গোটা দেশ যখন বিপিএল ক্রিক্রেট উন্মাদনায় কাঁপছে তখন ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিকে অর্থনৈতিকভাবে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়েছে ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তারা। ব্যবসা, কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনামের পাশাপশি ওই উপজেলায় তৈরি ক্রিকেট ব্যাট চাহিদা মেটাচ্ছে গোটা দেশের ক্রিকেটারদের।
স্বরূপকাঠির কাঠ, নার্সারি, আমড়া-পেয়ারা, ছোবড়া শিল্প দেশ বিদেশে খুব ভালো অবস্থান ধরে রেখেছে শত বছর ধরে। এর পাশাপাশি আবুল কালাম ও তার ভগ্নিপতি আব্দুল লতিফের হাত ধরে আসা ক্রিকেট ব্যাট রুজি যোগাচ্ছে উপজেলার প্রায় দুই সহস্রাধিক পরিবারের। স্বরূপকাঠির ব্যাট না হলে ঢাকা স্টেডিয়াম পাড়াসহ দেশের সকল ক্রীড়াসামগ্রীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্রায় অচল। এমন কথাই বললেন দেশসেরা ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তা পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বরূপকাঠির নিলুফার ইয়াসমিন।
উপজেলা সদর থেকে সন্ধ্যা নদী পার হয়ে ৪ কিলোমিটার দূরের উপজেলার পশ্চিম সীমান্তের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, বিদ্যুতহীন বলদিয়া ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম বিন্না। যে গ্রামের শতাধিক পরিবার ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কাজে নিয়োজিত। ওই গ্রামের পার্শ্ববতী গ্রামগুলোতে রয়েছে আরো শতাধিক কারখানা। যেখান থেকে প্রতিনিয়ত লঞ্চ ও বাসযোগে হাজারো ব্যাট যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা ও উপজেলাতে।
২২ বছর পূর্বে ঢাকার ভাষানী স্টেডিয়ামের ‘খেলার সাথী স্পোর্টস’ এর মালিক সিরাজ মিয়ার রাজধানীর জুরাইন এলাকার কারখানায় ব্যাট, শিল্ড, ট্রফি, ক্যারাম তৈরির কাজ করতেন উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের বিন্না গ্রামের আবুল কালাম ও তার ভগ্নিপতি আব্দুল লতিফ। তখন দারুণ অর্থকষ্টে কাটত তাদের জীবন। সেখান থেকে দেশে এসে ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কাজ শুরু করেন তারা। এ দেখে পার্শ্ববর্তী এলাকার বহু লোকজন ব্যাট তৈরির কারখানা স্থাপন করে। বর্তমানে বলদিয়া ইউনিয়নের বিন্না গ্রামের পার্শ্ববর্তী ডুবি, কাটাখালী, উরিবুনিয়া, চামী গ্রামের দেড়শতাধিক কারখানায় সহস্রাধিক পরিবারের লোক এ শিল্পের সাথে জড়িত।
এখানকার কারখানায় কর্মরত প্রতিজন মিস্ত্রি খাওয়াসহ ১৩ থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন। প্রতিটি ছোট সাইজের ব্যাট পাইকারি ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা ও বড় সাইজের ব্যাট ৮০ টাকা থেকে শুরু করে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করা হয়। এ ছাড়াও স্পেশাল ব্যাট হাজার টাকারও বেশি দামে বিক্রয় হয়।
বিন্না গ্রামের কারখানার মালিক সাইফুল ইসলাম জানান, ব্যাট তৈরিতে তারা আমড়া, বাদাম, নিম ও চাম্বল কাঠ ব্যবহার করেন। আর ব্যাটের হ্যান্ডেল তৈরিতে রেইনট্রি, মেহগনি কাঠ ব্যাবহার করেন তারা।
ক্রিকেট ব্যাট উৎপাদন সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার কারণে তাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এখানকার রাস্তাঘাট ভাঙা ও খালের পানি সংকটের কারণে তৈরিকৃত ব্যাট ও কাঠ আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অনেক সমস্যা হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে তাদের ব্যবসার অনেক উন্নতি হবে বলে তিনি জানান।