কখনো প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আবার কখনো অবসরপ্রাপ্ত মেজর পরিচয় দিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় পাঠানোর কথা বলে মেরিন ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে বেকার যুবকদের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে আসছিলেন মির্জা মুকুল (৪৫)। আড়াই বছর আগে ওমান ফেরত মুকুল প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষের কাছে থেকে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার সিআইডি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একটি টিম রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় মুকুলের কাছ থেকে ২৬টি পাসপোর্ট, তিনটি অটোসিল, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ট্রেনিং পাশের কার্ড ৩৫টি, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ট্রেনিংয়ের ভুয়া যোগদান পত্রের কপি সাতটি, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর লেখা ও ছবি সম্বলিত পাসপোর্টের আবেদন ফরম ২৫টি, মেরিন একাডেমি চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থির চিত্র ১৫টি ও একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর দক্ষিণের অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন।
তিনি বলেন, আসামি মুকুল নয়বছর ওমান প্রবাসী ছিলেন। তিনি ওমানে লেবার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওমানে থেকে ফিরে মুকুল প্রতারণার পরিকল্পনা করেন। এছাড়া তিনি ইন্টারনেট ব্যবহার করে ভুয়া কাগজ পত্র তৈরিতে দক্ষ ছিলেন।
অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম বলেন, মুকুল দীর্ঘদিন ওমানের একটি পোর্টে কাজ করার কারণে তার কাজ পোর্ট সংক্রান্ত ছিল। তিনি বিভিন্ন কৌশলে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে যুক্ত হন। অস্ট্রেলিয়ায় খ্রিস্টানদের ব্যাপক চাহিদার কথা বলে ভুক্তভোগীদের প্রলোভন দেখাতেন। তাদের (খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের) মেরিন একাডেমিতে ট্রেনিং দিয়ে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর প্রলোভনে ৬০ জনের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা করে নেন। এছাড়া কানাডায় পাঠানোর কথা বলে মুকুল ১২ জনের কাছ থেকে নিয়েছেন সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে। প্রতারক মুকুল ভুক্তভোগীদের বিশ্বাস স্থাপনের জন্য, মেরিন একাডেমির ট্রেনিংয়ের জন্য ছবি নকল করে আইডি সরবরাহ করতেন।
মুকুল ৬০ জন ভুক্তভোগীকে বলেন, বিদেশি ডেলিগেট আসবে ২১ সালের ২২ অক্টোবর। প্রথমে চট্টগ্রাম পরে ডেলিগেটের সঙ্গে কক্সবাজারে দেখা করানোর জন্য ভুক্তভোগীদের বলেন তিনি। ডেলিগেটরা চট্টগ্রাম গেছে এবং সবাইকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্যও বলেন তিনি। চট্টগ্রাম গিয়ে ভুক্তভোগীরা মুকুলকে মোবাইল ফোনে আর পাননি। পরে ভিকটিমারা বুঝতে পারেন তারা প্রতারিত হয়েছেন।
আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম বলেন, আসামি ও পলাতক অন্যান্য আসামি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। তারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে ট্রেনিং করিয়ে অস্ট্রেলিয়া পোর্টে চাকরিতে নকল নিয়োগপত্র আসল হিসেবে সরবরাহ করতেন, প্রতারণার মাধ্যমে সহজ সরল লোকজনদের ঠকিয়ে অনুমান ৮২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম আরও বলেন, এ চক্রের সঙ্গে আরও দুই থেকে তিনজন যুক্ত থাকতে পারে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। দুই থেকে আড়াই বছর ধরে মুকুল প্রতারণা করে আসছিলেন। তিনি ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।