বৃদ্ধ মহিলা ও তার স্বামি পরিত্যক্তা কণ্যাকে ঝালকাঠির পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল, ২০২০, ১:২৪ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
জিয়াউল হাসান পলাশ : ঝালকাঠির গাবখান ধারসিঁড়ি ইউনিয়নের বৈদারাপুর গ্রামের একজন বৃদ্ধা, স্বামি পরিত্যক্তা মেয়ে ও তার নাতিকে নিয়ে খুব কষ্টে আছেন। বৃদ্ধা ঝালকাঠির বাজারে ভিক্ষা করে মেয়ে ও নাতিকে নিয়ে কোনমতে খেয়ে পড়ে থাকতেন। কিন্তু করোনা দূর্যোগ শুরু হবার পর থেকে বাহিরে বেরুতে পারছেন না। তাই তার কোন উপার্জনের পথ নেই। মেয়ে ও নাতিকে নিয়ে প্রায় দিন শাকপাতা খেয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন। এরমধ্যে শুনেছেন ইউনিয়ন পরিষদে চাল দিচ্ছে কিন্তু তিনি পাননি। বৃদ্ধার নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে অন্য একজনের ফোন দিয়ে জানান, বাবা করোনা হইছে আইজ কয়দিন। আমি কিছুই পাই নাই। আপনে আমারে প্রায়ই বাজারে দেখলে সাহায্য করতেন। আমি সেই বুড়া। আমারে কি একটু সাহায্য করা যায়। শুনছি সরকার এতো সাহায্য দেয় আমারেতো মেম্বর চেয়ারম্যনরা কিছুই দেয় নাই এহন পর্যন্ত। বললাম সাহায্য করতে পারলে আপনার পাশের বাড়ির লেকের মাধ্যমে জানাবো।
পরদিন গত ১৭ এপ্রিল। ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম মাহমুদ হাসান পিপিএম (বার) কে স্মরণ করলাম। বললাম ভাই এরকম একটা পরিবারকে কোন সাহায্য দেয়া যায় কিনা। বললেন দেয়া যাবে। তিনি জানতে চাইলেন তার পরিবারে সদস্য সংখ্যা কত। বলার সাথে সাথে একটা শর্ত দিলেন। আপনি মিডিয়ায় বৃদ্ধাকে সহায়তার কোন নিউজ করতে পারবেন না। আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাকে সাহায্য করতে আগ্রহী। ১৮ এপ্রিল রাতে মাহমুদ সাহেব জানালেন ১৯ তারিখ বৃদ্ধাকে আমার পক্ষ থেকে ১০ কেজি চাল, ডাল, তৈল ও আলু দিব। আপনি আগামিকাল ১২ টায় একটা ফোন করবেন প্লিজ। নির্ধারিত সময় তাকে ফোন করার সাথে সাথে বললেন ভাই শর্তটা মনে আছেতো। বললাম মনে আছে। তবে এ ক্ষেত্রে রাখতে পারব কিনা জানিনা। কারন এ উপকার বা সাহায্যের বিষয়টি তুলে ধরা আমার নৈতিক দায়িত্ব। একজন পেশাদার সাংবাদিক সেই সাথে একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক হয়ে কোন মতে এটা আমি চেঁপে যেতে পারিনা। তারপরেও মাহমুদ সাহেব আবারো অনুরোধ জানান। এরপর তার দেয়া খাদ্য সামগ্রী পেয়ে বৃদ্ধা ও তার স্বামি পরিত্যক্তা মেয়ে হাত তুলে দোয়া করে বললেন, হে আল্লাহ যিনি আমাদের এই খাবারের ব্যবস্থা করছে তারে ও তার পরিবারকে রোগ বালাই থেকে মুক্ত রাখো। এই খাবারের বিনিময়ে তার মনের আশা পুরা করো। (নামাজ কালাম পড়া ঐ বৃদ্ধা মহিলার অনুরোধে তার কোন ছবি দেয়া সম্ভব হয়নি)। প্রশ্ন হলো এই মহৎ মানুষটির সামান্য সহায়তা পেয়ে হয়ত পরিবারটির কদিনের খাবার ব্যবস্থা হলো। কিন্তু তাহলে এলাকার চেয়ারম্যান ম্বেররা গরীবের জন্য সরকারি যে ত্রাণ পেল তা কাদের দিয়েছে।
ঝালকাঠির এই সদালাপি, হাস্যউজ্জল ও সৎ পুলিশ অফিসারের দেশের দূর্যোগ মূহুর্তে এ ধরণের সহায়তার বিষয়টি সত্যিই ব্যতিক্রম। এছারাও তিনি একই দিন আরো একজন প্রবাসি শ্রমিকের পরিবারকে সহায়তা করেছেন। যে পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি দেশে না থাকায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে টাকার অভাবে খাদ্য সামগ্রী কিনতে পারছিল না। ঝালকাঠিতে মাদক বিরোধী অভিযান থেকে শুরু করে সন্ত্রাস, ইভটিজিংসহ জনসাধারণের সাথে পুলিশের বৈষম্য দূর করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সার্কেল মাহমুদ প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছেন। পাশাপাশি এ ভাবে যে কোন সমস্যায় সাধারণ মানুষের জন্য তিনি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগীতায় ঝাপিয়ে পরেছেন। এখানে একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয়। করোনা দূর্যোগের পর থেকে তিনি এভাবে অনেক মানুষের সহায়তা দিয়ে পুলিশ জনগণের বন্ধু এ কথাটির প্রমান রেখে যাচ্ছেন।