সাব্বির আলম বাবু, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ভোলায় আবারও ছড়িয়ে পড়েছে শিশুদের নিউমোনিয়া। জেলার সাতটি হাসপাতালে এখন শিশু রোগীদের চাপ। হাসপাতাল গুলোতে রোগীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় তাদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
গত এক সপ্তাহে জেলায় দুই শতাধিক রোগী ভর্তি হলেও ১১০টি শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। অন্যদিকে, বেড সংকট থাকায় একটি বেডে গড়ে ২-৩ জন রোগীকে গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে শিশুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। তবে চিকিৎসকরা বলছেন- আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশুদের নিউমোনিয়া বেড়েছে। জানা গেছে, তীব্র গরমের পর গত এক সপ্তাহ ধরে দ্বীপজেলা ভোলার ওপর দিয়ে টানা বর্ষণ বয়ে গেছে। এতে শিশুদের জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই নিউমোনিয়া আক্রান্ত। যাদের ভোলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল গুলোতে রোগীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই একটি বেডে একাধিক রোগী গাদগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। ভোলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর মা জান্নাতুল বলেন, তিন মাসের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে রয়েছি। গত দু’দিন ধরে শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে। আমাদের বেডে চাপাচাপি অবস্থায় তিনজন রোগীর কষ্ট হচ্ছে, তবুও বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
আরেক অভিভাবক শিলা আক্তার বলেন, হঠাৎ করেই শিশুদের নিউমোনিয়া বেড়েছে, আমরা সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, শিশু রোগীদের চাপ বেশি। শিশুকে নিয়ে তাদের মা-বাবারা বসে আছেন। একদিকে গরম অন্যদিকে একটি বেডে গড়ে ২-৩ করে রোগী চিকিৎসা নেওয়ায় পরিস্থিতি অনেকটা সামলে নিতে পারছেন না তারা। তবুও সন্তানের চিকিৎসার কথা মাথায় রেখে কষ্ট সহ্য করেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। কয়েকজন অভিভাবক জানালেন, আমরা শিশুদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি, তার ওপর আবার গাদাগাদি অবস্থায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। তবে ডাক্তার, নার্সরা ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। শিশু ওয়ার্ডের তথ্য মতে জানা গেল, চলতি মাসের ২০-২৭ জুলাই পর্যন্ত ভোলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৮২টি শিশু। যাদের মধ্যে নিউমোনিয়া আক্রান্ত ছিল ৭৯ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও আটজন নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৫৪ জন। যাদের বেশির ভাগ নিউমোনিয়া আক্রান্ত। শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত নার্সরা জানান, যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন তাদের বেশিরভাগ নিউমোনিয়া আক্রান্ত। ফলে আমাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এদিকে শুধু ভোলা সদর হাসপাতাল নয়, জেলার সাত হাসপাতালের যেন একই চিত্র। হঠাৎ করেই শিশুদের নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। এ অবস্থায় রোগীদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
ক’দিনের টানা বর্ষণ, প্রচণ্ড গরম আর আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত কারণে শিশুদের অসুখ ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানালেন ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. তামান্নায়ে হাবিবা। তিনি বলেন, শিশু ওয়ার্ডে যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগ নিউমোনিয়া আক্রান্ত। আমরা তাদের সেবা দিচ্ছি। হাসপাতালে কোনো ওষুধের সংকট নেই। তবে ডাক্তার-নার্স সংকট থাকায় চিকিৎসা সেবা কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা দিচ্ছি। বর্তমানে নিউমোনিয়া পরিস্থিতি বেশি হওয়ার কারণ হতে পারে আবহাওয়া পরিবর্তন। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানা গেছে, গত এক মাসে জেলায় ৩৮৫টি শিশু নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে মারা গেছে চারজন। গত এক সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছে ১১০টি শিশু। গত আট মাসে যার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩৮০ জন। যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৭টি শিশুর।