নিজস্ব প্রতিবেদক : মাঘের শীতে এবারের আষাঢ়ের আমেজ দেখা গেল বরিশালে। এক সপ্তাহ ধরে বরিশালসহ দক্ষিণের জেলাগুলোর তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ওঠানামা করায় এমনিতেই তীব্র শীতে কাহিল এ অঞ্চলের মানুষ। তার ওপর আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর উত্তুরে কনকনে হাওয়া। বৃষ্টি আর শীতের মিশেলে পরিস্থিতি আরও অসহনীয় ওঠে। সকাল থেকে জরুরি কাজ ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হয়নি। দুপুর ১২টার আগেই স্কুলগুলো ছুটি দেওয়া হয়। রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা, লোকজন ও যানবাহনশূন্য। অফিস-আদালত যথারীতি খুললেও দোকানপাট অন্যান্য দিনের তুলনায় কম খুলেছে।
ঘন কুয়াশায় বরিশালের আকাশে সারা দিনই সূর্যের দেখা মেলেনি। চরম দুর্ভোগে পড়েছে শিশু, বৃদ্ধসহ সব বয়সীরা। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। তবে শীতে বেশি কষ্টে আছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় রিকশাচালক আবদুল আজিজ বললেন, ‘সাত দিন ধইরা শীতে আয়রোজগার কম। বাজারসদাই করার পয়সাও রোজগার অয় না। আইজ বৃষ্টির লইগ্গা মানুষ ঘর দিয়াই বাইর অয় নাই। রোজগার অইবে ক্যামনে। ক্যামনে যে চলমু কইতে পারি না।’
নগরের একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজের শিক্ষক মীর মোহাম্মাদ জোবায়ের বলেন, ‘শীত আর বৃষ্টি মাথায় নিয়েই আজ কর্মস্থলে যেতে হয়েছে। গণপরিবহন রাস্তায় কম। তাই অতিরিক্ত ভাড়া গুনে রিকশায় যেতে হয়েছে। এই আবহাওয়ায় না ঠেকলে কেউ বাইরে বের হয় না।’
বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের পর্যবেক্ষক হুমায়ূন কবির দুপুরে বলেন, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে বরিশালে। এ সময় ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে এই অসময়ের বৃষ্টি স্থায়ী হবে না। লঘু চাপের প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
হুমায়ূন কবির আরও বলের, সকাল ৬টায় বরিশালে তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও দুপুর ১২টায় তা বেড়ে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। গতকাল বুধবার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও মঙ্গলবার এই সময়ে তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত সোমবার সকালে দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল বরিশালে।
শহরের ছিন্নমূল মানুষ ও গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র পরিবারগুলোতে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় অনেকেই খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। আবার কেউ কেউ স্বল্পমূল্যে শীতবস্ত্র কিনতে পুরোনো পোশাকের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন।
মাঝেমধ্যে কিছু এলাকায় রোদের দেখা মিলেছে। তবে জানুয়ারি মাসে এই কুয়াশাকে একেবারে অস্বাভাবিক বলে মনে করেন না আবহাওয়াবিদেরা। তাঁরা বলছেন, দেশে সবচেয়ে বেশি শীত পড়ে জানুয়ারি মাসে। এ নিয়ম মেনেই চলতি জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই শীত পড়তে শুরু করে। শুরু হয় শৈত্যপ্রবাহ, সেই সঙ্গে কুয়াশা। গত বছর দেশে এই মাসে কয়েকটা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। তবে এ বছর এখন পর্যন্ত কোথাও এমনটা হয়নি। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র বলছে, আগামীকাল শুক্রবার থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কুয়াশা অনেকটা কেটে যেতে পারে।
বরিশাল অঞ্চলের আবহাওয়া কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় শুক্রবারও দেশের কিছু কিছু স্থানে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে এরপর শুক্রবার বেলা বাড়ার সঙ্গে কুয়াশা কেটে যাবে। রোদের দেখা মিললেও শীতের তীব্রতা শিগগিরই কমার সম্ভাবনা নেই।