সাংবাদিক শামসুজ্জামানের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল দাবি ৩১ নাগরিকের
প্রকাশ: ৩০ মার্চ, ২০২৩, ১:৫৯ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে সাভারের আমবাগান এলাকার নিজ বাসা থেকে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দিবাগত ভোররাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে সাদা পোশাকের ব্যক্তিরা তুলে নিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ৩০ নাগরিক। তুলে নেওয়ার ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত শামসের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ সময় তার পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় আশুলিয়া থানায় যোগাযোগ করলেও তার সন্ধান পাননি। মূলত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের জেরে শামসকে শেষ রাতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
বুধবার (২৯ মার্চ) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে উদ্বিগ্ন নাগরিকরা বলেন, ওই প্রতিবেদনে দেশের বাজার পরিস্থিতি ও নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে একজন দিনমজুরের বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। এ ঘটনায় শামসকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে গণমাধ্যম সূত্রে আমরা জানতে পারি। আমরা এ ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। রাতের বেলায় পরোয়ানা ব্যতীত কাউকে আটক করা সভ্য দেশে কল্পনাতীত। স্বাধীনতার মাসে নাগরিকদের এভাবে হয়রানি করায় আমরা ব্যথিত।
তারা আরও বলেন, বিনা পরোয়ানায় শামসকে আটক করে তার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। সংবিধানের তৃতীয় ভাগের মৌলিক অধিকার অধ্যায়ের ৩৩ (১) অনুচ্ছেদে কারণ উল্লেখ না করে কাউকে আটকে রাখা যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ শামসকে আটকের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারেননি গণমাধ্যমকর্মীদের। দুপুরের পর গোলাম কিবরিয়া নামে যুবলীগের এক নেতার দায়ের করা মামলায় শামসকে আটক দেখানো হয়।
শামস ছাড়াও সম্প্রতি গণমাধ্যমকর্মীদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক ও হয়রানিরর তথ্য আমাদের নজরে এসেছে। দিন দিন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত নিরাপত্তাও হুমকির মুখে। আমরা অবিলম্বে শামসুজ্জামান শামসকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে নিঃশর্ত মুক্তি এবং গণমানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানাই।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন
অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; আলোকচিত্রী শহিদুল আলম; অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, লেখক ও অর্থনীতিবিদ; রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী; অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, লেখক; অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট; সারা হোসেন, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট; সাকিব আলি, সাবেক কূটনীতিক ও সমন্বয়ক – পিপলস একটিভিস্ট কোয়ালিশন; অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাবি; অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাবি; সৈয়দ আবদাল আহমদ, লেখক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব; সাংবাদিক ইলিয়াস খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব; অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; ড. মারুফ মল্লিক, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক; মাইদুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; রোজীনা বেগম, মানবাধিকারকর্মী ও গবেষক; সায়দিয়া গুলরুখ, সাংবাদিক ও গবেষক; দিলশানা পারুল, লেখক ও এক্টিভিস্ট; শওকত হোসেন, কবি ও লেখক; ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, প্রকৌশলী ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক লেখক; মোশাহিদা সুলতানা ঋতু, লেখক ও সহযোগী অধ্যাপক, এআইএস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সালাহ উদ্দিন শুভ্র, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক; রবিউল করিম মৃদুল, লেখক ও সাহিত্যিক; জাকারিয়া পলাশ, লেখক ও গবেষক; ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি, নারী সংগঠক ও মানবাধিকার কর্মী; এহসান মাহমুদ, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক; আরিফুল ইসলাম আদীব, সংগঠক ও এক্টিভিস্ট; সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান কান্ট্রি স্পেশালিস্ট, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউএসএ।