শুক্রবার ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   শুক্রবার ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



রোজিনা ইসলাম: অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট কি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?
প্রকাশ: ১৮ মে, ২০২১, ১০:৪৩ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

রোজিনা ইসলাম: অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট কি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

  • আকবর হোসেন
  • বিবিসি বাংলা, ঢাকা
সংবাদপত্র

সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য নিয়ে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ থাকে।

বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় সংবাদপত্র দৈনিক প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা দায়ের করার পর তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন।

এর আগে সোমবার সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কক্ষে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে প্রায় পাঁচ ঘন্টা আটকে রেখে শারীরিকভাবে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তিনি সরকারের গোপন নথির ছবি তুলেছেন এবং সেগুলো সরিয়ে নিতে চেয়েছেন।

আইনে কী আছে?

অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট মূলত একটি ঔপনিবেশিক আইন। ব্রিটিশ শাসনামলে এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল।

আঠারোশ নিরানব্বই সাল থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত লর্ড কার্জন যখন ভারতবর্ষের ভাইসরয় ছিলেন তখন এই আইন প্রণয়ন করা হয়।

বেশ কয়েক-দফা সংশোধিত হয়ে ১৯২৩ সালে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট জারি করা হয়।

এই আইনটি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে , এর দু’টি দিক রয়েছে। একটি হচ্ছে গুপ্তচরবৃত্তি এবং অপরটি হচ্ছে সরকারের গোপন নথি ফাঁস।

তবে এই আইনের কোথাও উল্লেখ করা নেই যে সরকারি ‘গোপন’ নথি সংবাদপত্রে প্রকাশ করা যাবে না।

আইনে বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং স্বার্থের পরিপন্থী কোন উদ্দেশ্য নিয়ে গুপ্তচর বৃত্তি করে তাহলে তার শাস্তি হবে। অর্থাৎ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ কোন এলাকায় গমন করে, পরিদর্শন করে বা ভেতরে প্রবেশ করে তাহলে শাস্তি হবে।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম

বাংলাদেশের একজন সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বিবিসি বাংলাকে বলেন, সচিবালয় কোন নিষিদ্ধ জায়গা নয়। সেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারের জন্য সরকার পরিচয়পত্র দিয়েছে এবং সরকার জানে যে সেখানে সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহের জন্য যাবে।

অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুযায়ী গোপন নথি বলতে বোঝানো হয়েছে অফিসিয়াল কোড, পাসওয়ার্ড, স্কেচ, নকশা, প্ল্যান, বিভিন্ন ধরণের নথি। শত্রুপক্ষের ব্যবহারের জন্য কোন ব্যক্তি যদি এগুলো সংগ্রহ বা রেকর্ড করে তাহলে এটি অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট মূলত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত। এই আইনের বিশেষ কিছু দিক হচ্ছে নিম্নরূপ।

  • প্রহরারত পুলিশ বা সেনাবাহিনী সদস্যদে কাজে হস্তক্ষেপ করা যাবে না
  • কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রের পরিপন্থী উদ্দেশ্যে সরকারি দলিল নিজের অধিকারে রাখতে পারবে না।
  • বিদেশি এজেন্টের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবে না
  • মিথ্যা পরিচয় দিয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী কিংবা অন্যান্য বাহিনীর পোশাক পরতে পারবে না।
  • নিরাপত্তার স্বার্থে সরকার কোন এলাকাকে সংরক্ষিত বা নিষিদ্ধ করলে সে এলাকার ছবি, স্কেচ ,নোট বা মডেল আঁকতে পারবে না।

এই আইনে বলা হয়েছে তথ্য পাচার এবং তথ্য গ্রহণকারী – উভয়পক্ষ এর ফলে দণ্ডিত হতে পারেন।

এই আইনের অধীনে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড বা ১৪ বছর পর্যন্ত সাজা এবং সর্বনিম্ন তিন বছরের সাজার বিধান রয়েছে।

সমাবেশ
ছবির ক্যাপশান,সাংবাদিকদের অভিযোগ, সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার জন্য বিভিন্ন সময় নানা আইন করেছে সরকার।

প্রায় ১০০ বছর আগে ব্রিটিশ আমলে যখন এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল, তখনকার সামাজিক বাস্তবতা এবং বর্তমান সামাজিক বাস্তবতা এক নয়।

আইনজীবী এবং সাংবাদিকরা বলছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে কোন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগের নজির নেই।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেন, ব্রিটিশদের প্রশাসনে ভারতবর্ষের অনেকে কাজ করতো। তাদের প্রতি ব্রিটিশদের এক ধরণের অবিশ্বাস ছিল।

“তারা যাতে প্রশাসনের কোন গোপন নথি বা তথ্য পাচার বা প্রকাশ করতে না পারে সেজন্য অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়েছিল। প্রশাসনের গোপনীয়তা রক্ষা করা ছিল এই আইনের উদ্দেশ্য।”

মি. মোরশেদ বলেন, “গোপনভাবে তথ্য সংগ্রহ করা তো সাংবাদিকতার অধিকার। এটা ছাড়া তো সাংবাদিকতা চলে না। অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট সাংবাদিকতা ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।”

অন্য দেশের উদাহরণ

ভারতে ২০১৮ সালে মাধুরী গুপ্তা নামে একজন কূটনীতিক অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতায় দণ্ডিত হয়েছিলেন।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল, ইসলামাবাদে পাকিস্তান হাই কমিশনে কর্মরত অবস্থায় পাকিস্তানী গুপ্তচর আইএসআইকে তথ্য পাচার করেছিলেন। এই মামলায় তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

গত ২০ বছরে ভারতে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতায় কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হলেও আদালতে সেগুলো খারিজ হয়ে যায়।

এর মধ্যে অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে , শান্তনু সাইকিয়া। ভারতের মন্ত্রীসভার একটি গোপন নথি ফাঁস হয়ে যাবার ভিত্তিতে মি. সাইকিয়া একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন।

তার বিরুদ্ধে তখন অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়।

সেই মামলা থেকে মি. সাইকিয়াকে অব্যাহতি দিয়ে দিল্লী হাইকোর্ট বলেছিল, কোন নথি ফাঁস হলে সেটিকে ‘গোপন’ আখ্যা দিয়ে একজন সাংবাদিককে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতায় দোষী করা যায় না।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া