বানারীপাড়ার উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রার্থী মিজানুর রহমান বেপারীর (৫০) ঢাকার মোহাম্মদপুর হেলথ কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।৪ জুন শুক্রবার দুপুর ১টায় নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে তার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
জানা গেছে, মিজানুর রহমানের ঢাকার যাত্রাবাড়িতে ফল ও কাঁচামালের আড়ৎ রয়েছে। ২ জুন বুধবার বিকাল ৫টার দিকে তিনি ও তার ভাই সেলিম আড়তে বসে কথা বলছিলেন। এমন সময় মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে কল এলে তিনি আড়তে সেলিমকে রেখে বাহিরে বেড়িয়ে যান। এরপর আর খোজ মেলেনি মিজানের। ভাই সেলিমের মোবাইলে ফোন আসে রাত সাড়ে ৮টার দিকে। মোবাইল ফোনে কাঁচপুর ব্রিজে অদূরে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এবং তার মোবাইল থেকে ফোন দেয়া হয়। খবর পেয়ে সেলিমসহ স্বজনরা সেখান থেকে মিজানকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে পাকস্থলী ওয়াশের পরে তার অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু করোনা রোগীর কারনে আইসিইউতে সুযোগ না পাওয়ায় সেখান থেকে মোহাম্মদপুরের হেলথ কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় ৩ জুন সকাল সোয়া ৮টায় মিজানের মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় মিজানের ছোট ভাই সেলিম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। ফলে সোনারগাঁও থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, মিজানুর রহমানের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে তার লাশের ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরে তার মৃত্যুর প্রকৃত কারন জানা যাবে।
এদিকে মিজানুর রহমানের লাশের সঙ্গে থাকা ভাগ্নে মিরাজ ৪ জুন শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় মুঠোফোনে জানান, তার মামার শরীরের আঘাতের চিহ্ন ও মুখে বিষ প্রয়োগের আলামত রয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার বিষক্রিয়া ওয়াশ করা হয়। এদিকে স্বজনদের ধারণা নির্বাচনকে সামনে রেখে সুপরিকল্পিতভাবে তাকে মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে বিষ খাইয়ে ও মারধর করে হত্যা করা হয়েছে। মিজানুর রহমান এর আগেও দু’বার ইউপি মেম্বার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকলেও জোরপূর্বক তার বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে স্বজন ও স্থানীয়রা জানান। এবারও তিনি জনপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিপন কুমার সাহা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান মেম্বার প্রার্থী মিজানুর রহমান বেপারীর মৃত্যুর ফলে ওই ওয়ার্ডে ২১ জুন নির্বাচন স্থগিত করে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গত, মিজানুর রহমান বেপারী বরিশালের বানারীপাড়ার ইলুহার ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের (মলুহার গ্রাম) মেম্বার পদপ্রার্থী ছিলেন। তার নির্বাচনী প্রতিক ছিল ভ্যানগাড়ি। করোনার লকডাউনের কারনে গত ১১ এপ্রিলের নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ায় তিনি তার কর্মস্থল ঢাকায় ফিরে যান। ২১ জুন পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরে ২ জুন তিনি এলাকায় ফোন করে স্বজন ও শুভার্থীদের জানান ৩ জুন এলাকায় ফিরে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন। কিন্তু মৃত্যুর অমোঘ নিয়তি সেই ৩ জুনই তাকে না ফেরার দেশের যাত্রী হয়ে লাশ হয়ে ৪ জুন তার নিথর দেহ এলাকায় ফিরছে !