রাজাপুরে চলছে নদী ও খাল দখলের মহোৎসব : প্রশাসনের রহস্যজনক ভুমিকা
প্রকাশ: ২৭ জুন, ২০২০, ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
রহিম রেজাঃ
ঝালকাঠির রাজাপুর শহরের জমির দাম আকাশ চুম্বি হওয়ায় ভুমিদস্যুরা হাকডাক দিয়ে দিন দিন খালে দখলে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। উপজেলার এক সময়ের খরস্রোত নদী জাঙ্গালিয়ার শাখা নদীটি ভুমিদস্যুদের কারণে আজ মরা খালে আবার কোথাও নালায় পরিণত হয়েছে। সেই খাল ও নালা নানা কৌশলে দখলে নিলেও ক্ষমতাসীন ও পয়সাওয়াদের ভয়ে সকলে চুপ থাকলেও সচেতন মহলের মধ্যে প্রশাসনের বিরুদ্ধে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। খাল দখলে ক্ষমতাসীন, পয়সাওয়া ও জনপ্রতিনিধিরা জড়িয়ে পড়ায় প্রশাসনও মুখ থুবড়ে রহস্যজনক ভুমিকায় আরও উৎসাহী হচ্ছে ভুমিদস্যুরা। এ সুযোগে ভুমিদস্যু মহলটি দিন দিন খাল দখল করে অবৈধভাবে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছে। প্রশাসনের সামনের নাকের ডগায় একের পর এক পাকা স্থাপনা নির্মাণ ও খাল ভরাটের ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো হলেও প্রশাসনের রসহ্যজনক ভুমিকায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি সাংবাদিকরা ঘুরে দেখেছেন, বাগড়ি বাজার এলাকা থেকে শুরু করে পশ্চিম দিকে রাজাপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যন্ত দু’পাড় ভুমিদস্যুরা গিলে যাচ্ছে, নানা কৌশলে পাকা স্থাপনা, খালের মধ্যে বাশ-খুটি ও পিলার পুতে দোকান উত্তোলন, ভরাট করে যাচ্ছে ভুমিদস্যুরা। অভিযোগ রয়েছে, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পেছনের খালের উপরে একাধিক দোকান দিয়ে ব্যবসা চলছে। এছাড়া সদরের বাজারের খালে ইট-সুড়কি ফেলে এবং কলেজ রোডের কালি মন্দির এলাকায় বালু ফেলে খাল ভরাট করে ফেলা হয়েছে, এমনকি বাজারের সিড়িও পুরোপুরি ডেকে ফেলা হলেও প্রশাসন অন্ধকারে। প্রশাসনের এমন ভুমিকায় শহরজুড়ে চলছে নানা মুখরোচক পয়সা-পাতি লেনদেনের অভিযোগ। আর এসব বিষয়ে লেখালেখি করতে গিয়ে সাংবাদিকদের চাপের মধ্যে পড়তে হচ্ছে প্রশাসন ও প্রভাবশালী ভুমিদস্যুদের। সদরের মাছ বাজার ব্রিজের উত্তর পার্শ্বে খালের মধ্যে নির্মাণাধীন পাকা ভবন নির্মাণ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ। বিভিন্ন স্থানে খালের মাঝ পর্যন্ত কালো পলিথিনে মুড়িয়ে আবার কাঠের ঘর নির্মাণ করে ভূমিদস্যুরা। এছাড়া বাজার থেকে বাগড়ি বাজার এবং বাজারের দক্ষিণ মাথা এলাকা পর্যন্ত খালের দু পাশে চলছে ভরাট ও পাকা স্থাপনা নির্মানের প্রতিযোগীতা। অভিযোগ উঠেছে, ভুমি অফিসকে ম্যানেজ করেই এসব কাজ করা হচ্ছে। উপজেলা সদর ঘুরে দেখা গেছে, লোকচক্ষু এড়ানোর জন্য খালের চর প্রথমে বেড়া দিয়ে আগলে রাখে তা ভরাট করে তারা পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে। বর্তমানে খালের চর বিক্রির হিড়িক চলছে। নগদ পয়সাওয়ালারা ভাল প্লেস দেখে খালের চর ক্রয় করছেন। তার পরে খালের মধ্যে শুরু করে বিভিন্ন ভবন নির্মাণ। স্বয়ং উপজেলা প্রশাসনও স্বীকার করে খাল দখলের বিষয়ে তাদের কাছেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, মধ্য বাজার এলাকা থেকে বয়ে যাওয়া ভারানি খালটি জেল খানার পেছনের এলাকা হয়ে টিএন্ডটি সড়কের মধ্য দিয়ে বাইপাস এলাকার ব্রীজ হয়ে তুলাতলার দিকে বয়ে গেছে। এ খালটি আজ দখলের কারনে মৃতপ্রায় এখালটি দিয়ে নৌকায় করে বাজার আসা, স্ব-মিল ও ধান মিলে ধান নেয়া, বাজারের মাল বহনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা এ খালটি ব্যবহার করতো। কিন্তু এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। জোয়ারের সময় সামান্য পানি থাকলেও ভাটায় খালে পানি থাকে না। এ কারনে শহরের কোথাও আগুন লাগলেও পানির সংকট দেখা দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে পানির উৎস পাওয়া যায় না। এছাড়া খালটি ও তার ছোট ছোট শাখা নালাগুলো ভরাট হওয়ায় বৃষ্টি হলেই এখালের আশপাশে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বিএনপি অফিস সংলগ্ন এলাকার খালটি ভরাট করে কাজ করার বিষয়টি চোখে পড়ার মত হলেও প্রশাসন নিরব। প্রশাসনকে স্থানীয়রা বিষয়টি জানালেও কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় লোকজন দ্রুত এ খালটি উদ্ধারের প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেছেন।