বরিশাল সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ড হচ্ছে সাধারণ ৩০টি এবং সংরক্ষিত ১০টি। ৪০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৯টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। তার মধ্যে বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সমর্থক ১৩ জন এবং নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ সমর্থক সাতজন। এছাড়া নির্বাচন করে বহিষ্কার হওয়া বিএনপিপন্থী ১৮ জনের মধ্যে মোট ৯ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।
নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ মনোনয়ন পাওয়ার পর বরিশাল আওয়ামী লীগ দৃশ্যমান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যার প্রভাব পড়ে ওয়ার্ডগুলোতেও। প্রায় সব ওয়ার্ডে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ও তার ভাতিজা মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর পাল্টাপাল্টি কাউন্সিলর প্রার্থী ছিল ফলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলোতে নির্বাচনী উত্তাপও ছিল বেশি।
ফলাফলে নির্বাচিত সাদিকপন্থী কাউন্সিলররা হলেন ২ নম্বর ওয়ার্ডে আরিফুর রহমান মুন্না, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সৈয়দ আবিদুর রহমান, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কেফায়েত হোসেন রণি, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে খান মো. জামাল হোসেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়), ১১ নম্বর ওয়ার্ডে মজিবর রহমান, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে আনোয়ার হোসেন রয়েল, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে শফিকুল ইসলাম পলাশ, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে গাজী আক্তারুজ্জমান হিরু, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে গাজী নাঈমুল ইসলাম লিটু, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে শেখ সাইয়েদ আহমেদ মান্না, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে ইমরান মোল্লা ও ৩০ নম্বরে আওয়ামী লীগের খাইরুল শাহীন।
১০ জনের ৬ জন পারলেন না
২০২১ সালের আগষ্ট মাসে আওয়ামী লীগপন্থী ১০ জন কাউন্সিলর মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র সাদিকের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেন। তারা মহানগর-সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের বলয়ে যোগ দেন। ফলে ১০ কাউন্সিলরের সঙ্গে সাদিকের সম্পর্ক ছিল সাপে-নেউলে। আবুল খায়ের আবদুল্লাহর মেয়র পদে প্রার্থী হতে মাঠ পর্যায়ে ভুমিকা রেখেছিলেন তারা। সবাই নিজ নিজ ওয়ার্ডেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় করেন।
তার মধ্যে জয়ী হন মাত্র চারজন। তারা হলেন- ২০ নম্বর ওয়ার্ডে জিয়াউর রহমান বিপ্লব, ২২ নম্বরে আনিছুর রহমান দুলাল, ২৩ নম্বরে এনামুল হক বাহার ও ২৬ নম্বরে হুমায়ন কবীর।
অপর ছয় প্রার্থীর ৪ নম্বরে তৌহিদুল ইসলাম বাদশা, ১২ নম্বরে জাকির হোসেন ভুলু, ২৯ নম্বরের ফরিদ আহমেদ সাদিকপন্থীদের কাছে হেরেছেন। বিএনপির বহিষ্কৃত প্রার্থীদের কাছে হেরেছেন ২৮ নম্বরের জাহিদ হোসেন রুবেল ও ২৪ নম্বরের শরীফ মো. আনিছুর রহমান। ১ নম্বরের আমির হোসেন বিশ্বাসকে পরাজিত করা আউয়াল মোল্লা আওয়ামী লীগ দলীয় হলেও গ্রুপিং রাজনীতিতে কোনো পক্ষে ছিলেন না। তবে নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়েরপন্থী নতুন তিনজন নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন ১০ নম্বরে জয়নাল আবেদীন, ১৬ নম্বরে সাহিন সিকদার ও ২৫ নম্বরে আওয়ামী লীগের সুলতান মাহমুদ।
বিএনপির বহিষ্কৃত ৯ জন নির্বাচিত
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় মেয়র প্রার্থী সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রূপন ও ১৮ কাউন্সিলর প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। ৩ নম্বরে বিএনপির বহিষ্কৃত হাবিবুর রহমান ফারুক, ৮ নম্বরে সেলিম হাওলাদার, ৯ নম্বরে সৈয়দ হুমায়ন কবীর লিংকু, ১৮ নম্বরে জিয়াউল হক মাসুম, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ফিরোজ আহমেদ, ২৮ নম্বরে হুমায়ুন কবীর, সংরক্ষিত ৯ নম্বরে সেলিনা বেগম, ১০ নম্বরে রাশিদা পারভীন ও ৬ নম্বরে মজিদা বোরহান। এদিকে জামায়াতে ইসলামীর চার নেতা চারটি ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করেন। তার মধ্যে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের মনিরুজ্জামান তালুকদার নির্বাচিত হয়েছেন।
২৮ বছর পর থামলেন জাপা নেতা
বরিশাল জেলা জাতীীয় পার্টির (জাপা) আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট একেএম মর্তুজা আবেদীন ১৯৯৫ সালে তৎকালীন পৌর নির্বাচনে ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। সিটি করপোরেশনের উন্নীত হলে একই ওয়ার্ডে ২০০৩ সাল থেকে টানা চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। সে হিসাবে তিনি ২ নম্বর ওয়ার্ডে ২৮ বছর ধরে জনপ্রতিনিধি। সোমবারের পঞ্চম পৌর নির্বাচনে হারেন তিনি আওয়ামী লীগের আরিফুর রহমান মুন্নার কাছে। এর ফলে বরিশাল সিটি করপোরেশনে জাপার প্রতিনিধিত্ব থাকল না।
মুন্নার ছোট ভাই রইজ আহমেদ মান্না মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক। তিনি মেয়র সাদেকপন্থী ছাত্রলীগ নেতা। নৌকার কর্মীদের মারধরের অভিযোগে গত ১৫ মে গ্রেপ্তার হয়ে মান্না কারাগারে রয়েছেন। তার মনোনয়ন প্রথমে বাছাইয়ে বাতিল হয়। আদালতে আপিল করে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পান। নির্বাচন কমিশনের করা আপিলে গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত মান্নার মনোনয়নপত্র পুনরায় বাতিল করেন। আগে থেকেই মান্নার ডামি প্রার্থী ছিলেন বড় ভাই মুন্না। ভোটের তিনদিন আগে মান্নার মনোনয়ন বাতিল হলে মুন্নাকে নিয়ে মাঠে নামেন তার সমর্থকরা।