শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের জরাজীর্ণ হলে শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস
প্রকাশ: ২০ আগস্ট, ২০২২, ১১:১৭ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
শামীম আহমেদ ॥ স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, কংক্রিট আর পলেস্তরা খসে পরছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ছাদ চুঁইয়ে পরছে পানি। ছাদের সিলিংয়ে সেই পানি শুকিয়ে যাওয়ার কালো ছোপ ছোপ দাগ পরেছে। সামনের বাহিরের অংশ দেখতে বেশ চাকচিক্য মনে হলেও দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না করায় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরেছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের (শেবামেক) শিক্ষার্থীদের বসবাসের আবাসিক হলগুলো। সেই জরাজীর্ণ ভবনে দুর্ঘটনার আশঙ্কার মধ্যেই বাস করছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিনিয়ত ভবনগুলোর ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তরা খসে পরায় আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন শিক্ষার্থীরা। যেকারণে বাধ্য হয়ে বেশ কয়েকজন ছাত্র কলেজের ফরেনসিক বিভাগের আধুনিক মরচুয়ারী ভবনে উঠেছেন।
নিরাপদ হলের দাবী জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, আজ-কাল করে বছরের পর বছর ধরে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নতুন হল নির্মাণের আশ্বাস দেয়া সত্বেও দৃশ্যমান কোনো কিছুই হয়নি। ছাত্রীদের জন্য নতুন একটি হল নির্মাণ করা হলেও ব্যবহারে সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পরেছে সামনের পুরাতন বড় হলটি। পাশাপাশি সময়ের সাথে সাথে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবহার উপযোগী-অনুপযোগী সবমিলিয়ে হলগুলোতে যে জায়গা রয়েছে তাতেও জায়গার সংকুলান হচ্ছেনা।
কলেজের হাবিবুর রহমান ছাত্রাবাসের বাসিন্দা আজিম হোসেন বলেন, ২০২০ সালে আমাদের হলের তিন তলা ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ সংক্রান্ত সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিও ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় সেখানে গত চারমাস আগ পর্যন্ত অনেকেই থেকেছেন। আর এখন এমন অবস্থা গোটা তিন তলাতে কেউ থাকতেই পারছে না, আর দোতলাও চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরেছে। ভবনের অনেক ভিমে বড় বড় ফাঁটল ধরেছে। সেই সাথে ছাদের পলেস্তরা খসে জং ধরা রড বেরিয়ে এসেছে।
শিক্ষার্থী এহসান হোসেন ও তাহসিন আহমেদ বলেন, বাস্তবে শুধু হাবিবুর রহমান ছাত্রাবাসই নয়; জামিলুর রহমান ও মঈনুল হায়দার ছাত্রাবাসসহ মেয়েদের পুরাতন দুটি ছাত্রবাসেরও করুন অবস্থা। যেসব কক্ষ ও ভবন ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানকার ছাত্রদের আবাসন দিতে গিয়ে চারজনের কক্ষে আটজনকে থাকতে হচ্ছে।
ছাত্রী হোস্টেলের বাসিন্দা লিসা রহমান বলেন, আমাদের পুরাতন বড় হলটি বহু আগেই বসবাসের অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়েছে। জায়গা সংকটে একসময় ছাত্রীরা মরচুয়ারী ভবনে থাকতেন। আর বর্তমান ছাত্রাবাসে জায়গা সংকটে সেখানে ছাত্ররা থাকতে শুরু করেছেন। আবার কিছুদিন পর আমাদেরও অন্য জায়গায় গিয়ে থাকতে হবে। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নতুন হল জরুরি হয়ে পরেছে।
শেবামেকের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের জন্য তিনটি ও ছাত্রীদের জন্য তিনটি হল রয়েছে। যেখানে ১৪শ’ ২৮টি সিট থাকলেও, হাবিবুর রহমান ছাত্রবাসের তৃতীয় তলাসহ গোটা একটি ছাত্রীনিবাস ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় বর্তমানে পাঁচটি হলে সিটের সংখ্যা এক হাজার ২৮টি।
ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় হাবিবুর রহমান ছাত্রবাসের তৃতীয় তলা ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা করায় ১৯টি রুমে ১৩৬টি সিটের বরাদ্দ কমেছে এবং এক নম্বর ছাত্রী নিবাস ভবনটিতে ৮০টি রুমে কমেছে ৩২০টি সিট। আর এ সিটের শিক্ষার্থীদের সামাল দিতে এখন কলেজ কর্তৃৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চারজনের কক্ষে ছয় থেকে আটজনকেও সিট দিতে হচ্ছে। এরপরেও সিট না পাওয়া শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিজ ব্যবস্থায় বাহিরে থাকতে হচ্ছে।
সময়ের সাথে সাথে হলগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পরার কথা স্বীকার করে কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও মহিলা ইন্টার্ন ডক্টরস হোস্টেলের দায়িত্বে থাকা ডাঃ শিরিন সাবিহা তন্নী বলেন, ওই হোস্টেলটিও পুরাতন। তাই বর্তমানে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ হল প্রয়োজন।
শেবামেকের অধ্যক্ষ ডাঃ মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, আমাদের মেডিক্যাল কলেজের বয়স ৫৪ বছর। তাই পুরনো আবাসিক হলগুলোর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দেশের পুরাতন আটটি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সরকারের বহুতল হোস্টেল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। শুনেছি এ সংক্রান্ত প্রস্তাব একনেকে পাঠানো হয়েছে। সেখানে পাস হলে আশা করছি খুব দ্রুত নতুন আবাসিক ভবন নির্মানের কাজ শুরু করা হবে।