স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধণের এক মাস পার হতে না হতেই চরম যাত্রী সংকটের মুখে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের জনপ্রিয় দিবা গ্রীন লাইন সার্ভিস। ভাড়া কমিয়েও যাত্রী না পাওয়ায় ঢাকা-বরিশাল আকাশ পথে ফ্লাইট পরিচালনা স্থগিত করেছে বেসরকারী বিমান পরিবহন সংস্থা নভোএয়ার।
ভাড়া কমিয়েও যাত্রী পাচ্ছেন না বরিশাল-ঢাকা নৌরুটের চিরচেনা বিলাসবহুল লঞ্চগুলোতে। একদিকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি অপরদিকে চরম যাত্রী সংকটের কারণে ব্যয়ের টাকাও উঠছেনা লঞ্চ মালিকদের। ফলে রোটেশন প্রথায় লঞ্চ পরিচালনার কথা ভাবছেন বিলাসবহুল লঞ্চগুলোর মালিকরা।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই ঢাকা-বরিশাল রুটের আকাশ ও নৌ-পথে জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেতে শুরু করেছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসী। অতীতে আকাশ ও নৌপথে যাত্রীদের কাছ থেকে অধিক ভাড়া আদায় করা হলেও বর্তমানে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ভাড়া কমিয়েও যাত্রী সংকটে ভুগছেন এই রুটের লঞ্চ ও এয়ারলাইনসগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পূর্বে ঢাকা-বরিশাল আকাশ পথে বেসরকারী ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার সর্বনিম্ন ৪ হাজার ৭০০ টাকায় টিকিট বিক্রি করেছে। পদ্মা সেতু দিয়ে যানচলাচল উন্মুক্ত করার পর এ দুটি এয়ারলাইন্স গত ২০ জুলাই থেকে সর্বনিম্ন ভাড়া ৩ হাজার ৫০০ টাকা করছে। এতেও মিলছে না পর্যাপ্ত যাত্রী। সর্বশেষ নভোএয়ার যাত্রী সংকটের কারণে ফ্লাইট বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। তবে ইউএস বাংলা তাদের নিয়মিত দুইটি ফ্লাইট চালু রেখেছে। বিমান বাংলাদেশও তাদের একমুখী ভাড়া সর্বনিম্ন ৩৫শ’ টাকা থেকে এক লাফে কমিয়ে গত রবিবার থেকে তিন হাজার টাকা করেছে। এয়ারলাইন্সগুলোর বরিশালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে ভাড়া কমানো হলেও যাত্রী সংকট কাটেনি।
অপরদিকে পদ্মা সেতু চালু হবার পর থেকে রাজধানী ঢাকার সাথে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের নৌ-যোগাযোগে বিরূপ প্রভাব পরতে শুরু করেছে। চরম যাত্রী সংকটের কারণে বিলাসবহুল লঞ্চগুলোর কর্মকর্তারা ভাড়া কমানোর ঘোষণা দিয়েও কাঙ্খিত যাত্রী পাচ্ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব রুটের বিলাসবহুল লঞ্চের সিঙ্গেল এসি কিংবা ননএসি কেবিনের ভাড়া ১৪শ’ টাকা থেকে এক লাফে কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। ডাবল কেবিনের ক্ষেত্রে ২৪শ’ টাকার ভাড়া দুই হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়াও ফ্যামিলি, সেমি ভিআইপি, ভিআইপি কেবিনের ভাড়া প্রকার ভেদে পাঁচশ’ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত কমানো হয়েছে। পাশাপাশি ডেকের ভাড়াও ১৫০ টাকা কমিয়ে ২৫০ টাকা করা হয়েছে। তারপরেও লঞ্চগুলোতে পূর্বের ন্যায় কাঙ্খিত যাত্রী মিলছে না।
একাধিক লঞ্চের সুপারভাইজাররা জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে ক্রমান্বয়ে যাত্রীর সংখ্যা কমেছে। বর্তমানে লঞ্চের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কেবিনে যাত্রী মিলছে না। তাই লঞ্চ মালিকরা যাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে ভাড়া কমিয়েছেন। তারপরেও কাঙ্খিত যাত্রী মিলছেনা।
লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশনের স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, পূর্বে লঞ্চের কেবিনের খুব চাপ থাকলেও বর্তমানে কোন চাপ নেই বললেই চলে। তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলবাসীর আবেগের জায়গা। তাই এখনও মানুষ পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করছে। লঞ্চে পরিবার-পরিজন ও মালামাল নিয়ে শান্তিতে যাওয়া যায়। বাসে সেটা সম্ভব না। তাই এমন অবস্থা বেশিদিন থাকবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।