অনলাইন ডেস্কঃ
জীবন বাঁচানোর চেয়ে জীবিকাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ফলে শুরু হয়েছে অবাধ যাতায়াত। সারা দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লেও এখনো অনেকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবহার না করে চলাফেরা করছেন উল্লেখ করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে। লকডাউন শিথিল করার কারণে আক্রান্তের হার যেমন বাড়বে তেমিন অধিক হারে মৃত্যুও দেখতে হবে আমাদের। কারণ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মানুষ যথাযথভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলছে না। রাজধানীতে চলাচল করা বাস ও লঞ্চের অবস্থা দেখলেই এটা সহজেই অনুমান করা যায়, সামনের দিনগুলোতে আমাদের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক নয়া দিগন্তকে জানান, চীনে করোনাভাইরাসের অভিজ্ঞতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সংক্রমণটি রোধ করার কিছু কৌশলের কথা বলেছে। বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী সংক্রমণ প্রতিরোধে যা করা দরকার চেষ্টা করেছে তা করতে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরগতি ছিল এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সমন্বয় ছিল না। করোনা ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও গ্রহণ করেনি। এমনকি করোনা পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পিসিআর মেশিন ও টেস্ট কিটেরও সঙ্কট ছিল।অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, সরকার সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। যখন লকডাউনের প্রয়োজন ছিল তখন করেনি। লকডাউন ও সাধারণ ছুটি নিয়েও সংশয় ছিল। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ আইনেরও যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি।ফলে সমন্বয়হীনতায় সংক্রমণ বেড়েছে। বর্তমানে দেশে সংক্রমণের যে হার দেখছি তাও প্রকৃত সংখ্যা নয়। সংক্রমণের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হবে। অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, জনগণকে এ ব্যাপারে ভালো করে উদ্বুদ্ধও করা হয়নি।
এখন লকডাউন তুলে নেয়ায় যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে মানুষ চলাচল করছে তাতে শঙ্কিত না হয়ে পারছি না। লকডাউন তুলে নেয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৬টি পরামর্শ আছে। প্রথমটি হচ্ছে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসতে হবে। আমরা প্রথম শর্তটিই মানিনি। এতে সংক্রমণের হার আরো বাড়বে। পরিণতিতে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতায় চাপ বাড়বে। এখনই অনেকে হাসপাতালে শয্যা পাচ্ছে না এবং জরুরি অবস্থার রোগীদের আইসিইউতে স্থান দেয়া যাচ্ছে না। সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণ আরো তীব্র হবে। এতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে অনেক বেশি।অধ্যাপক হক বলেন, তারপরও সরকার যখন সব খুলে দিয়েছে তখন জনগণকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যক্তি পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে, ফেস শিল্ড ও মাস্ক পরতে হবে, হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। যতটা সম্ভব কোনো জায়গায় হাত রাখা যাবে না। আর কোনো অবস্থাতেই হাত না ধুয়ে বা স্যানিটাইজ না করে নাকেমুখে হাত দেয়া যাবে না। এগুলো কঠোরভাবে মানতে হবে। আর কারো মধ্যে উপসর্গ দেখা দিলে নিজেকে ঘরে বিচ্ছিন্ন রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে সরকারের কাছে আপনি শুধু এখন সংখ্যা হলেও আপনার প্রিয়জনদের কাছে আপনিই তাদের পৃথিবী। অতএব, নিজেই নিজের সুরক্ষা গ্রহণ করুন, সুস্থভাবে বেঁচে থাকুন।বিএমএর সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, করোনার ভয়াবহতায় বাংলাদেশ আজ বিপর্যস্ত। সারা দেশে সরকারি হিসাবে এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ হাজার ৫৬৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৮১ জন। লকডাউন তুলে দেয়ায় সামনের দিনগুলো আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকবে বলে মনে হচ্ছে। এ কারণে আবারো লকডাউনে ফিরে যাওয়ার বিকল্প নেই।এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা: বেনজীর আহমেদ বলেন, লকডাউন তুলে দেয়ার কারণে ঝুঁকিতো বাড়বেই। অনেক মানুষ সংক্রমিত হলেও তারা উপসর্গহীন থাকতে পারে। ফলে সংক্রমণের মাত্রাও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু বাস, লঞ্চ ও ট্রেন যাতায়াতের ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে পারলে অতোটা ভয় থাকত না। কিন্তু তা হচ্ছে না। ফলে আমাদের সাবধানে থাকতে হবে।