সন, ৩২৩ ত্রিপুরা। একটি মসজিদের দেয়ালে লেখা। অংকের লেখাটি মসজিদের স্থাপনার সন। ‘তিপ্রা’ বা ‘ত্রিপুরা’ সন বঙ্গাব্দ অর্থাৎ বাংলা সন সূচনার তিন বছর আগের।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ও প্রচলন থাকলে ত্রিপুরা সন হবে ১৪৩২। সেই হিসেবে মসজিদটির বর্তমান বয়স ১১০৯ বছর।
মসজিদটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায়। এখনো অক্ষত ওই মসজিদটি পৌর এলাকার খড়মপুরের শাহ্পীর কল্লা শহীদ মাজারে অবস্থিত। তবে পাশেই বিশালাকার নতুন মসজিদ হওয়ায় হাজার বছরের পুরোনেটিতে এখন আর নামাজ পড়া হয় না। প্রতিদিন সকালে শিশুদেরকে ধর্মীয় পাঠ দেওয়া হয় মসজিদটিতে।
মসজিদে সনের সঙ্গেই লেখা থাকা ‘ত্রিপুরা’ হলো অঞ্চলের নাম। এক সময় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেরে অধীনে ছিলো এ আখাউড়া এলাকা। যে কারণে মসজিদের স্থাপনা সনের সঙ্গে ত্রিপুরা লেখা আছে বলে স্থানীয়দের ধারনা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাজারের মূল অংশের উত্তর পূর্ব দিকে মসজিদটির অবস্থান। এখনো বেশ পরিপাটি। গম্বুজটি বেশ সুন্দর, মুজাইক করা। চুন, সুড়কির দেয়ালে আছে হালকা কারুকাজ। প্রবেশ প্রথের দরজাটি তুলনামূলক নিচু। আধুনিকায়ন করতে গিয়ে মসজিদের মূল ভবনের সামনের অংশ টিনশেড দিয়ে বাড়ানো হয়েছে। এর সামনেই অজু করার জায়গা। পুরাতন মসজিদটির পূর্ব পাশ ঘেঁষেই নতুন মসজিদ। পেছনের দিকে পুরাতন কোরআন শরীফ মাটি দেওয়ার জায়গা, যেটি অনেকটা সংরক্ষিত। মসজিদের দেয়াল ও গম্বুজের পুরুত্ব সাধারণের চেয়ের অনেক বেশি। মসজিদের পাশেই মাজারের রীতি অনুযায়ী লাল নিশানা উড়ানো আছে।
মসজিদ নির্মাণের সন সম্পর্কে স্থানীয়দের কাছ থেকে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে মসজিদের গায়ে লেখা থাকা সন ৩২৩ লেখা থেকেই এর নির্মাণ সম্পর্কে ধারণা দেন স্থানীয়রা। মসজিদটি হাজার বছরের পুরো বলেই তাঁরা একমত পোষণ করেন।
উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, ঐতিহাসিকভাবে ত্রিপুরা সন ব্রিটিশ রাজের অধীনে ‘তিপ্রা’ রাজ্যের সব সরকারি বিষয়ে প্রচলিত ছিল। ১৯৪৯ সালে ভারতের প্রজাতন্ত্রে ত্রিপুরার যোগদানের সঙ্গে সঙ্গে ত্রিপুরী বর্ষপঞ্জির আনুষ্ঠানিক ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে শাহ্ সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ প্রকাশ শাহ্পীর কল্লা শহীদ মাজার সম্পর্কে জানা যায়, ১৩০৩ সালে হযরত শাহজালাল (র.) ইসলাম প্রচার করতে ৩৬৯ জন আউলিয়া নিয়ে সিলেটে আসেন। হযরত শাহজালাল এর অন্যতম শিষ্য ছিলেন সৈয়দ আহমেদ গেছুদারাজ। অনুমান করা হয়, এক যুদ্ধে শহীদ হওয়া গেছুদারাজের মাথা তিতাস নদীর স্রোতে ভেসে খড়মপুর আসে। খড়মপুরেই গেছুদারাজের মাথা দাফন করা হয়। প্রতি বছরই মাজারটিতে ওরস অনুষ্ঠিত হয়।
খড়মপুরের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন খাদেম বলেন, ‘আমরা ছোট বেলা থেকেই মাজারের এই মসজিদে নামাজ পড়তাম। তখন এ মসজিদটিই এলাকার প্রধান মসজিদ ছিলো। এর পাশেই মাজারের পক্ষ থেকে নতুন একটি মসজিদ করা হলেও আগেরটি অক্ষত রাখা হয়েছে। এটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। ’
খড়মপুরের আরেক বাসিন্দা সাংবাদিক কাজী মিনহাজুল আবেদীন খাদেম হান্নান বলেন, ‘আমরা ছোট বেলাতেই বাবা-দাদাদের কাছ থেকে এ মসজিদ সম্পর্কে শুনে এসেছি। এটির যে নির্মাণ শৈলী সেটি দেখলেই বুঝা যায় যে বেশ পুরোনো। এর সঙ্গে জমিদার বাড়ির কারুকাজের মিল পাওয়া যায়। ’
খড়মপুর মাজার শরীফ পরিচালনা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম খান খাদেম হাসান বলেন, ‘মসজিদটি হাজার বছরের পুরোনো। মসজিদের গায়ে থাকা লেখা থেকেই এর নির্মাণ সন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এ মসজিদটি আমাদের এতিহ্য। ’
খড়মপুর মাজার শরীফ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খাদেম মিন্টু বলেন, ‘মসজিদটি হাজারো বছরের পুরোনো। ঐতিহ্য হিসেবে এটিকে না ভেঙেই পাশে নতুন মসজিদ করা হয়েছে। পুরোনো মসজিদের দেয়ালের পুরোত্ব প্রায় সাড়ে তিনফুট। এটাতে কোথাও রড বা ইট নেই। বেশি পুরোনো হয়ে যাওয়ায় আমরা এখন মসজিদের ভিতরে না পড়িয়ে নতুন নির্মাণ করা বারান্দায় শিশুদেরকে ধর্মীয় পাঠদান করানো হয়। নিয়মিত সংস্কার কাজ করা হয় এ মসজিদের।