সাংবাদিক নোমানীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে সব অভিযোগ প্রত্যাহার দাবি সিপিজের
প্রকাশ: ২৪ মার্চ, ২০২৩, ১:১৭ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
মানবজমিন ডেস্ক : বরিশালের সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানীর বিরুদ্ধে অভিলম্বে সব অভিযোগ প্রত্যাহার দাবি জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। এ বিষয়ে বুধবার দেয়া এক বিবৃতিতে প্রতিশোধ নেয়ার আতঙ্কমুক্ত পরিবেশে তাকে সাংবাদিকতা করতে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বেসরকারি মালিকানাধীন দৈনিক শাহনামা পত্রিকার প্রধান বার্তা সম্পাদক নোমানী। একই সঙ্গে তিনি বরিশাল খবর নামে সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইটের সম্পাদকও। ২০২০ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি ধারার অধীনে তিনি ও অন্য দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা ফোনে সিপিজেকে তথ্য দিয়েছেন। সিপিজেও পর্যালোচনা করেছে চার্জশিট। অভিযোগে বলা হয়েছে, গোপনে স্থানীয় একজন মেয়র এবং তার পরিবারের ভিডিও রেকর্ড করেছেন নোমানী ও তার দুই বন্ধু। সিপিজের কাছে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন সাংবাদিক নোমানী।
সিপিজের এশিয়া প্রোগ্রাম সমন্বয়ক বেহ লিহ ই বলেন, কোনো রকম দৃঢ় তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই কয়েক বছর আগের একটি মামলায় বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি উদ্ভট।
নোমানীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে এসব অভিযোগ প্রত্যাহার করতে হবে। বন্ধ করতে হবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে সাংবাদিকদের হয়রানি। সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠ রুদ্ধ করতে বার বার এই আইন ব্যবহার করা হচ্ছে।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, নোমানী ও তার বন্ধুরা অনুমোদনহীন বিষয়ে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করেছেন। অবৈধ উপায়ে তারা এসব বিষয়ে ডাটা নিজেদের কাছে রেখেছেন অথবা হাত বদল করেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন কর্মকর্তা মান্নার অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বরে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এই মামলায় নোমানীকে ১৭টি দিন আটক রাখা হয়। মান্না তার অভিযোগে বলেন, বরিশালের মেয়র ও বরিশাল আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারি সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, তার স্ত্রী ও সন্তানদের বিষয়ে গোপনে ভিডিও ধারণ করেছেন সাংবাদিক নোমানী ও তার বন্ধুরা।
আনুষ্ঠানিভাবে ২০২০ সালের জুলাইয়ে নোমানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে নোমানীকে কিছুই জানানো হয়নি।নোমানী বলেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে অন্তর্বর্তী জামিন আবেদন করেন তিনি। এ সময়ই তাকে অভিযোগ সম্পর্কে বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনালের একজন কেরানি অবহিত করেন। ২০২১ সালের ২৫শে জানুয়ারি ঢাকার সিআইডি ফরেনসিক রিপোর্টে বলে, বরিশালের ওই মেয়রের ভিডিও ধারণ করতে নোমানী তার ফোন ব্যবহার করেছেন কিনা, তারা তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়নি। এই ফরেনসিক রিপোর্ট পর্যালোচনা করেছে সিপিজেও। সিআইডির ওই রিপোর্টের উল্লেখ করে জানুয়ারিতে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন নোমানী। তিনি বলেন, সেই আবেদনের ওপর শুনানি হবে ৪ঠা এপ্রিল।
সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানী এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ঘটনার রাতে তিনি এবং তার বন্ধুরা মেয়র আব্দুল্লাহকে অভিনন্দন জানান। কিন্তু মেয়র ও তার সহযোগীরা এ সময় সাংবাদিকদের ফোন কেড়ে নেন। তাদেরকে বেদম প্রহার করেন। শহরে বন্যা সমস্যা সমাধানে গৃহীত পদক্ষেপের ঘাটতির বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশন নিয়ে রিপোর্ট করেছিলেন নোমানী। এর প্রতিশোধ নিতে তাকে কয়েক মিনিট একটি নদীতে চুবায় তারা।
উল্টো চার্জশিটে যে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে তাতে অভিযুক্ত হলে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত জেল এবং ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে অভিযুক্তদের। মান্না এবং আব্দুল্লাহর সঙ্গে ম্যাসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে যোগাযোগ করে সিপিজে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইমেইল ব্যবহার করে। কিন্তু কোনো পক্ষ থেকেই কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে কোতোয়ালি পুলিশ স্টেশনের ওসি আনোয়ার হোসেন এবং ঢাকা পুলিশের একজন মুখপাত্র রয় নিয়তির সঙ্গেও যোগাযোগ করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সাংবাদিকদের কাজের প্রতিশোধ নিতে তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে বার বার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহারের বিষয়টি প্রামাণ্য আকারে ধারণ করেছে সিপিজে। একই সঙ্গে তারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ডের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংশোধন করা না হলে এই আইনকে বাতিল করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।