বৃহস্পতিবার ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   বৃহস্পতিবার ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



সওজের সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর দুর্নীতি : মনির পাঠানের সম্পদ বেশির ভাগ কানাডায়
প্রকাশ: ২৯ আগস্ট, ২০২৩, ১১:২০ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

সওজের সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর দুর্নীতি : মনির পাঠানের সম্পদ বেশির ভাগ কানাডায়

 

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী একেএম মনির হোসেন পাঠানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের একজন কর্মকর্তার গোপন তদন্ত প্রতিবেদনে এই প্রকৌশলীর অর্জিত সম্পদের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলা হয়, তার বেশির ভাগ সম্পদই দেশের বাইরে তথা কানাডায় অবস্থিত। যা ইতোপূর্বে কমিশনের কোনো অনুসন্ধানে যাচাই করা হয়নি। তাই বিষয়টি প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সুপারিশ করে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের পরিচালকের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

 

প্রায় চার মাস তথ্যানুসন্ধানের পর দুদকের সহকারী পরিচালক তালুকদার মো. ইনতেজার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়টি প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সুপারিশ করেন। এর ভিত্তিতেই প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ অক্টোবর, ‘টাকার মেশিন সওজের প্রধান প্রকৌশলী, ‘ঘুসের অর্থে পুরো পরিবার ধনী’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরই তার বিরুদ্ধে গোপন অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন।

তথ্যানুসন্ধানকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদনে মতামত দিয়ে বলেন, ‘এর আগে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে একেএম মনির হোসেন পাঠানের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রকাশ্য অনুসন্ধান পরিসমাপ্ত হয়। যার নথি নং-০০০১.০০০০.০০১.০১.০৩৬.২০।

বর্ণিত নথির রেকর্ডপত্র পরিদর্শন করে দেখা যায়, অভিযোগের ভিত্তিতে মনির হোসেন পাঠান ও তার স্ত্রীর সম্পদ অনুসন্ধান করা হয়।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘গোপন তথ্যানুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যে প্রতীয়মান হয় যে, প্রদর্শিত সম্পদের বাইরেও অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও নির্ভরশীলদের নামে মূল্যবান সম্পদ রয়েছে।

এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, তার মেয়ের কানাডায় অবস্থান এবং সোর্স থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মনির হোসেন পাঠানের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায় তার বেশির ভাগ সম্পদই দেশের বাইরে তথা কানাডায় অবস্থিত। যা ইতোপূর্বে কমিশনের কোনো অনুসন্ধানে যাচাই করা হয়নি।’

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপন তথ্যানুসন্ধানে প্রাপ্ত সম্পদসহ মেয়ের কানাডায় পড়াশোনার খরচ, ছেলের নামে বিভিন্ন সম্পদ ও বিনিয়োগ এবং শ্বশুরবাড়ির ব্যবসায় বিনিয়োগসহ সোর্সের তথ্য অনুযায়ী কানাডার টরন্টোতে মনির হোসেনের সম্পদ অর্জনের বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আছে।

এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মনির হোসেন পাঠানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সুপারিশ করে তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মনির হোসেন পাঠান ২০২২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সওজের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন। তার স্ত্রী জেসমিন মনির একজন গৃহিণী। ছেলে মেহেদী মাহবুব হাসান ফাহিম নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে এখন একজন ব্যবসায়ী।

বড় মেয়ে রাজধানীর হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন এবং ছোট মেয়ে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনে তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।

প্রতিবেদনের এক স্থানে বলা হয়, ঢাকার ১১৬/এ, কাজী নজরুল ইসলাম সড়কে সীল ওয়েসিস অ্যাপার্টমেন্টে মনির হোসেন পাঠান ও তার ছেলে মেহেদী মাহবুব হাসান ফাহিমের নামে পৃথক ২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে ৮/বি ফ্ল্যাটে তিনি সপরিবারে বসবাস করেন। তৃতীয় ফ্ল্যাটটি তার স্ত্রীর বড় ভাই রইস আব্দুর রবের নামে বলে জানা যায়।

এ ছাড়া ২০২০ সালে মনির হোসেন নিজ, স্ত্রী, ছেলে ও বড় মেয়ের যৌথ নামে ঢাকার বাংলামোটরে ‘সেল রোজ এন’ বাণিজ্যিক ভবনের ১১ তলায় আনুমানিক ২ কোটি ৫ লাখ টাকায় কমার্শিয়াল স্পেস কিনেছেন মর্মে গোপন তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়।

এ ছাড়া কুমিল্লার ময়নামতি মেডিকেল কলেজ ও ঢাকার নভোমেড নামের প্রতিষ্ঠানে তার ছেলে মেহেদী মাহবুব হাসান ফাহিমের নামে বিনিয়োগ থাকার অভিযোগ সত্য বলে জানা যায়।

সেল রোজ এন ডেল বাণিজ্যিক ভবনে ক্রয় করা কমার্শিয়াল স্পেস তার ছেলে মেহেদী মাহবুব হাসান ফাহিমের নভোমেড প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়েছেন। ঢাকা মেট্রো গ-৩৩-৫৮৩৯ গাড়িটিও ছেলে মেহেদী মাহবুব হাসান ফাহিমের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। রাজধানীর দক্ষিণখান মৌজায় থাকা ৬৪ শতাংশ জমি ১২৪ জন অংশীদার ক্রয় করেন। যার একজন অংশীদার একেএম মনির হোসেন পাঠানের ছেলে।

তিনি সম্প্রতি পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসায় নিয়োজিত হয়েছেন। তার নিজস্ব আয় না থাকায় ব্যবসার প্রাথমিক বিনিয়োগ বাবা মনির পাঠানেরই, তা স্পষ্ট হয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানের বরাতে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মনির হোসেনের ছোট মেয়ে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরোন্টোতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনে তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। সেখানে তার মেয়ে বছরে ২৫ হাজার কানাডিয়ান ডলার স্কলারশিপ পান বলে জানা যায়।

তবে টিউশন ফি, আবাসিক ও অন্যান্য খরচ প্রায় ৮০-৯০ হাজার কানাডিয়ান ডলার। অর্থাৎ বিপুল পরিমাণ অর্থ মনির হোসেন পাঠানকে দেশ থেকে পাঠাতে হয় মর্মে প্রতীয়মান হয়। এই অর্থ বৈধ বা অবৈধ মাধ্যমে পাঠান কিনা তা প্রকাশ্য অনুসন্ধানে জানা যেতে পারে।

কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে অবস্থিত মুন হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা মনির হোসেন পাঠানের শ্বশুর ডা. আব্দুর রব। বর্তমানে এটি তার স্ত্রীর বড় ভাই ডা. আব্দুল বাকী আনিস ও রইস আব্দুর রব পরিচালনা করেন।

তবে হাসপাতালের ভবন নির্মাণে মনির হোসেন বিনিয়োগ করেছেন কিনা তা গোপন তথ্যানুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও বিষয়টি প্রকাশ্য অনুসন্ধানের দাবি রাখে। কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে বিআরএস ২২২ দাগে তিনিসহ স্ত্রী জেসমিন মনিরের নামে জমি রয়েছে।

কুমিল্লা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কুমিল্লা, চাঁদপুর রুটে চলাচলরত এশিয়ালাইন, প্রাইম বাস সার্ভিস ও রিল্যাক্স পরিবহণে শ্বশুরবাড়ির মাধ্যমে বিনিয়োগের অভিযোগ সম্পর্কে বলা হয়, এশিয়া লাইন বাস সার্ভিসের মালিকানা তার শ্বশুরবাড়ির।

মুন পেট্রলপাম্প, নিমসার পেট্রলপাম্পের মালিকানাও তার শ্বশুরবাড়ির। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে তিনি বিনিয়োগ করেছেন কিনা তা গোপন তথ্যানুসন্ধানে যাচাই করা সম্ভব না হলেও প্রকাশ্য অনুসন্ধানের দাবি রাখে।

মনির হোসেন পাঠানের ছোট ভাই মোমিনুল হক পাঠানের নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স প্রদান করে বড় বড় কাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেডের অথরাইজড প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে মোমিনুল হক পাঠান চাঁদপুর সওজের বেশকিছু কাজ করেন। তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে লেনদেনের বিষয়ে ব্যাংকের নাম ও শাখা উল্লেখ থাকায় প্রকাশ্য অনুসন্ধান করলে টাকার উৎস ও গতিবিধি সম্পর্কে সুফল পাওয়া যেতে পারে।

দুদকের চলমান অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মনির হোসেন পাঠান  বলেন, ‘কানাডায় কি আছে না আছে সেটা তো আমি জানি। দুদক অনুসন্ধান করছে করুক। আমি কানাডায় যা পাঠিয়েছি তার বৈধ ডকুমেন্ট আমার হাতে আছে। জেনুইনলি পাঠিয়েছি।

তিনি বলেন, আমিও কানাডায় থাকব না, আমার মেয়েও কানাডায় থাকবে না। একসময় দেশে চলে আসবে।’




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া