স্মৃতিকে যারা পরীমনি বানিয়েছেন, তাঁরা আজ কোথায়? প্রশ্ন কাজী হায়াতের
প্রকাশ: ৮ আগস্ট, ২০২১, ৭:৩৭ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
পরীমনির সৌন্দর্যই পরীমনির শত্রু। এ কারণেই বেশির ভাগ মানুষ তাঁর সান্নিধ্যে গেছেন, যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কাছে যাওয়া এসব মানুষই তাঁকে বিপথে ঠেলে দিয়েছেন। সবার কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, পিরোজপুরের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী স্মৃতি ওরফে পরীমনি ঢাকায় আসার আগে কখনো কি হুইস্কি, বিয়ার, শিভাস রিগ্যাল, রেড লেবেল, ভদকা—এসবের নাম শুনেছিলেন? কারা এসব নামের সঙ্গে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন? শুধু সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে যাঁরা তাঁর কাছে গিয়েছেন, তাঁরা তাঁকে সুন্দর পথের সন্ধান দেননি।
কাছে যাওয়া মানুষজনই পরীমনিকে বিপথে ঠেলে দিয়েছেনকাছে যাওয়া মানুষজনই পরীমনিকে বিপথে ঠেলে দিয়েছেন
আমি কোনো দিন পরীমনিকে কাছ থেকে দেখিনি। ইদানীং নানা মাধ্যমে তাঁকে দেখার সুযোগ হচ্ছে। এত সুন্দরী মেয়ে অনেক দিন বাংলা সিনেমায় আসেনি। আসলেই তিনি পরী। সেই সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে যাঁরা তাঁর কাছে ভিড়েছেন, তাঁরাই পরীমনিকে বিপথে নিয়ে গেছেন। তাঁরা পরীমনির সৌন্দর্যকে শিল্পসৃষ্টির কাজে লাগাননি। আজকের এই পরিণতির সেটাই হলো প্রধান কারণ।
পরীমনি ছিলেন অভিভাবকহীন। এই সুযোগও অনেকে নিয়েছেন। অনেকে হয়তো বলবেন, শুধু কি অন্যরাই বিপথে নেওয়ার জন্য দায়ী? তাঁরও কি বিচার-বিবেচনা থাকা উচিত ছিল না? আমি বলব, জোর গলায় বলব, যে বয়সে পরীমনি চলচ্চিত্রে এসেছেন, সে বয়সে বিচার-বিবেচনা সবার থাকে না। বয়সটাই আসলে এমন। যাঁরা তাঁর পাশে ছিলেন, তাঁদের দায়িত্ব ছিল সঠিকভাবে তাঁকে পরামর্শ দেওয়া।
নব্বই দশকের শেষ দিকের এক নায়িকার কথা বলি। নামটা নাহয় গোপনই রাখলাম। ওই নায়িকার মা একদিন আমার হাত ধরে কেঁদে বলেছিলেন, ‘হায়াৎ ভাই, মেয়েটাকে বাঁচান।’ বললাম, কেন? কী হয়েছে? তিনি বললেন, ও নেশায় আসক্ত হয়ে গেছে। আমি বলছিলাম, কীভাবে হলো? নায়িকার মা বললেন, ‘আমি আপনার সিনেমায় এক্সট্রার পার্ট করেছি। এক্সট্রা মেয়ে হয়ে আমার স্বপ্ন ছিল, আমার মেয়েটাকে আপনাদের এখানে দিলে মেয়েটা আমার ভালো থাকবে এবং মেয়েটাকে আপনারা কাজে লাগাবেন। কিন্তু আপনারা মেয়েটাকে নষ্ট বানিয়ে দিলেন। মেয়েটাকে নেশাগ্রস্ত করে দিলেন। এটা আপনারাই করলেন।’
স্মৃতিকে যারা এ রকম পরীমনি বানিয়েছেন তাঁদের নাম তো কোথাও শোনা যাচ্ছে না।স্মৃতিকে যারা এ রকম পরীমনি বানিয়েছেন তাঁদের নাম তো কোথাও শোনা যাচ্ছে না।
আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি। শুধু শুনেছি আর দায়ভার নিয়েছি।
ওই মা তো তাঁর মেয়েকে গড়ে তুলতে সিনেমার মানুষদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর চাওয়া ছিল, মেয়েটাকে সিনেমার মানুষেরা যেন ভালোভাবে কাজে লাগায়। কিন্তু কে তাঁর সামনে ইয়াবা ধরল? কে? কে মদের বোতল এনে দিল? রাতের পার্টিতে কে বা কারা নিয়ে গেল? এই করেই তো একটা সম্ভাবনাময় মেয়েকে বিপথে ঠেলে দেওয়া হয়।
গ্রামের সহজ-সরল সেই স্মৃতিকে কারা এ রকম পরীমনি বানিয়েছেন? যাঁরা করেছেন, তাঁরা আজ কোথায়? তাঁদের নাম তো কোথাও শোনা যাচ্ছে না। তাঁদের তো হাত বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে না পুলিশ!