বর্তমান সময়ে অনলাইন শপিং করেন কিন্তু ‘রাফিজা’স ক্লোজেট’- এর নাম শোনেননি, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া হয়তো কিছুটা দুষ্কর। রাফিজা সুলতানা তার অনলাইন পেইজ ‘রাফিজা’স ক্লোজেট’ এর সেরা কালেকশনগুলো দিয়ে পৌঁছে গেছেন ফ্যাশন সচেতন নারীদের কাছে, হয়ে উঠেছেন ফ্যাশন জগতের অন্যতম নির্ভরতার প্রতীক।
নারায়ণগঞ্জে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া রাফিজা সুলতানার কাছে রাফিজা’স ক্লোজেট নিয়ে কাজ করার শুরুর গল্পটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছোটোবেলা থেকেই নিজের পোশাক নিজে ডিজাইন করতে পছন্দ করতাম। আর বিয়ের পর বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে আমার হাজবেন্ড তৈয়বুল ইসলাম সেলিমকে নিজের নকশা করা পাঞ্জাবি উপহার দিতাম। তিনি এই নকশাগুলো খুব পছন্দ করতেন এবং আমাকে উৎসাহ দেন ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে কাজ করার জন্য। সেই থেকেই ২০১৯ সাল থেকে রাফিজা’স ক্লোজেট এর যাত্রা শুরু’।
একজন নারী হিসেবে উদ্যোক্তা হবার পথচলা কখনো মসৃণ ছিলনা রাফিজা সুলতানার। একজন মা, একজন স্ত্রী, একজন গৃহিণী হিসেবে তিনি নিজের সবটুকু দায়িত্ব পালন করে এরপর নিজের উদ্যোগ “রাফিজা’স ক্লোজেট”কে তিনি এগিয়ে নিয়ে চলেছেন অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিষ্ঠার মাধ্যমে। এ যাত্রায় পরিবার পাশে ছিল কি- না জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে রাফিজা বলেন, ‘উদ্যোক্তা হবার প্রথম অনুপ্রেরণা আমার হাজবেন্ডের কাছ থেকে পেলেও আমার পুরো পরিবার সবসময় আমার পাশে ছিল। একদম শুরুতে আমার আত্মীয় পরিজনরাই আমার পোশাকের নকশার প্রশংসা করেন এবং পরিচিত সবার মাঝে ছড়িয়ে দেন “রাফিজা’স ক্লোজেটকে”৷ তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা পুরো জার্নিতে এভাবে সাহায্য করার জন্য। ‘
অল্প সময়ের মধ্যেই রাফিজা’স ক্লোজেট দেশব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ন্যায্য দামে দেশীয় ঐতিহ্যের মিশেলে সেরা ট্রেন্ডি পোশাকের সমাহার রয়েছে রাফিজা’স ক্লোজেটে। ইদ, পুজা, নববর্ষ কিংবা যেকোনো উৎসবে অনলাইন কেনাকাটায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষের আস্হা এখন রাফিজার এই অনন্য উদ্যোগ।
অনলাইন কেনাকাটায় রাফিজা’স ক্লোজেটের সুনাম সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সাধ্যের মধ্যে সেরা ডিজাইনের পোশাকের সম্ভার রয়েছে এই পেইজে। কাস্টোমারদের যেকোনো সমস্যায় পেইজে যোগাযোগ করলে সাথে সাথেই উত্তর পাওয়া যায়৷ তাদের পেইজ ঘুরে পাওয়া গেছে অসংখ্য পজেটিভ রিভিউ। পুরুষ ও মহিলাদের আরামদায়ক ও কারুকাজ পূর্ণ পোশাক তৈরিই রাফিজা’স ক্লোসেটের মূল লক্ষ্য। এই প্রতিষ্ঠানটি একটি ডিজাইনের মাত্র ৬টি পোশাক বিক্রি করে থাকে। বিভিন্ন পোশাক প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে এই প্রতিষ্ঠানটি অংশগ্রহণ করা শুরু করে।
তাইতো রাফিজার অর্জনের ঝুলিতে রয়েছে ইয়ুথ বাংলা কালচারাল অ্যাওয়ার্ড ফর জুনিয়র অন্ট্রোপ্রেনার ২০২০, এসএম বিউটি প্রেজেন্টস বিউটি এন্ড ফ্যাশন অ্যাওয়ার্ড ২০২২ ফর জুনিয়র অন্ট্রোপ্রেনার ২০২২ এর তকমা। একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উদ্যোক্তা নারী হিসেবে মিররের প্রযোজনায় ‘বাংলাদেশ মহিলা অনুপ্রেরণামূলক পুরস্কার২০২২’লাভ করেন।
রাফিজা’স ক্লোজেট এর সত্বাধিকারী রাফিজা আরও একটি পরিচয় গড়ে নিয়েছেন নিজের। তিনি একজন ইন্টারন্যাশনাল সার্টিফাইড মেকআপ আর্টিস্ট। ব্রাইডাল পার্টি মেকআপ এর উপর তিনি একাধিক কোর্স করেছেন দেশ বিদেশ থেকে। কাজ করছেন একজন ফ্রিল্যান্সার আর্টিস্ট হিসেবে, তার এই কাজগুলো প্রকাশ করেন তিনি রাফিজা’স আর্টিস্ট্রি পেইজে৷ তিনি ‘MABBAB Mua ২০২১’ এ দ্বিতীয় রানার আপ নির্বাচিত হয়েছিলেন ‘রাফিজা’স আর্টিস্টির’ অভাবনীয় শৈল্পিকতার জন্য ।ব্রাজিলিয়ান মেক-আপ আর্টিস্ট মিশেলি পালমা এর কাছ থেকে সেরা মেক-আপ আর্টিস্ট ২০২১ এর সম্মাননাও গ্রহণ করেন তিনি। এছাড়াও সেরা উদীয়মান মেকআপ আর্টিস্ট ২০২১ এর খেতাব পেয়েছিলেন তিনি ম্যাজেস্টিক অ্যাফেয়ার থেকে। তিনি ‘জামির স্বপ্ন মেকওভার ওয়ার্কশপ ২০২১ বিচারক আসনে সম্মাননা পেয়েছেন।
রাফিজা মনে করেন, একজন নারীর স্বনির্ভর হওয়া ভীষণ জরুরি। তাইতো রাফিজা নিজেকে একজন ফ্রিলেন্সার মেকআপ আর্টিস্ট এবং ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। রাফিজা সুলতানার এই ভাবনাই তাকে আজকের অনন্যা করে তুলেছে। তার মেধা-মননের মূল্যায়ন দিয়ে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে তার স্বামী। আল্লাহর অশেষ রহমতে সকল বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে রাফিজা এখন সকল নারীর দৃষ্টান্ত। অল্প বয়সে বড় বড় অর্জন করলেও তিনি থেমে থাকার পাত্রী নন। ভবিষ্যতে এভাবেই তিনি আত্মসম্মান ও পরিশ্রমের সাথে কাজ করে যেতে চান।