মায়ের চিকিৎসার জন্য দেশে এসে প্রাণ হারালেন মেয়ে : ওদের দায়িত্ব কার কাছে দেব
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ৩:৪৯ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
শরীয়তপুর প্রতিনিধি : অসুস্থ মা জাহানারা বেগমকে চিকিৎসা করাতেই একবছর আগে আমেরিকা থেকে ছুটে এসেছিলেন লুৎফুন্নাহার লিমা (৩০)। এরপর থেকে মায়ের চিকিৎসার জন্য আর আমেরিকা ফিরে যাননি। সোমবার জাহানারা বেগম ব্রেন স্ট্রোক করলে তাকে নিয়েই বরিশাল থেকে ঢাকায় হাসপাতালে যাওয়ার পথে জাজিরায় পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার কাছে গতিনিরোধক পার হতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে অ্যাম্বুলেন্সটি ট্রাকের পেছনে ঢুকে দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান মা-মেয়েসহ ছয়জন।
লুৎফুন্নাহার লিমার বড় বোন শিল্পি জানান, তাদের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার আনারসিয়া গ্রামে। লুৎফুন্নাহারের স্বামী লতিফ মল্লিক যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তিনিও সেখানে থাকতেন। এক বছর আগে মায়ের চিকিৎসার জন্য বাড়িতে এসেছেন তিনি। এরপর থেকে আর আমেরিকায় ফিরে যাননি। গতকাল মা অসুস্থ হওয়ায় তাকে নিয়েই হাসপাতালে যাচ্ছিল তারা। আর যাওয়ার পথেই এ দুর্ঘটনা ঘটল।
তিনি আরও বলেন, ‘বোনটা মায়ের চিকিৎসার জন্য দেশে এসে প্রাণ হারাল।’
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন-জাহানারা বেগম (৫৫), তার মেয়ে লুৎফুন্নাহার লিমা (৩০), তাদের স্বজন ফজলে রাব্বি (২৮) ও আরেক স্বজন বরিশালের সাংবাদিক মাসুদ রানা (২৮) এবং চালক রবিউল ও রবিউলের সহকারী জিলানি (২৮)।
শিবচর হাইওয়ে থানার পুলিশ জানায়, চালক রবিউল খুলনার দিঘলিয়ার চন্দনিমহল এলাকার কাওসার হাওলাদারের ছেলে। তিনি রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ঢাকা থেকে রোগী নিয়ে ভোলায় যান। ভোলা থেকে ঢাকায় ফেরার পথে বরিশাল শহরের বেলভিউ হাসপাতাল থেকে আরেক রোগী নিয়ে গতকাল সোমবার রাতে ঢাকায় রওনা দেন। দীর্ঘ ২৬ ঘণ্টা গাড়ি চালানোর কারণে তার শরীর ক্লান্ত ছিল। গাড়ি চালানোর সময় তিনি হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়েন। ওই অবস্থায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
অ্যাম্বুলেন্সের চালক রবিউলের ভাই ইয়াছিন হাওলাদার বলেন, তারা দুই ভাই অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে সংসার চালান। রবিউল রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ঢাকা থেকে রোগী নিয়ে ভোলায় যান। ভোলা থেকে ফেরার পথে তিনি বরিশাল শহর থেকে গতকাল আরেক রোগীকে নিয়ে ঢাকায় যান। ফেরার পথে পদ্মা সেতু এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েন।
পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, অ্যাম্বুলেন্সের চালক রবিউল ইসলাম (২৮) টানা ২৬ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে শিবচর হাইওয়ে থানার পরিদর্শক আবু নাঈম মোহাম্মদ মোফাজ্জেল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, পদ্মাসেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার ২০০ থেকে ৩০০ মিটার সামনে ভোরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। অ্যাম্বুলেন্সের চালক রবিউল টানা ২৬ ঘণ্টা ডিউটিতে ছিলেন। এ কারণে তিনি ক্লান্ত ছিলেন। সম্ভবত গাড়ি চালাতে চালাতে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এ কারণে চলন্ত ট্রাককে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় অ্যাম্বুলেন্সটি। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সটি ট্রাকের নিচে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই চালকসহ গাড়িতে থাকা ছয়জন প্রাণ হারান।
অ্যাম্বুলেন্সের চালক রবিউলের ভাই ইয়াছিন হাওলাদার বলেন, আমরা দুই ভাই অ্যাম্বুলেন্স চালক। রবিউল রোববার (১৫ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকা থেকে রোগী নিয়ে ভোলায় যান। ভোলা থেকে ফেরার পথে তিনি বরিশাল শহর থেকে সোমবার (১৬ জানুয়ারি) আরেক রোগীকে নিয়ে ঢাকায় যান। ফেরার পথে পদ্মাসেতু এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েন।
রবিউলের শাশুড়ি রাণী বেগম বলেন, আমার মেয়ে সন্তানসম্ভবা। পাঁচ বছর বয়সী একটা ছেলে আছে। আমি এখন ওদের দায়িত্ব কার কাছে দেব?