রোববার বিকালে এক আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যে সাতক্ষীরার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান এবং সাতক্ষীরা থানার এসআই অপর্ণা রায়কে সঙ্গে নিয়ে বৃদ্ধ বজলুর রহমানকে তার নিজ ঘরে তুলে দেন।
এ সময় তার বড়ছেলে সাবেক সেনাসদস্য আবুল কালাম ও প্রতিবেশীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবির নিজ জমি বাড়ি থেকে বিতাড়িত বজলুর রহমানকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে তার হাতে নগদ অর্থ এবং খাদ্য সহায়তা তুলে দেন। তিনি ইউএনও এবং পুলিশকে বজলুর রহমানকে তার বাড়িতে শান্তিপূর্ণভাবে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
অপরদিকে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফুল ইসলাম বৃদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমানকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে টেলিফোন করেন।
‘ভিক্ষার ঝুলি হাতে আওয়ামী লীগ নেতা’ শীর্ষক প্রকাশিত খবরের প্রতি সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। এ খবর দেখে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফুল ইসলাম টেলিফোন করে তাকে সহায়তা দেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী জেলা প্রশাসককেও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেন।
উল্লেখ্য, বজলুর রহমান সাতক্ষীরার সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলসের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক নেতা। তিনি আজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থেকে বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের ৮নং মাগুরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।
দুই ছেলে সাবেক সেনাসদস্য আবুল কালাম এবং ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বাবু ও মেয়ে নিলুফার ইয়াসমিনের বাবা বজলুর রহমানের ৬ শতক জমির ওপর মাগুরা মিলবাজার এলাকায় একটি পাকা দালানবাড়ি রয়েছে। তার ছোট ছেলে আব্দুস সালাম বাবু তার কাছ থেকে ওই জমি ও বাড়ি লিখে নিয়ে বজলুর রহমান ও তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুনকে কিছুদিন আগে বাড়ি থেকে নির্যাতনের মুখে তাড়িয়ে দেয়।
এ ঘটনার পর থেকে অসহায় হয়ে পড়া বজলুর রহমানের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন বড় ছেলের সংসারে থাকলেও তিনি নিজে অন্যের বাড়িতে থাকেন। প্রতিদিন সকালে পাড়ায় পাড়ায় ও বাজারে গিয়ে ভিক্ষা করে যা পান তাই দিয়ে তার ভরণপোষণ চলছিল।
শেষ বয়সে পারিবারিকভাবে বঞ্চনার শিকার একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিবেদিত রাজনৈতিক কর্মীর এমন দুর্দশা দেখে যুগান্তরে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে সব মহলে শুরু হয়ে যায় তোলপাড়।
রোববার আনন্দঘন পরিবেশে নিজ বাড়িতে ফিরতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করে বজলুর রহমান বলেন, সমস্যার সমাধান হলো। তিনি সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী, জেলা প্রশাসক এবং ইউএনওকে ধন্যবাদ জানান।
এ সময় তার ছোট ছেলে আব্দুস সালাম বাবু বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, আমি এখন থেকে বাবা ও মায়ের ভরণপোষণের পুরো দায়িত্ব নিচ্ছি।
বৃদ্ধ বজলুর রহমান ভিক্ষার ঝুলি ফেলে তার নিজ ঘরে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ায় সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ এবং সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু ও সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।