বরিশালে গণসমাবেশ আয়োজনে বঙ্গবন্ধু উদ্যান বরাদ্দ দেওয়া হলেও মাঠের পুরোটা বিএনপি ব্যবহার করতে পারছে না। মাঠের স্থায়ী মঞ্চও তারা পাচ্ছে না। মাঠের পশ্চিম অংশে তাদের অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করতে হচ্ছে।
বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে বাস ও থ্রি-হুইলারের পর লঞ্চ মালিক সমিতির কাছে ঢাকা-বরিশালসহ অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা এসেছে। ক্ষমতাসীন দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতারা এ নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ নভেম্বর ঢাকা থেকে বরিশালগামী লঞ্চ ছাড়তেও নিষেধ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়-মাঠের অর্ধেকটায় বাঁশ গেড়ে প্যান্ডেল তৈরি করছেন শ্রমিকরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্র্মিত ১০০ সেতু ৭ নভেম্বর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে ১৬টি সেতু বরিশালের। ওই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন বরিশালের রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। মূলমঞ্চ ঘিরে চলছে তার প্রস্তুতি। মঞ্চের সামনের অংশে বিশাল প্যান্ডেল নির্মাণ করা হচ্ছে। এ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিন হায়দার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি ঘোষণা হওয়ার পর গণসমাবেশ করার জন্য বঙ্গবন্ধু উদ্যান চেয়ে আবেদন করে বিএনপি। তারা অন্য কোথাও ভেন্যু চাইলে হয়তো জটিলতা হতো না। ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত মাঠে বালু ফেলা হয়েছে। প্যান্ডেল নির্মাণ কাজও বহুদূর এগিয়ে গেছে। এ অবস্থায় বিএনপিকে বলেছি মঞ্চ ও প্যান্ডেলের অংশটুকু বাদ রেখে সভা করতে।
৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় গণসমাবেশের আয়োজন সম্পর্কে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানান, সোমবার বিকালে টেলিফোনে আমাদের বেলস পার্কের (বঙ্গবন্ধু উদ্যান) মাঠ বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। তখন তিনি বলেন-মাঠের একাংশে তাদের একটি মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে। সেই অংশটুকু বাদ দিয়ে জনসভা করতে বলেন। এখন দেখছি-মাঠের অর্ধেকটা দখল করে চলছে তাদের (প্রশাসন) প্যান্ডেল নির্মাণ। এমনকি স্থায়ী মঞ্চও ব্যবহার করতে পারছি না। ৫ নভেম্বর এখানে জনসমুদ্র হবে। যেটুকু মাঠ দেওয়া হয়েছে তাতে অর্ধেকও সংকুলান হবে না। এমন পরিস্থিতিতে আপনারা কি করছেন-জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, এ মাঠের সব জনসভা হয় স্থায়ী মঞ্চে। স্থায়ী মঞ্চ না পাওয়ায় মাঠের পশ্চিম দিকে অস্থায়ী মঞ্চ করতে হবে।
বিএনপির গণসমাবেশের আগের দিন থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘট ডেকেছে বাস ও থ্রি-হুইলার মালিক সমিতি। ধর্মঘটের এসব ঘোষণা এসেছে ২-৩ দিন আগে। এ ব্যাপারে লঞ্চ মালিক সমিতি কোনো ঘোষণা দেয়নি। একাধিক লঞ্চ মালিক যুগান্তরকে বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে মালিক এবং শ্রমিকদের বলে দেওয়া হচ্ছে ৪ ও ৫ নভেম্বর লঞ্চ না চালাতে। জেলা লঞ্চ মালিক সমিতি কার্যালয় থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। শুধু অভ্যন্তরীণ রুটেই নয়, ৩ নভেম্বর রাতে ঢাকা থেকে বরিশালগামী কোনো লঞ্চ যাতে না ছাড়ে সেজন্যও বলা হয়েছে।
জেলা লঞ্চ মালিক সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াজ উল কবির বলেন, সোমবার রাতে বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল দাস মালিক সমিতির অফিসে এসে ৪ ও ৫ নভেম্বর অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চ চালাতে নিষেধ করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে আবার এসে তিনি জানান, ৩ নভেম্বর ঢাকা থেকে বরিশালগামী কোনো লঞ্চ ছাড়া যাবে না। মালিক সমিতির দপ্তরে কর্মরত সচিবের কাছে গিয়ে তিনি এসব কথা বলে আসেন। তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে বরিশালগামী লঞ্চ কেন বন্ধ রাখতে বলা হচ্ছে-সেটা বুঝতে পারছি না। তবে মালিক সমিতির কার্যালয়ে যাওয়া ও লঞ্চ বন্ধ রাখতে বলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পরিমল দাস। তিনি বলেন, আমি কেন সেখানে যাব? লঞ্চ চলবে কি চলবে না-সেটা মালিকদের ব্যাপার। আমি একজন সামান্য ঘাট শ্রমিক। আমার কথায় কি লঞ্চ বন্ধ হবে?
জেলা লঞ্চ মালিক সমিতির আহ্বায়ক আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম বলেন, লঞ্চ চলবে নাকি চলবে না সেটা মালিক সমিতির ব্যাপার। আমি যেহেতু কোনো ঘোষণা দেইনি, তাহলে লঞ্চ বন্ধ হবে কেন? আপনারা কোথা থেকে কি শুনেছেন আমি জানি না।
গণসমাবেশ ঘিরে বরিশালের রাজনীতির মাঠ সরগরম হওয়ার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত বাড়ছে উত্তেজনা। সোমবার রাতে হঠাৎ করেই নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে মিছিল সমাবেশ করে যুবলীগ। নগরের ৩০নং ওয়ার্ডে যুবলীগের মিছিল থেকে ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক মীর সাদসহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগও ওঠেছে। এতে ৮-১০ জন আহত হন। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়া কাশীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন লিটন মোল্লা। এর আগে সোমবার সকালে গণসংযোগ চলাকালে উজিরপুর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষমতাসীন দলের হামলার শিকার হয়। সেখানে ১০ জন আহত হন।
বিএনপির গণসমাবেশ নিয়ে আওয়ামী যুবলীগ প্রকাশ্যে কিছু না বললেও সোমবার রাত থেকে নগরে নিয়মিত মিছিল সমাবেশ করছে। ১১ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় যুবলীগের রজতজয়ন্তী উৎসব সফল করতে নিয়মিত কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন যুবলীগ নেতারা।