পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে। পদ্মা পারাপারের জন্য কয়েকটি ট্রলার চলছে, স্পিডবোটের সংখ্যাও হাতে গোনা। শিমুলিয়া ছিল দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। সারাক্ষণ মানুষের আনাগোনা আর কোলাহলে পূর্ণ থাকত ঘাট এলাকা। তবে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানেই বদলে গেছে সে চিত্র। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত খুলে যাওয়ায় শিমুলিয়া ঘাট হারিয়েছে তার জৌলুশ। পদ্মা পাড়ি দিতে খুব কম মানুষই যাচ্ছেন ওই ঘাটে। এ কারণে ঘাটকেন্দ্রিক সব ধরনের ব্যবসার ওপর পড়েছে এর প্রভাব।
কয়েক দিন আগেও যেখানে শত শত দোকানে খাবারের পসরা সাজিয়ে বসে থাকতেন দোকানিরা, সেখানে এখন ক্রেতার অভাব। অনেকটাই সুনসান নীরবতা। বিক্রি না থাকায় অনেকেই দোকান বন্ধ করে রেখেছেন।
গতকাল বুধবার বিকেলে শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশপথে খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোয় ক্রেতা নেই, নেই আগের মতো হাঁকডাকও। কয়েক দিন আগেও হোটেলগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে কর্মীরা পদ্মার ইলিশ খেতে ডাকাডাকি করতেন, সেখানে এখন নীরবতা। কিছু সময় পরপর দু–একজন করে ক্রেতা আসছেন। সবচেয়ে কম ক্রেতা লঞ্চ ও স্পিডবোটঘাটের প্রবেশপথের পাশের ২০টি রেস্তোরাঁয়। অন্তত ১৫টি রেস্তোরাঁ একেবারেই ফাঁকা ছিল। ক্রেতার অপেক্ষায় মন খারাপ করে বসে ছিলেন হোটেলের মালিকেরা। অলস সময় পার করতে দেখা যায় কর্মীদের।
নিউ মায়ের দোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মো. শাহিন শেখ বলেন, ‘আমরা আশায় ছিলাম পদ্মা সেতু হওয়ার পর আমাদের শিমুলিয়া ঘাটে দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে। ব্যবসা বাড়বে। কিন্তু চার দিনের ব্যবধানে সব পাল্টে গেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বিক্রি করতাম, সেখানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাত্র ১০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি।’
স্বপ্ন হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক আবদুল মোতালেব মোল্লা বলেন, ‘আগে দিন-রাত আমাদের হোটেলে ক্রেতারা আসত। ২৪ ঘণ্টাই ধুম বেচাবিক্রি চলত। কিন্তু এখন ঘাট ফাঁকা, মানুষ নেই, তাই বিক্রিও নেই।’
গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাত্র এক হাজার টাকা বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন বিসমিল্লাহ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক সুমন হাসান। তিনি বলেন, হোটেলের শাটার খুললেই ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিক খরচসহ সব মিলিয়ে দৈনিক ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ বিক্রি নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।
একই অবস্থা দেখা গেছে শিমুলিয়া ঘাটের নিরিবিলি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, মোল্লা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, আলিফ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টসহ ঘাটের ৩৫ থেকে ৪০টি খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁয়।
শিমুলিয়া ঘাটের সড়কে ছিল ১০০টির মতো ফলের দোকান। গতকাল বিকেলে মাত্র দুটি দোকান খোলা ছিল। এর মধ্যে একটির মালিক রিয়াদ হোসেন বলেন, প্রতিদিন একেকটি ফলের দোকানে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার ফল বিক্রি হতো। সেখানে গত মঙ্গলবার তিনি ১ হাজার ৬০০ ও গতকাল ১ হাজার ৫০০ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। ফলের অন্য দোকানগুলো দেখিয়ে তিনি বলেন, বিক্রি না থাকায় আশপাশের দোকানিরা দোকান বন্ধ রেখেছেন। ফল কাঁচা পণ্য। বিক্রি না থাকলে নষ্ট হয়ে যাবে।
ঘাট এলাকার ব্যবসায়ীরা বলেন, এ ঘাটে খাবার হোটেল, রেস্তোরাঁ, চা-কফি, বিস্কুট, মুদি, ফল, হকারসহ বিভিন্ন শ্রেণির কয়েক হাজার মানুষের ব্যবসা ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নিয়ে ঘাটের আশপাশে পর্যটন এলাকা গড়ে তোলা গেলে ঘাটে লোকজনের আনাগোনা বাড়বে। তাহলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন এ ব্যবসায়ীরা।