রবিবার ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   রবিবার ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসকদের কমিশন বাণিজ্য
প্রকাশ: ৩১ আগস্ট, ২০২২, ৫:১৩ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসকদের কমিশন বাণিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক ।। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের রোগীদের বাইরের ডায়গনস্টিক সেন্টারে পাঠান ডাক্তাররা-এ অভিযোগ বহুদিনের। রোগী পাঠানোর বিনিময়ে মেলে কমিশন। কমিশনের ভাগাভাগি নিয়ে চিকিৎসককে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে হাসপাতালে। অসুস্থ মানুষকে জিম্মি করে চলা এ বাণিজ্য নিয়ে মুখ খুলত না কেউ। সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় ভয়ে চুপ থাকতেন রোগীরাও। তবে এবার তা হাতেনাতে ধরা পড়ল ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে। মঙ্গলবার বরিশালে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যাওয়া রোগীর কাছে মিলল সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারের সিল-সই দেওয়া স্লিপ। ওই রোগীকে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে কোন ডায়াগনস্টিকে যেতে হবে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে বরিশালে শুরু হয়েছে অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক বিরোধী অভিযান। এতে নেতৃত্ব দেন স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিচালক ডা. হুমায়ুন শাহিন খান। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটসহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসানও ছিলেন তার সঙ্গে। অভিযানে বৈধ কাগজপত্র না থাকাসহ নানা অপরাধে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দুটি ডায়াগনস্টিক। একটির কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে জরিমানা।অভিযানকালে শেবাচিম হাসপাতালের সামনে থাকা ‘বরিশাল সিটি সেন্টার’ নামে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অপেক্ষমাণ রোগীর কাছে পাওয়া যায় শেবাচিম হাসপাতালের স্লিপ। সেই স্লিপে রয়েছে কর্তব্যরত ডাক্তারের দেওয়া স্বাক্ষর ও সিল। ওই রোগী জানান, ‘মাথায় আঘাত পেয়ে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডাক্তার বলেছেন সিটি স্ক্যান করাতে। কোথায় করাতে হবে সেটাও বলে দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে স্লিপে সই-সিল দিয়ে তাকে পাঠিয়েছেন সেখানে।’ ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিচালক ডা. হুমায়ুন শাহিন খান বলেন, ‘বরিশাল সিটি সেন্টার নামের এই প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স সি ক্যাটাগরির। অথচ তারা মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে সিটি স্ক্যান করছিল। সিটি স্ক্যান মেশিন বসানোর ক্ষেত্রে লাইসেন্স এ ক্যাটাগরির হতে হয়। অনিয়ম ধরা পড়ার পর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিয়েছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এরকম রোগী পেয়েছি যারা চিকিৎসার জন্য শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কর্তব্যরত ডাক্তার নিজে স্লিপে সিল-সই দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাকে এখানে পাঠিয়েছেন। এটি অপরাধ। ভ্রাম্যমাণ আদালতের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘হাসপাতালের সামনে যেকটি ডায়াগনস্টিক ল্যাবে গিয়েছি তার প্রায় সবকটিতেই মিলেছে এরকম স্লিপ নিয়ে অপেক্ষমাণ শেবাচিম হাসপাতালের রোগী। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে, সরকারি হাসপাতালের রোগী বেসরকারি ডায়াগনস্টিকে পাঠানোর নীরব প্রতিযোগিতা চলছে।’ বেসরকারি ক্লিনিকে এক্সরে-ইসিজিসহ বেশকিছু প্যাথলজিকাল পরীক্ষা করতে আসা এক রোগী বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ৩ দফা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছি। প্রতিবারই বাইরে পাঠানো হয়। ডাক্তার স্যাররা বলে দেন কোন ডায়াগনস্টিকে যেতে হবে।
হাসপাতালে করানোর কথা বললে তারা বলেন, ‘এখানে করতে গেলে রিপোর্ট পেতে দেরি হবে। তাছাড়া হাসপাতালের পরীক্ষার রিপোর্ট খুব একটা ভালো হয় না।’ এ কারণেই বাইরে পরীক্ষা করাতে আসি।
জানা যায়, শেবাচিম হাসপাতালে আসা রোগীদের প্রথম চিকিৎসা দেন ইন্টার্ন ডাক্তাররা। পরীক্ষার নামে বাণিজ্যের শুরু এখান থেকেই। সিনিয়র ডাক্তাররা পরীক্ষা দিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদের সিস্টেম হলো রোগী যেখানেই পরীক্ষা করাক কমিশনের টাকা সময়মতো পৌঁছে যাবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার এ বাণিজ্য নিয়ে ডাক্তারদের মধ্যে অন্তর্দ্ব›দ্ব-কোন্দলের ঘটনাও ঘটে এখানে। বছরখানেক আগে শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-৪ এর সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মো. মাসুদ খানকে অফিস কক্ষে আটকে মারধর করেন ৪৬ ব্যাচের সজল পান্ডে, তরিকুল এবং ৪৭ ব্যাচের রিজভীসহ তাদের সহযোগীরা। হাসপাতাল থেকে বেসরকারি ডায়াগনস্টিকে রোগী পাঠানোর কমিশন নিয়ে দ্ব›েদ্বর কারণে ওই হামলা হয় বলে জানা গেছে। গত বছর ‘শেবাচিম হাসপাতালে অপারেশন করালে রোগী মারা যাবে’ ভয় দেখিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করানোর অভিযোগ উঠে শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. একেএম মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। রোগীর স্বজনের দেওয়া লিখিত অভিযোগের পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটিও হয়। রোগীকে ভয় দেখিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়াই শুধু নয়, হাসপাতালে থাকাবস্থায় যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাইরের ডায়াগনস্টিক থেকে করাতে বাধ্য করারও অভিযোগ আনা হয় ডা. মিজানের বিরুদ্ধে। শেবাচিম এবং বরিশাল সদর হাসপাতালের সামনের একাধিক ডায়াগনস্টিক মালিক বলেন, ‘ব্যবসা করতে হলে ডাক্তার সাহেবদের কমিশন দিয়েই করতে হয়। একটা সময় ছিল পরীক্ষা-নিরীক্ষার মোট বিলের শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ টাকা কমিশন দিতাম। এখন ৩০ থেকে ৪০ ভাগ দিতে হয়। শুধু কমিশনই নয়, ডাক্তারদের নানা আয়োজন যেমন পিকনিক, ডিপার্টমেন্টের উৎসবসহ নানা অকেশনে চাঁদা দিতে হয়। না দিলে পরদিন থেকে রোগী আসে না।’ ডাক্তারের সিল-সইসহ স্লিপ ধরা পড়ার বিষয়ে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এটা যদি কেউ করে থাকেন তা অপরাধ। এই বিষয়ে বেশ কয়েকবার নোটিশ এবং সতর্কবার্তা দিয়েছি আমরা। তাছাড়া হাসপাতালের পরীক্ষাগারগুলো এখন দুই শিফটে চলছে। যেসব পরীক্ষা এখানে হয় না সেগুলো বাইরে করা যায়। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও সিল-সই দিয়ে স্লিপ দেওয়া যাবে না। অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া