সোমবার ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   সোমবার ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



যে কারণে ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে’ সাংবাদিকের সাজার সুযোগ নেই
প্রকাশ: ১৯ মে, ২০২১, ৮:৫৩ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

যে কারণে ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে’ সাংবাদিকের সাজার সুযোগ নেই

প্রায় একশ’ বছরের পুরনো ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের কোনও সুযোগ নেই বলে মনে করছেন আইনজীবী ও বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ব্রিটিশদের শাসন কর্তৃত্ব ধরে রাখার প্রয়াসে সে সময়ে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের উদ্ভব হয়। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল উপমহাদেশের জনগণের থেকে ব্রিটিশদের সুরক্ষা প্রদান এবং প্রয়োজনে জনগণের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতা। তাদের দাবি, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট প্রণয়নকালে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার ধরন আজকের সময়ের মতো ছিল না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই আইনটি সাংবাদিকতার সঙ্গে যায় না।

১৯২৩ থেকে ২০২১

প্রায় শত বছর আগে ১৯২৩ সালে ব্রিটিশ শাসক অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট প্রণয়ন করে। এরপর ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার আগে উপমহাদেশ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়। মানচিত্রের ব্যবধানে ব্রিটিশ থেকে পূর্ব পাকিস্তান এবং অবশেষে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশ স্বাধীনের পর সংবিধান প্রণয়নের পাশাপাশি ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও ভারতীয় আমলের বেশ কিছু আইনকে সংশোধন করে দেশীয় আইনে রূপান্তরিত করা হয়। তবে অজ্ঞাত কারণে কোনও পরিবর্তন ছাড়াই আগের অবস্থায় থেকে যায় অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট। সম্প্রতি সাংবাদিকের ওপর এই আইনের ব্যবহারকে সাংবাদিকতার পরিপন্থী বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা।

আইনটি বিশ্লেষণে যা মেলে

এই আইনের একটি দিক হচ্ছে গুপ্তচরবৃত্তি এবং অপরটি হচ্ছে সরকারের গোপন নথি ফাঁস। তবে এই আইনের কোথাও উল্লেখ নেই যে, সরকারের ‘গোপন’ নথি সংবাদপত্রে প্রকাশ করা যাবে বা যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রণীত সংবিধানে মত প্রকাশের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। আলাদা প্রেস কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। তাই সাংবাদিকতার সঙ্গে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ব্যবহারের কোনও সুযোগ নেই। এটি সাংবাদিকতার পরিপন্থী।

নথি গোপনীয় হলেই হবে না

অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুযায়ী, অভিযোগ আনতে হলে তা হতে হবে গুপ্তচরবৃত্তির। এখানে কোনও নথি ‘গোপনীয়’ হলেই হবে না, বরং তা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট হতে হবে বলেও জানান আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম। আইনে বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং স্বার্থের পরিপন্থী কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে গুপ্তচর বৃত্তি করেন, তাহলে তার শাস্তি হবে। অর্থাৎ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ কোনও এলাকায় গমন করেন, পরিদর্শন করেন বা ভেতরে প্রবেশ করেন তাহলে শাস্তি হবে।

এই আইনজীবী বলেন, ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩, ৩-এ এবং ৫ ধারা রাষ্ট্রীয় স্বার্থ এবং নিরাপত্তা রক্ষার। গুপ্তচর বৃত্তি কিংবা কোনও নথি ফাঁস করলে এই ধারায় সেটা অপরাধ। তাই দেখতে হবে যে, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কিংবা রাষ্ট্রের নিরাপত্তাবিরোধী কিছু করলেন কিনা?’

তিনি বলেন, ‘‘এখানে স্পষ্টই প্রতীয়মান যে, সাংবাদিক রোজিনা তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে গিয়ে কিছু তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করেছেন মাত্র। যতটুকু জানা গেছে, এটি ছিল ভ্যাকসিনের চুক্তি সম্পর্কিত বিষয় মাত্র। টিকা সংক্রান্ত কোনও তথ্য আহরণ রাষ্ট্রের নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। ‘নিরাপত্তা’ একটি ভিন্ন বিষয়।’’

জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ আইনে সুরক্ষা পাবেন

২০১১ সালের ‘জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন, ২০১১’ অনুযায়ী, একটা দিক উন্মোচিত হয়েছিল, যার মূল লক্ষ্য  ছিল ‘জনস্বার্থ’। মূলত জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশকারীকে আইনগত সুরক্ষা প্রদান এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়তা থেকেই এই আইনের উদ্ভব। এ আইনের ২(৩) ধারা অনুযায়ী, জনস্বার্থের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, যার অর্থ ‘সরকার বা সরকারের নির্দেশে জনগণ বা জনগণের কিয়দাংশের স্বার্থে বা কল্যাণে গৃহীত কর্ম।’ ২(৪) ধারায় বলা হয়েছে, ‘জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য বা তথ্য অর্থ কোনও সংস্থার এরূপ কোনও তথ্য—যাতে প্রকাশ পায় যে, কোনও কর্মকর্তা (ক) সরকারি অর্থের অনিয়মিত ও অননুমোদিত ব্যয়; (খ) সরকারি সম্পদের অব্যবস্থাপনা; (গ) সরকারি সম্পদ বা অর্থ আত্মসাৎ বা অপচয়; (ঘ) ক্ষমতার অপব্যবহার বা প্রশাসনিক ব্যর্থতা; (ঙ) ফৌজদারি অপরাধ বা বেআইনি বা অবৈধ কার্য সম্পাদন; (চ) জনস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বা ঝুঁকিপূর্ণ কোনও কার্যকলাপ; অথবা (ছ) দুর্নীতি—এসবের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, আছেন বা হতে পারেন। ফলে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট এবং ২০১১ সালের এই আইনের মধ্যে সূক্ষ্ম সংঘাত দেখা দিয়েছে ‘রাষ্ট্রস্বার্থ’ এবং ‘জনস্বার্থ’-এর মধ্যে।

দীর্ঘদিন ধরে সচিবালয় বিটে দায়িত্ব পালনকারী ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তথ্য চুরি’র যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, দেখতে হবে সেটা কী কারণে হয়েছে। প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা কাজটি করেছেন রিপোর্ট করার জন্য। সাংবাদিকতা করতে গেলে এরকম করতেই হবে। টুকটাক আমরাও করেছি। এটাকে চুরি বলা যাবে না। অন্যায় কাজ বলা যাবে না। এখানে উদ্দেশ্যটা গুরুত্বপূর্ণ। তার উদ্দেশ্য আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া ছিল না।’




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া