মোঘল স্থাপত্যের নিদর্শন ঐতিহাসিক বিবিচিনি শাহী মসজিদ
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৬:৩৬ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
বরগুনা (দক্ষিণ) প্রতিনিধি : বরগুনার বেতাগী উপজেলার একটি গ্রাম অজপাড়া গাঁয়ের নাম বিবিচিনি। নয়নাভিরাম মনোরম দৃশ্যে আচ্ছাদিত উঁচু টিলার উপর সেখানে মাথা উঁচু করে মোঘল স্থাপত্যের নীরব সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে একগম্বুজবিশিস্ট ঐতিহাসিক “শাহী মসজিদ”। কালের বিবর্তনে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি। হারিয়ে যাচ্ছে উজ্জ্বলতা। এ শাহী মসজিদকে ঘিরে রয়েছে অনেক অলৌকিক ঘটনা। অনেকেই মনে করেন, এই মসজিদটি তৈরি করেছিল পরীরা। তাই কেউ কেউ এই মসজিদকে পরীর মসজিদ বলে। স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঐতিহাসিক এই নিদর্শনটির প্রতিষ্ঠাতা যিনি, তিনি মহান আধ্যাত্মিক সাধক হযরত শাহ্ নেয়ামতউল্ল¬াহ্। তিনি ১৬৫৯ খ্রীস্টাব্দে সুদূর পারস্য থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে দিল্লীতে আসেন। ঐ সময় মোঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ্ সুজা বঙ্গদেশের সুবাদার। তিনি এই মহান সাধকের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। প্রকাশ, কয়েকজন শিষ্যকে সাথে নিয়ে এই আধ্যাত্মিক সাধক বিবিচিনি গ্রামে এসে বসবাস করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে তার শিষ্য শাহ্ সুজার অনুরোধে এই গ্রামেই তিনি একগম্বুজবিশিস্ট শাহী মসজিদটি নির্মাণ করেন। জানা যায়, নেয়ামত শাহের কন্যা চিনিবিবির নামের সাথে মিল রেখে এই গ্রামের নামকরণ করা হয় বিবিচিনি। সমতল ভূমি থেকে এই মসজিদটির অবস্থান প্রায় ৪০ ফুট সুউচ্চ টিলার উপর। এর দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট এবং প্রস্থ ৪০ ফুট। চারপাশের দেয়াল ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি চওড়া। উত্তর ও দক্ষিণ পাশে তিনটি দরজা খিলানের সাহায্যে নির্মিত। মসজিদের ইটের রং ধূসর বর্ণের। এই ইটের দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১০ ইঞ্চি এবং চওড়া ২ ইঞ্চি। বর্তমান যুগের ইটের চেয়ে এর আকৃতি সম্পূর্ণ আলাদা। তত্কালীন সময় এই সাধক পুরুষ শাহ্ নেয়ামতউল্লাহর অনেক অলৌকিক কীর্তি দেখে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষ তার কাছে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা লাভ করেন। জানা যায়, তখনকার সময় বিষখালী নদীর পানি পানযোগ্য ছিল না। পানি ছিলো প্রচুর লবণাক্ত। তিনি মানুষের এই লবণাক্ত পানি পানের কষ্টের কথা ভেবে তার আধ্যাত্মিক সাধনার আশ্চর্য তসিবহিট বিষখালির পানিতে ধুয়ে দিলে লবণাক্ত পানি পরিণত হয় মিঠাপানিতে এবং পানি পানের উপযোগী হয়। আজ পর্যন্ত সেই পানি একই অবস্থায় আছে। ওই সময় বিষখালী নদীতে ছিলো কুমীরের অবাধ বিচরণ। তার আলৌকিক ক্ষমতার প্রভাবে বিবিচিনি সংলগ্ন বিষখালী নদী এলাকায় কোন কুমীর আসত না। বর্তমানে এই মসজিদকে ঘিরে রয়েছে অনেক আশ্চর্য ঘটনা। এখানে মানত পূরণ করলেই মনোবাসনা পূর্ণ হয়। অগণিত মানুষ এসে এখানে নামাজ আদায় করেন। দীর্ঘ অনেক বছর এই ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ সংস্কারবিহীন অবস্থায় থাকার পর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন কেয়ার টেকার নিয়োগ করা হয়। বর্তমানে তিনিই এই মসজিদের দেখা-শুনা করছেন। তবে দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদের জন্য এখানে নেই কোন বিশ্রামাগার, নেই অজুখানা এবং স্বাস্থ্যসম্মত ভাল পায়খানা। মসজিদে আসার পায়ে চলা যে রাস্তা সেটি অনেকদিন পূর্বে হেরিংবন করা হয়েছিল, কিন্তু বর্তমানে রাস্তার অনেক জায়গায় ইট নেই, মাঝে মাঝে ইট ফাঁকা হয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দর্শনার্থী যারা এখানে আসেন পদে পদে তাদের ভোগান্তির আর সীমা থাকে না।