যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট আজ, ভোটের ম্যাকানিজমে এমপি-রাজনীতিকরা
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর, ২০২২, ১২:৫৩ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
যশোর ব্যুরো : যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচন আজ। প্রথমবারের মতো ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে ইভিএমে। জেলার ৮টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ মোট ৫১ জন ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন এক হাজার ৩১৯ জন ভোটার। তবে ভোটারদের প্রভাবিত করতে গত দুই দিন ধরেই প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের নেতারা কৌশল-অপকৌশল আরোপ করেছেন। জেলা-উপজেলার শীর্ষ নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা ভোটারদের ফোন করে, এসএমএস পাঠিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। শহরের একটি অভিযাত হোটেলে গতকাল রাতে বাঘারপাড়ার ভোটারদের ডেকে এক শীর্ষ জনপ্রতিনিধি ‘ভোটের ম্যাকানিজম’ করেছেন।
নির্বাচন অফিস মতে, যশোর জেলা পরিষদে চেয়ারম্যানের একটি, ৮টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং তিনটি সংরক্ষিত (মহিলা) ওয়ার্ডসহ মোট ১২টি পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যশোর সদর উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে যশোর কালেক্টরেট স্কুলে। গতকাল দুপুরের পর থেকেই সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিলো। প্রার্থীদের লাগানো ব্যানার পোস্টার উড়ছিলো ফুরফুরে বাতাসে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সাইফুজ্জামান পিকুলের ঘোড়া প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বি আনারস প্রতীকের প্রার্থী মারুফ হোসেন কাজল। দুইজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তবে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বররা অধিকাংশই আওয়ামী লীগের ঘরানার হওয়ায় নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কাজলের জন্য চ্যালেঞ্জের বলে অনেকে মনে করছেন।
এছাড়া অর্থবিত্তের দিক থেকে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী মারুফ হোসেন কাজলের চেয়ে যোজন যোজন দূরত্বে এগিয়ে রয়েছেন সাইফুজ্জামান পিকুল। নির্বাচনের হলফনামার সম্পদ বিবরণী বিশে¬ষণে দেখা গেছে, পিকুলের বাৎসরিক আয় ১৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে যা ছিল ৪ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তার স্ত্রীর কোন বার্ষিক আয় ছিলো না। এখন তার স্ত্রীর বার্ষিক আয় এক লাখ ২ হাজার ৫শ’ টাকা। গত নির্বাচনে স্থাবর সম্পদ বিবরণীতে না থাকলেও এবার তার স্ত্রীর নামে ৩ একর জলকর (জমি), অকৃষি জমি ১০ দশমিক ৭৫ শতক ও তিন তলাবসত বাড়ি দেখানো হয়েছে।
এই বিষয়ে পিকুল বলেন, আমার সম্পদ বাড়েনি; টাকার মান কমে যাওয়ায় এবং আমার মূল পেশা মাছচাষে উৎপাদিত পণ্যের (মাছের) দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় টাকার পরিমাণ বেড়েছে। আর ব্যবসায় কিছু উন্নতি হয়েছে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সকল ভোটারের কাছে ভোট প্রার্থনা করেছি। যোগ্য প্রার্থী বেছে নেয়ার ব্যাপারে সবাই ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। তাই বিপুল ভোটে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
অপরদিকে মারুফ হোসেন কাজলের হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়, কৃষি ও ব্যবসায় খাতে বার্ষিক ৬ লাখ টাকা আয় করেন তিনি। তার সম্পদের তালিকায় রয়েছে একটি মোটরসাইকেল (অ্যাপাচি ১৬০ সিসি) ও ইলেকট্রনিক এবং আসবাবপত্র। তবে মূল্য উলে¬খ করা হয়নি। তার স্ত্রীর নামে তিন ভরি স্বর্ণ আছে।
মারুফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আমি সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত। আমার বেশি সম্পদ-সম্পত্তি নেই। বিপরীতে আমার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর অঢেল সম্পদ। তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালে কি কি করেছেন; সেটা জনপ্রতিনিধিবৃন্দ বা যশোরবাসী জানে। আমি এবার বিজয়ী হলে জনপ্রতিনিধিদের মূল্যায়ন করবো।
অন্যদিকে এক নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সালেহ আহমেদ মিন্টু ও সহিদুল আলম। মিন্টুকে বিজয়ী করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের নির্দেশে উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জুসহ দলের একাংশ মরিয়া হয়ে মাঠে রয়েছেন।
দুই নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে নির্বাচন করছেন ইমামুল হাবিব, রফিকুল ইসলাম বাপ্পী, ইকবাল আহমেদ ও সুরত আলী। এখানে ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করা হয়েছে এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগও দেয়া হয়েছে।
তিন নম্বর ওয়ার্ড চৌগাছা থেকে প্রার্থী হয়েছেন দেওয়ান তৌহিদুর রহমান, কামরুজ্জামান, আসাদুল ইসলাম ও আহসান হাবীব। চার নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হয়েছেন প্রদীপ দে, আব্দুর রউফ মোল্লা, জিএম মনিরুজ্জামান, শেখ মাহবুব উর রহমান, ফারাজী আশিকুল ইসলাম বাঁধন ও এমএম আজিম উদ্দিন। তারা সবাই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলা, ইউনুছ আলী, এনায়েত হোসেন লিটন ও রাকিব হাসান শাওন ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। এর মধ্যে যশোর-৪ আসনের এমপি সরাসরি সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলার পক্ষ নিয়েছেন। তিনি গতকাল ভোটের রাতে শহরের হোটেল ওরিয়নে অর্ধশত ভোটারকে ডেকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। ওই হোটেল থেকে ভোটাররা ফোন করে এ তথ্য ফাঁস করেছেন। এর ভিডিও এবং অডিও দৈনিক কল্যাণ দপ্তরে রয়েছে।
আর ছয় নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হয়েছেন শ্রমিকলীগ নেতা জবেদ আলী, শেখ ইমামুল কবির, রাকিবুল আলম রাকিব, সোহেল রানা, শেখ আব্দুল মতলেব ও ওয়াহেদুজ্জামান সেলিম। এই ওয়ার্ডে প্রার্থীদের সাথে রয়েছে বড় বড় নেতাদের আশীর্বাদ। ফলে জয়ী হতে তারা নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। অভিযোগ রয়েছে এই ওয়ার্ডে টাকার খেলা হয়েছে। ফলে কে হাসবেন বিজয়ের হাসি সেটা দেখা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
অন্যদিকে সাত নম্বর ওয়ার্ডের দুই প্রার্থী গৌতম চক্রবর্তী ও শহিদুল ইসলাম মিলনকে জয়ী করতে মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ ভোটের মাঠে নামেন। এর মধ্যে একপক্ষ প্রকাশ্যে ছিলো। অনেকটা গোপনে ছিল অন্য পক্ষ।
সবচেয়ে বেশি প্রার্থী আট নম্বর ওয়ার্ডে। এখানে সোহরাব হোসেন, এসএম মহব্বত হোসেন, সাঈদুর রহমান, মাসুদুজ্জামান, আজিজুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন বিশ্বাস ও নজরুল ইসলাম খান নির্বাচন করছেন।
অপরদিকে সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড ১ নম্বর থেকে রেহেনা খাতুন, হাজেরা পারভীন, রাখী ব্যানার্জী, লায়লা খাতুন, নাছিমা সুলতানা মহুয়া, সান-ই-শাকিলা আফরোজ, মরিয়াম বেগম ও বিলকিস সুলতানা সাথীসহ মোট আটজন ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। আর সংরক্ষিত দুই নম্বর ওয়ার্ড থেকে তাসরিন সুলতানা, রুকসান ইয়াসমীন পান্না ও নাদিরা বেগম এবং সংরক্ষিত তিন নম্বর ওয়ার্ডে সাহানা আক্তার, নাসিম আরা চৌধুরী ও শ্যায়লা জেসমিন নির্বাচন করছেন। তারা নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এই বিষয়ে জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার ও নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার আনিছুর রহমান বলেন, ভোট গ্রহণের সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। ফলে শান্তিপূর্ণ ভোট হবে বলে আশা করছি।