বিশেষপ্রতিনিধি : বরিশাল ডাইওসিসের নব নির্বাচিত বিশপীয় অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য পকেট কমিটি গঠনের জেরে বরিশাল কাথলিক চার্চের পালকীয় পরিষদ থেকে খ্রিস্টভক্তদের নির্বাচিত ছয় সদস্য পদত্যাগ করেছেন। গত রবিবার পরিষদের সম্পাদক- জন পিন্টু দাস ও পরিষদ সদস্য-শান্তি রায়, মার্গারীতা গনসালভেস, এরিক অসিম বালা, মিনু মণ্ডল স্বাক্ষরিত একটি পদত্যাগ পত্র বরিশাল সেন্ট পিটার্স কাথলিক চার্চের পুরোহিত পালকীয় পরিষদের সভাপতির কাছে হস্তান্তর করেছেন। পদত্যাগ পত্রের সারমর্ম অনুযায়ি-বরিশাল ডাইওসিস দীর্ঘদিন বিশপ শূন্য থাকায় ২১ জুন পোপ নির্বাচিত রাজশাহি ডাইওসিসের ফাদার ইম্মানুয়েল কানন রোজারিওকে নতুন বিশপ মনোনিত করা হয়। এজন্য তাঁকে বরণ করতে আগামী ১৮-১৯ আগস্ট বরিশালে একটি আভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। সেই অনুষ্ঠান বাস্তবায়নের জন্য আয়োজক কমিটিসহ কোনও কমিটিতেই বরিশাল চার্চের পালকীয় পরিষদের কোনও সদস্যকেই আভিষেক কমিটির কোন পদে রাখা হয়নি। এমোন কি, পরিষদকে আগেভাগে এ বিষয়ে কিছুই আবহিত করা হয়নি। ফলে এই পরিষদের সদস্যদের কাছে এ আচরণ অত্যান্ত অপমান ও লজ্জাজনক মনে হয়েছে বলে, উল্লেখ করে একযোগে সকলে গণপদত্যাগ করেছেন। তবে, পদত্যাগকারী কেউ কেউ (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেছেন, বিশপ আভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজনের একটি বিশাল বাজেট রয়েছে। আর চার্চের বর্তমান পুরোহিতের সম্পর্কেও অনেক নেতিবাচক বদনাম আছে। ফলে কমিটি গঠনে সে তার গ্লাসবন্ধু চামচা-চাটুকারদেরই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। অপরদিকে বিতর্কিত আভিষেক অনুষ্ঠান কমিটি ঘোষণার পর চার্চের পালকীয় পরিষদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব তৈরি হলে, সাতাশ জুলাই পরিষদের সভাপতি তড়িঘড়ি করে একটি মিটিংয়ের আয়োজন করে, সদস্যদের তিনি বলেন, ‘কমিটি গঠনে তার কোন হাত ছিলনা। পৈরিতিক প্রশাসক লরেন্স সুব্রত হাওলাদার তার একক ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত বলে, তাকে যে কমিটির রূপরেখা দিয়েছেন। তাদেরকে নিয়েই তিনি অভিষেক বাস্তবায়নে কাজ করেছেন।’ এই বিষয় পালকীয় পরিষদের সভাপতি লাজারুস গোমেজের সাথে মোবাইলে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেছেন, সে বরিশালের বাইরে আছেন। এখন সে কথা বলবেন না। পরে তার অফিসে এসে কথা বলতে বলেছেন। অবশ্য এরই মধ্যে কেউ কেউ পদত্যাগ পত্রের কপি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তেমনি এক পোস্টে– কমানুয়েলস পালমা তার মন্তব্যে লিখেছেন, “প্যারিস কাউন্সিল ধর্ম ব্যবসায়ীদের দালাল শ্রেণী, এমনটা নয়, জি হুজুর বা চাটুকারী দলের নয়। বাজেট করেন, ওডিট ফাঁস করেন। মিটিং সিটিং, অনুষ্ঠান আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। কৃপা ও আর্শীবাদ নিয়ে ঘরে ফিরেন। রাজতন্ত্রের রাজার হুমুকে, রাজত্ব কায়েম হয়। তাই হবে’’… আর গোমেজ উভান হেভেন লিখেছেন, “আমি যতোদূর জানি /এ যাবত দেখে এসেছি, পালকীয় পরিষদে যারা মনোনীত হয়, তারা একদিকে হয় পাল পুরোহিতের চামচা অন্যদিকে হয় হুকুমের গোলাম। হঠাৎ করে ঐ চামচারা পদত্যাগ কেন করলো। ভাগে কি কম পড়েছে নাকি? ইদানিং দেখা যাচ্ছে প্রায় সব প্যারিসের পাল পুরোহিতগণ নব্য অত্যাচারী রাজা হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। যা মণ্ডলীর জন্য খুবই দুঃখজনক।”…আর কাথলিক ডাইওসিসের বিশপ মনোনয়ন নিয়ে ইতোমধ্যে ফেসবুকে তুমুল বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন– কানু গমেজ লাজারুস। তিনি কার্ডিনালকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন,“আপনার সুনামের অতিরিক্ত পাড়ি জমিয়েছেন। এখন থামবার পালা। কথাটা স্মরণে রাখবেন। বরিশালে যদি ডাওসিসান পুরোহিত বিশপ না হয়। তবে আমি দেখব, আপনার অবসরপ্রাপ্ত বিশপ থিওটনিয়াস এবং আর্চবিশপ সুব্রত হাওলাদারের কত ক্ষমতা। বরিশাল ডাওসিসে কোনও হলিক্রুশ পুরোহিতকে বিশপ পদে যদি অভিষিক্ত করা হয়, তবে কোন পুলিশ বেষ্টনি ও প্রিয় কার্ডিনাল আপনাকে সফলতা দেবেনা। আমরা ১৪-জন ডাওসিসান পুরোহিত রুখে দাড়ালাম। আমরা দেখতে চাই আপনাদের এই তিন ব্যাক্তির ভাটিকানে কত ক্ষমতা এবং ভাটিকানে আমাদের কত ক্ষমতা।”… এরইমধ্যে পদত্যাগের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এবং কানু লাজারুস গংদের অসহযোগিতায় আসন্ন অভিষেক অনুষ্ঠানটির জৌলুস হারানোর আশংকায়–নবগ্রাম খ্রিস্টান পাড়া, কাশিপুর ও মতাশা খ্রিস্টান কলোনি, সাগরদি ও কাউনিয়াসহ বরিশালের সকল খ্রিস্টীয় ওয়ার্ড কমিটির নেতা ও খ্রিস্টভক্তদের নেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।