যশোর ব্যুরো : যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাগ্নের জন্য ভোট চাইলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি। তার ভাগ্না গৌতম চক্রবর্তী ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী। শনিবার বেলা ১১টার দিকে যশোর সার্কিট হাউজে মণিরামপুর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে ভাগ্নের পক্ষে ভোট চান তিনি। মন্ত্রী চেয়ারম্যানদের সার্কিট হাউসে ডেকে আনেন। যা নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘন । এ বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শহিদুল ইসলাম মিলন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসরকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এডিবি উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে কিছুটা দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেটা নিয়ে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে বসেছিলাম। ওখানে নির্বাচন নিয়ে কোন কথা হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আরেক প্রার্থী অভিযোগ করেছে।’
সদস্য প্রার্থী শহিদুল ইসলাম অভিযোগে বলেছেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য পদে আমার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী গৌতম চক্রবর্ত্তী। তার আপন মামা স্বপন ভট্টাচার্য্য যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও পল্লী উন্নয়ন-সমবায় প্রতিমন্ত্রী। জেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধির ২২ নম্বর ধারা অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু বিধি লঙ্ঘন করে আমার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী গৌতম চক্রবর্ত্তীর পক্ষে শনিবার বেলা ১১ টার দিকে যশোর সার্কিট হাউজে উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যানদের ডেকে তার (প্রতিমন্ত্রী) আপন ভাগ্নে গৌতম চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে তার নির্বাচনী প্রচারণা চালান। সেখানে নির্বাচনী মিটিং করে ইউপি চেয়ারম্যানদের বিভিন্ন লোভ লালসা দেখিয়ে তার ভাগ্নে গৌতম চক্রবর্তীকে বিজয়ী করতে নিজ নিজ ইউপি সদস্যদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। সার্কিট হাউজে নির্বাচনী প্রচারণার সভায় ভিডিও ফুটেজ সার্কিট হাউজের সিসি টিভির ফুটেজ তদন্ত করলে সত্যতা প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধির ২০ নম্বর ধারা অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। একই সাথে ধর্মীয় কোন প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনী প্রচারনা চালানো যাবে না। কিন্তু গত ৪ অক্টোবর মশিয়াহাটিসহ বিভিন্ন দুর্গাপূজার মন্ডপ, মন্দির পরিদর্শনকালে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কাছে তিনি তার ভাগ্নে গৌতম চক্রবর্তীর হয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। একই সঙ্গে বিজয়ী করার লক্ষ্যে কাজ করতে নির্দেশনা দেন। প্রতিমন্ত্রীর একের পর এক নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পথকে রুদ্ধ করেছে।
ভাগ্নের হয়ে যশোর সার্কিট হাউজে মণিরামপুর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই খবরে সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় প্রতিমন্ত্রীর পিএস কবির খান গণমাধ্যম কর্মীদের সার্কিট হাউজের সভাকক্ষে ঢুকতে বাধা দেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এটা কোন সরকারি প্রোগ্রাম না। এটা প্রতিমন্ত্রীর নিজস্ব প্রোগ্রাম। সভাকক্ষের বাইরে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাছিমা আক্তার জলির নেতৃত্বে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা অবস্থান নেন। তারাও বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের ভিতরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেন।
নির্বাচনী মতবিনিময় সভার একটি ছবি গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে রয়েছে। সেখানে সভাকক্ষের মঞ্চে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মণিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা ইউপির চেয়ারম্যান শামছুল হক মন্টু, ভোজগাতি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ও খেদাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম জিন্নাহকে বসে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়াও সভাকক্ষে উপজেলার আরো ৮ ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভা শুরু হওয়ার ঘন্টা দেড়েক পর অনুষ্ঠানে যোগদেন আওয়ামী লীগের মনোনীত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুজ্জামান পিকুল। তিনিও উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন। পরে সেখানে মধ্যাহ্নভোজে আয়োজন করা হয়।
যশোর জেলা পরিষদের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, সার্কিট হাউজে প্রতিমন্ত্রী মণিরামপুরের চেয়ারম্যানদের নিয়ে সভা করছেন এই খবর পেয়ে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। নিজের জন্য ভোটারদের কাছে ভোট চেয়েছি। তারা কি জন্য সভা করেছেন তা আমি বলতে পারবো না।
এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার আনিছুর রহমান জানান, সরকারি ডাকবাংলো বা সার্কিট হাউজে নির্বাচনী সভা ও সংসদ সদস্যের (এমপি) অংশগ্রহণ নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী। লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’