে ‘হারিয়ে দেয়া হয়েছে’ বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।

তবে নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে থেকেই হিরো আলমের পক্ষে বিপক্ষে পোস্ট ও মন্তব্যে সয়লাব হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

শেষ পর্যন্ত মিস্টার আলমের নাম উঠে আসে ক্ষমতাসীন আওয়াম লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তৃতাতেও।

তবে তারা যেভাবে মিস্টার আলমকে তুলে ধরেছেন তাতে নাগরিক হিসেবে তার সাংবিধানিক অধিকারকে কটাক্ষের পাশাপাশি তাকে হেয় করার প্রবণতাও প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

আর এটি শুধু নির্বাচনের পরেই নয়, নির্বাচনের প্রচারণার সময়েও তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য কি-না এমন প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে বারবার। তখন এর জবাবও দিয়েছেন তিনি।

শেষ পর্যন্ত সিনিয়র রাজনীতিকদের পক্ষ তাকে হেয় করে দেয়া বক্তব্যগুলোর তীব্র সমালোচনা করে হিরো আলম বলেছেন তিনি কারও কাঁধে ভর দিয়ে এ পর্যায়ে আসেননি। বরং পরিশ্রম ও সংগ্রাম করেই তিনি এটি অর্জন করেছেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিতি সানজানা বলছেন সাংবিধানিক শর্তগুলো পূরণ করতে পারলে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করা যে কোনো নাগরিকের অধিকার এবং হিরো আলম বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সেসব শর্ত পূরণ করেই নির্বাচন করেছেন।

হিরো আলম

 

 

হিরো আলম কে? কেন তিনি আলোচনায়

কয়েক বছর আগে ভারতীয় কিছু গণমাধ্যম হঠাৎ করেই হিরো আলমকে বাংলাদেশের শীর্ষ শিল্পী হিসেবে প্রচার শুরু করে। এরপরই তিনি মূলত বাংলাদেশেও আলোচনায় উঠে আসেন।

তার ইউটিউব চ্যানেলের বিপুল সংখ্যক সাবস্ক্রাইবার তাকে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও আলোচিত করে তোলে। একই সঙ্গে তাকে নিয়ে হাস্যরসও শুরু হয়।

২০২২ সালের জুলাইতে তার গাওয়া একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ডেকে নিলে তিনি আবারো আলোচনায় আসেন।

পরে বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে তাকে গান গাইতে নিষেধ করে তার ‘ব্যক্তিগত স্বাধীনতায়’ হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।

পুলিশ তার ‘হিরো’ নাম পাল্টানোর নির্দেশ দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। পুলিশ অবশ্য তখন বলছে, হিরো আলমকে ‘বিকৃতভাবে’ গান প্রচার করতে নিষেধ করেছে তারা।

মিস্টার আলমের বিরুদ্ধে তার সমালোচকদের অভিযোগ যে তিনি বিকৃত করে গান প্রচার করেন।

তবে আলোচনা সমালোচনা যাই হোক তার গান, ভিডিও- সবকিছুই ইউটিউবে ব্যাপক প্রচার পেয়ে যায়।

এর মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচন করেও আলোচনায় আসেন তিনি।

দুই দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের পর তিনি সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন ২০১৮ সালের নির্বাচনে। সেবার তিনি জাতীয় পার্টির মনোনয়নও পেয়েছিলেন।

সর্বশেষ সংসদের উপনির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একটি আসনে মাত্র সাড়ে আটশ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।

ভোটের ছবি
 

কী বলেছেন ওবায়দুল কাদের ও মির্জা আলমগীর

শনিবার ঢাকায় এক সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তৃতায় উঠে আসে হিরো আলম প্রসঙ্গ।

তিনি দাবি করেন যে জাতীয় সংসদকে খাটো করতে বিএনপি মো. আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমকে উপনির্বাচনে প্রার্থী করেছিল।

তার বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, “….. হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে। হিরো আলমকে বিএনপি নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। তারা সংসদকে ছোট করার জন্য হিরো আলমকে প্রার্থী করেছে। অবশেষে ফখরুলের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে।”

ওইদিনই নয়াপল্টনে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথাতেও উঠে আসে হিরো আলম প্রসঙ্গ।

তিনি বলেছিলেন “আজ প্রমাণ করেছে সে, এই আওয়ামী লীগ হিরো আলমের কাছেও কতটা অসহায়। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তাঁর সঙ্গে জিততে হয়।”

কিন্তু এরপরই নতুন করে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয় যে দুই নেতাই হিরো আলমকে অসম্মানিত ও হেয় করে বক্তব্য দিয়েছেন।

জবাব দিয়েছে হিরো আলম নিজেও।

শনিবার রাতে ফেসবুক লাইভে এসে তাকে নিয়ে নেতাদের বক্তব্যের জবাব দিয়েছে মিস্টার আলম।

ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যের বিষয়ে হিরো আলম বলেন তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করেছেন এবং তাকে বিএনপি দাঁড় করিয়ে দেয়নি।

“ওবায়দুল কাদের স্যার হিরো আলমকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন। হিরো আলমকে নাকি বিএনপি দাঁড়িয়ে (দাঁড় করিয়ে) দিয়েছে। বিএনপির কোনো সাইনবোর্ড নিয়ে কি আমি ভোট করেছি? বিএনপির কেউ কি মাঠে ছিল? আমার পাশে ছিল?,” প্রশ্ন করেন মিস্টার আলম।

মিস্টার আলম আরও বলেন যে, “ওবায়দুল কাদের স্যার বলেছেন, হিরো আলম পার্লামেন্টে গেলে নাকি পার্লামেন্ট ছোট হবে। আমি যদি পার্লামেন্টে গেলে পার্লামেন্ট ছোট করা হয় তবে যখন মনোনয়ন কিনছি, তখন কিন্তু আপনাদের বলা উচিত ছিল, হিরো আলমের কাছে যেন মনোনয়ন বিক্রি করা না হয়”।

“আপনারাই বলেছেন, গণতান্ত্রিক দেশ, সবাই নির্বাচন করতে পারবে। সবার যদি নির্বাচন করার কথা আইনে থাকে, তাহলে আমি ভোটে দাঁড়ালে সংসদ ছোট হবে কেন? তাহলে সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে আইন করতে হবে”

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য প্রসঙ্গে হিরো আলম বলেন “মির্জা আলমগীর বলেছেন, এই সরকার এখন অসহায় হয়ে গেছে। এই সরকার অসহায় হয়েছে কি না, আমি জানি না। তবে আমি হিরো আলম যে অসহায় হয়েছি, এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে? আমার ভোটের ফলাফল যে কেড়ে নেওয়া হলো, এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে?”

এর বাইরেও হিরো আলমের কিছু বক্তব্য নিয়ে নতুন করে আলোচনা চলছে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে।

বিশ্লেষকরা যা বলছেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিন বলছেন রাজনৈতিক নেতারা এতোদিন প্রতিপক্ষকে হেয় ও অসম্মান করে কথা বলতেন, কিন্তু এবার তাদের যৌথ লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে একজন সাধারণ নাগরিক।

“সব জায়গাতেই হিরো আলমকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়, কারণ তিনি অভিজাত নন। এ কারণেই তাকে নিয়ে কটাক্ষ করেছেন দুই নেতাও। তারা তার অধিকারকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। উনারা ধরেই নিয়েছেন যে সংসদ বা নির্বাচন সবার জন্য নয়। এটা খুব দু:খজনক।”

আর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিতি সানজানা বলছেন বাংলাদেশের সংবিধানে এমপি পদে নির্বাচনের প্রাথমিক শর্ত হলো বয়স পঁচিশ বছর হতে হবে আর বাংলাদেশের নাগরিক হবে। এগুলোসহ অন্য আনুষঙ্গিক শর্ত পূরণ করলে যে কেউ নির্বাচন করতে পারে।

“তিনি কারও ক্ষতি করছেন না এবং নিরপরাধ ব্যক্তি। তাকে নিয়ে যে ধরনের অসম্মানজনক কথা বলা হচ্ছে তা দুঃখজনক। তাকে অসম্মান করার মাধ্যমে সংবিধানকেও অসম্মান করা হচ্ছে। মানুষকে অসম্মান করে কেউ সম্মানিত হন না। মানুষকে কটাক্ষ করে বা তাকে হেয় বা ছোটো যারা করছেন, প্রকারান্তরে তারাই ছোটো হয়েছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

আরেকজন বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলছেন হিরো আলমকে যা যা বলা হচ্ছে তা রাজনৈতিক দৈন্যতার প্রকাশ।

“এখন যা হচ্ছে সেটি সমাজবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার প্রকাশ মাত্র। নির্বাচনের অধিকার যে কোনো নাগরিকের। সংসদে অনেকেই গেছেন যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও জমি দখলের অভিযোগও আছে। কিন্তু হিরো আলমকে নিয়ে কথা বলা হচ্ছে কারণ নেতারা তাদের আধিপত্যকে অন্য কেউ চ্যালেঞ্জ করবে এটা মেনে নিতে পারেন না,” বলেন তিনি।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া