বরিশাল শহরে টিসিবির পণ্য মজুত, ডিলারসহ সহযোগীর নামে মামলা
প্রকাশ: ১৮ মার্চ, ২০২৩, ৯:৫১ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ না করে অনিয়ম ও অবৈধভাবে মজুতের অভিযোগে বরিশাল শহরে এক টিসিবি ডিলার ও তার সহযোগীর নামে মামলা হয়েছে। শনিবার (১৮ মার্চ) এয়ারপোর্ট থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি দায়ের করেন বরিশাল নগরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইছাকাঠী এলাকার বাসিন্দা মো. সাইফুল ইসলাম।
বিষয়টি দুপুরে নিশ্চিত করেছেন এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলালউদ্দিন। তিনি বলেন, মামলায় কাশিপুর বাজারের টিসিবির ডিলার ও মেসার্স চৌধুরী স্টোরের প্রোপাইটর মো. হুমায়ুন কবির (৪৫) ও তার সহযোগী বরিশাল নগরের কাউনিয়া ব্রাঞ্চ রোড এলাকার মৃত শেখ মোকছেদ আলীর ছেলে শেখ মামুন মিয়াকে (৪২) আসামি করা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার (১৭ মার্চ) রাতে ডিলার পয়েন্টে টিসিবি ও সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা অভিযান করে। এ সময় তারা সুবিধাভোগীদের মাঝে পণ্য বিক্রিতে অনিয়ম ও অবৈধভাবে মজুদের প্রমাণ পায়। বঞ্চিত সুবিধাভোগীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে ডিলারের সহযোগী শেখ মামুন মিয়াকে পুলিশ আটক করে। এছাড়াও ডিলারের গুদাম তালাবদ্ধ করে স্থানীয় কাউন্সিলরের হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে টিসিবির সহকারী পরিচালক শতদল সরকার জানিয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ডিলার হুমায়ুন কবির টিসিবি থেকে তার প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে ন্যায্যমূল্যের পণ্য সরবরাহ করে জনসাধারণের মাঝে বিতরণ করে। গত ১৭ মার্চ দুপুরে কয়েকজন উপকারভোগী টিসিবির পণ্য ন্যায্য মূল্যে কিনতে ডিলারের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে যায়। এসময় মরিয়ম বেগমসহ কয়েকজন উপকারভোগী তাদের কার্ড দিলে তা স্ক্যান করে অন্য কেউ নিয়ে গেছে বলে জানান ডিলার হুমায়ুন কবির। এ নিয়ে টিসিবির ডিলারের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা স্টোরের ভেতরে ঢুকতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে বিষয়টি বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানানো হলে তিনি টিসিবির সহকারী পরিচালককে খবর দেন। একই সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে কাউন্সিলরসহ স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ডিলারের প্রতিষ্ঠানের সাটার খোলা হয়।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, হুমায়ুন কবিরের টিসিবির ডিলার পয়েন্টে সর্বমোট সুবিধাভোগী ৬৮৮ জন। আর ডিজিটাল অ্যাপস মোতাবেক ৬২১ জন সুবিধাভোগীকে মালামাল সরবরাহ করেছেন তিনি। সেই হিসেব অনুযায়ী ডিলার পয়েন্টে টিসিবির ১৩৪ লিটার সয়াবিন তৈল, ১৩৪ কেজি ডাল, ৬৭ কেজি ছোলা, ৬৭ কেজি চিনি থাকার কথা থাকা। কিন্তু সেখানে টিসিবির ২৪৬ লিটার সয়াবিন তেল, ২২৬ কেজি ডাল, ১২৯ কেজি ছোলা, ১০০ কেজি চিনি পাওয়া যায়। এছাড়া তার এক আত্মীয়ের বাসায় ৭ লিটার সয়াবিন তৈল, ৪ কেজি চিনি পাওয়া যায়।
লিখিত এজাহারে বলা হয়েছে, ডিলার ও তার সহযোগী টিসিবির পণ্য সুবিধাভোগীদের কাছে ন্যায্য মূল্যে সরবরাহ না করে ডিলার পয়েন্টে মজুদ রেখে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতারণা করে আত্মসাৎ করেছেন।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে টিসিবির সহকারী পরিচালক শতদল সরকার বলেন, নগরের ২৯ নং ওয়ার্ড কাশিপুরের শিববাড়ি এলাকায় টিসিবির ডিলার হচ্ছেন হুমায়ন কবির। কাশিপুর বাজার এলাকায় তার মেসার্স চৌধুরী স্টোর্স নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। টিসিবির ডিলার হিসেবে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মালামাল ক্রয় করে ৬৮৮ জন সুবিধা ভোগীদের মাঝে ন্যায্য মুল্যে দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি
ডাল ও এক কেজি করে চিনি এবং ছোলাবুট বিক্রি করবেন।
কিন্তু ওই ডিলার ডিজিটাল অ্যাপসের মাধ্যমে ৬২১ জন সুবিধাভোগীর কাছে পণ্য বিক্রি করে। শুক্রবার বেলা ১২টার পর থেকে পণ্য নেই জানিয়ে বিক্রি বন্ধ করে দেয়। তখন ভুক্তবোগীরা বিষয়টি তাকে ও সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে জানায়। রাতে তারা টিসিবির ডিলার পয়েন্টে গিয়ে পণ্য পেয়েছেন।
সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ না করে পণ্য মজুদ করা পয়েন্টে নতুন করে তালাবদ্ধ করে বিসিসির প্রশাসনিক কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ২৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ফরিদ হোসেনে জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ডিলারের সহযোগী শেখ মামুনকে আটক করেছে পুলিশ।
শতদল সরকার বলেন, সংশ্লিষ্ট ডিলারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর কাউন্সিলরের হেফাজতে থাকা পণ্যের বিষয়ে বিসিসির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।