তাজা শাকসবজি, ফলমূলের পসরা সাজানো ভাসমান বাজারের কথা ভাবলে প্রথমে মাথায় আসে ফিলিপাইনের কাবিয়াও বা থাইল্যান্ডের ড্যামনোয়েন সাদুয়াক বাজারের নাম। তবে, বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগেও যে এমন কয়েকটি ভাসমান বাজার আছে, তা জানা নেই অনেকের।
পিরোজপুরের ভাসমান পেয়ারা বাজার সেগুলোর মধ্যে একটি। পেয়ারার মৌসুমে এই ভাসমান বাজারে বেচাকেনা হয় সর্বোচ্চ।
ভাসমান পেয়ারার বাজারটি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় স কীর্তিপাশা খালের উপর অবস্থিত। সাধারণত পেয়ারার মৌসুম শুরু হয় জুলাই মাসে, চলে টানা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তাই পাইকারি বাজারের দেখা পেতে হলে সেখানে যেতে হবে জুলাইয়ের শেষ দিকের সময়টাতে।
যেভাবে যাবেন পেয়ারা বাজারে
‘দ্য ফ্লাইং গার্ল’ নামের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলের ট্রাভেল ভ্লগার ইসরাত জাহান বলেছেন, ‘পেয়ারা বাজারে যাওয়ার জন্য দুই দিন সময় হাতে থাকলে, রাতের লঞ্চ যাত্রা হবে সবচেয়ে আরামের। সেজন্য প্রথমে সদরঘাট থেকে উঠতে হবে বরিশালগামী লঞ্চে। লঞ্চ থেকে নামার পর সিএনজি বা অটোতে করে যেতে হবে বানারীপাড়া লঞ্চ ঘাটে। সেখান থেকে ট্রলার বা নৌকা ভাড়া করে পৌঁছাতে হবে ভিমরুলি নামক স্থানে।’
তবে পদ্মা সেতুর কল্যাণে দুই দিনের যাত্রা শেষ করা যাবে একদিনেই, যা কিছুদিন আগেও প্রতিকূল আবহাওয়া ও নদী পারাপারের বিপদশঙ্কা আর সময়সাপেক্ষতা এত দ্রুত ফেরি পারাপারকে করে তুলেছিল অচিন্তনীয়। এখন মাত্র ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার বাস যাত্রায় যাওয়া যাবে পিরোজপুরে। অর্থাৎ, খুব ভোরে রওয়ানা দিলে দুপুরের মধ্যেই দেখা যাবে বাজারের জমজমাট পরিবেশ। সারাদিন বাজার ঘুরে আবার রাতেই ফিরে আসা যাবে চিরচেনা রাজধানীতে।
মনোমুগ্ধকর ভাসমান বাজার
জুলাই মাস থেকে পিরোজপুর, বরিশাল ও ঝালকাঠি জেলার পেয়ারা চাষিরা শত শত ছোট-বড় নৌকা নিয়ে হাজির হয় ভাসমান বাজারে। বাগানের সেরা পেয়ারাগুলো দিয়ে ভর্তি থাকে প্রতিটি নৌকা।
পেয়ারা বাজার ভ্রমণের শুরুটা করা যেতে পারে সেখানকার পাশের বাগানগুলো থেকে, যেখানে পর্যটকদের জন্য রাখা হয়েছে আপ্যায়ন ব্যবস্থা।
ভিমরুলিতে পৌঁছানোর পর ভাসমান বাজারের দৃশ্যটিই সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে। আঁকাবাঁকা নদী, পেয়ারা ভর্তি নৌকা, খালের দু’ধারের সবুজাভ পরিবেশ সবকিছু একত্রে স্বর্গীয় অনুভূতি দেয়। বছরের আর্দ্র সময়টাতেও চিত্রটি ব্যতিক্রম নয়।
কীর্তিপাশা খাল দিয়ে ভাসমান বাজারে প্রবেশের অনুভূতি প্রকাশ করে ইসরাত জাহান বলেন, ‘খাল থেকে ভাসমান বাজারের সুন্দর দৃশ্য, দুই পাশের সারি সারি গাছ এত মনোমুগ্ধকর রাস্তা সৃষ্টি করেছে যে মনে হয় আমাজন বনে আছি! এই দৃশ্য অবলোকন করতে হলে একটি ছোট নৌকা করে যাওয়া যেতে পারে খালের ভেতরের দিকে। তাহলে ধীরপথে যেতে যেতে উপভোগ করা যাবে বাজারের ব্যস্তময় নির্মল পরিবেশ।’
দুপুরে খাওয়ার জন্য বাজারের পাশে আছে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট। আর বাজারের কাছে বিশ্রামের জন্য পিরোজপুরে রয়েছে বোর্ডিং হাউজ। তবে চাইলে বরিশালে হোটেলে থেকে পরে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা যাবে।
বিগত কয়েক বছরে স্বরূপকাঠির ভিমরুলি গ্রামে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েই চলেছে। যারা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে থাকা অসাধারণ স্থানগুলো ঘুরে দেখতে চায় তাদের জন্য এই ভাসমান বাজার একটি আদর্শ জায়গা। আপনিও যদি কোনো অনিন্দ্য সুন্দর স্থানের দেখা পেতে চান তাহলে ঘুরে আসতে পারেন ভিমরুলি ভাসমান বাজার!
লঞ্চ যাত্রার জন্য, ঢাকা সদরঘাট থেকে রাত ৮টার সুরভী-৯ লঞ্চে গেলে বিকাল ৩ টার মধ্যেই পৌঁছানো যাবে বরিশালে।
আর বাস যাত্রার জন্য, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড অথবা অনলাইন থেকে টিকেট সংগ্রহ করে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, এমাদ পরিবহন বাসে যাওয়া যাবে পিরোজপুরে।