মহিউদ্দিন মহারাজকে ৭ শতাধিক ভোটারের প্রকাশ্যে সমর্থন
প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
পিরোজপুর জেলা পরিষদের মেয়াদ পূর্তিতে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শনিবার দুপুরে ভাণ্ডারিয়ার হরিণপালা ইকোপার্কে এ সভার আয়োজন করা হয়।
এতে ৭৪৭ জন ভোটারের মধ্যে ৭০৪ জনই প্রকাশ্যে জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক মো. মহিউদ্দিন মহারাজের পক্ষে সমর্থন দেন।
এর আগে এসব সদস্য লিখিতভাবে তাকে সমর্থন জানান। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্বাক্ষর সংবলিত আবেদন পাঠিয়েছেন বলেও জানা যায়।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পিরোজপুর-২ আসনের এমপি জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
সভায় জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মিরাজুল ইসলাম, ইন্দুরকানী উপজেলা চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল হক জোমাদ্দার, মাহিবুল হোসেন মাহিম, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সরওয়ার জোমাদ্দার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মশিউর রহমান, এসএম বায়জিদ, নাসরিন আক্তার, দিলরুবা আক্তার, নাসিমা আক্তার, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান ফুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউল আহসান গাজী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফায়জুর রশিদ খসরু, স্বরুপকাঠী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হক, পৌর মেয়র গোলাম কবির, মঠবাড়ীয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলীম মাতুব্বর, টুঙ্গিপাড়া আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হাফিজুর রশিদ তারেক প্রমুখ।
নির্বাচন কমিশন থেকে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জেলার প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, বেশিরভাগ জেলাতেই বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক (যারা ৫ বছর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন) তারাই দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। তাদের তালিকা এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতে রয়েছে বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
জেলা পরিষদের নির্বাচনে পিরোজপুরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা আছে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন মহারাজের।
চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর পিরোজপুরসহ দেশের ৬১টি জেলায়, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদেরই জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেয় সরকার। সে হিসাবে এ বছরের ১৭ এপ্রিল থেকে মহিউদ্দিন মহারাজ পিরোজপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে জেলার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নেন মহিউদ্দিন মহারাজ। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিদের তিনি উন্নয়নমূলক কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত করায় পিরোজপুরের গ্রামপর্যায় পর্যন্ত উন্নয়ন পৌঁছে গেছে। স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের মাঝে মহিউদ্দিন মহারাজের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকায় আগামী নির্বাচনকে ঘিরে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা পরিষদের ভোটাররা।
৭টি উপজেলা নিয়ে গঠিত দক্ষিণের অন্যতম জেলা পিরোজপুর। এখানে জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার রয়েছেন ৭৪৭ জন। এর মধ্যে ৭০৪ জন ভোটারই জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক মো. মহিউদ্দিন মহারাজের পক্ষে লিখিতভাবে সমর্থন জানিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্বাক্ষর সংবলিত আবেদন পাঠিয়েছেন বলেও জানা যায়।
আইন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে থাকেন। তাদের প্রত্যক্ষ ভোটেই নির্বাচিত হন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
পিরোজপুর-১ সদর আসনের নাজিরপুর উপজেলা পরিষদে ৯টি ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধি আছেন ১২০ জন। এ উপজেলার ভোটাররা মহিউদ্দিনকে লিখিত সমর্থন জানিয়েছেন। নেছারাবাদ উপজেলা পরিষদে ইউনিয়ন ১০টি ও ১টি পৌরসভা। যেখানে মোট ভোটার সংখ্যা ১৪৬; যার মধ্যে মহিউদ্দিন মহারাজের পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন ১৪০ জনই।
পিরোজপুর সদর উপজেলা পরিষদে ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১০৭ জন ভোটারের মধ্যে স্বাক্ষর দিয়ে সমর্থন করেছেন ৭৯ জন। ভাণ্ডারিয়া সদর উপজেলায় ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ৯২ জন ভোটারের সবাই সমর্থন করেছেন তাকে।
কাউখালী এবং ইন্দুরকানী উপজেলায় ৫টি করে ইউনিয়নের ৬৮ জন করে ভোটারের সবাই স্বাক্ষর দিয়ে তরুণ মহিউদ্দিন মহারাজকে সমর্থন জানিয়েছেন।
এছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলায় ১১টি ইউনিয়নের ১৪৬ জন ভোটারের মধ্যে ১৩৭ জনই স্বাক্ষর দিয়ে সমর্থন জানিয়েছেন মহারাজকে। মঠবাড়িয়া পৌরসভা থাকলেও সর্বশেষ আইন অনুযায়ী বিলুপ্ত হওয়ায় এখানে ভোটার সংখ্যা বিবেচনায় আনা হয়নি।
পিরোজপুর সদর উপজেলার ২৮ জন, নাজিরপুরের ৬ জন ও মঠবাড়িয়া উপজেলার ৯ জন ছাড়া বাকি ৯৪.২৫ শতাংশ ভোটারই মহিউদ্দিনের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন।
এদিকে লিখিতভাবে সমর্থনের পাশাপাশি মহিউদ্দিন মহারাজকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান- এমন প্রত্যাশা জানিয়ে বিভিন্ন উপজেলার জনপ্রতিনিধিরা ব্যানার, পোস্টার ও বিলবোর্ড লাগিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রথম জেলা পরিষদের ভোট হয়। সেখানে মাত্র ৪০ বছর বয়সে তরুণ প্রার্থী হিসেবে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মহিউদ্দিন মহারাজ। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জেলা পরিষদ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২৫ জুন মহিউদ্দিন মহারাজের নেতৃত্বে পিরোজপুর জেলা থেকে মাদারীপুরে ৭টি বিশাল লঞ্চে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৫-১৬ হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নিয়ে যোগ দিয়ে ব্যাপক নজরে আসেন।
এছাড়া করোনাকালীন পিরোজপুরের ৭ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ প্রায় ৭৫ হাজার পরিবারের মাঝে খাবার উপকরণ বিতরণ করেও সেই সময় ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান মহিউদ্দিন মহারাজ; যা দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
এছাড়া জেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট, স্কুল-কলেজে বরাদ্দ, প্রায় প্রতিটি উপজেলায় জেলা পরিষদ বাংলো, উপজেলায় জেলা পরিষদ মার্কেট, জেলা সাতটি সীমানা প্রবেশদ্বারে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত বিশাল সীমানা গেট, নারীদের মাঝে সেলাইমেশিন বিতরণ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন মহিউদ্দিন মহারাজ; যা নজর কেড়েছে পুরো জেলার মানুষের।