বরিশাল নগরীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। মারা যাওয়া রোগীর স্বজনরা তার নমুনা সংগ্রহ করার জন্য পুলিশের সহযোগিতা চান। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে সিটি করপোরেশনের ডাক্তারকে ফোন করা হয়। করপোরেশনের টেকনোলজিস্ট অসুস্থ থাকার কারণে তিনি ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক সার্জনকে ফোন দেওয়া হলে তাদের পক্ষে বাইরে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন। পরে সিভিল সার্জন ডা. মো. মনোয়ার হোসেনকে ফোন দিলে তিনিও বাইরে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দেন। পরে স্বাস্থ্য বিভাগের অনুরোধে সিভিল সার্জন নমুনা সংগ্রহ করে দেন।নানা উপসর্গ থাকায় গত ৩ জুন বানারীপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আবদুল্লাহ সাদীদ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ওইদিনই তার নমুনা পাঠিয়ে দেয়া হয় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। কিন্তু তারপর ৩দিন ওই নমুনা পড়েছিল সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে সিভিল সার্জন ওই নমুনা পরীক্ষা করিয়ে গতকাল রবিবার আবদুল্লাহ সাদীদের করোনা নেগেটিভ বলে ফোনে জানিয়ে দেন। দুটি ঘটনার সঙ্গে প্রশাসন সরাসরি জড়িত। তার পরেও এঘাট ওঘাট করে নমুনা সংগ্রহ করতে পুলিশ প্রশাসন স্বাস্থ্য বিভাগকে বাধ্য করেছে। এই যদি হয়, করোনা নমুনা সংগ্রহের চিত্র, তাহলে গ্রামের পরিস্থিতি কেমন হবে পারে, তা আচ করতে পারেন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু তাদের কোনো উদ্যোগ না থাকায় শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাপাতালের ওপর চাপ বাড়ছে।জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, করোনা সংক্রান্ত জেলার সকল তথ্য সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে দেওয়ার কথা। কিন্তু সিভিল সার্জন কোনো ধরনের সহযোগিতা করছেন না। আক্রান্ত ব্যক্তির নমুনা পর্যন্ত সংগ্রহের ব্যবস্থা করছেন না তিনি। তথ্য দিয়েও সহযোগিতা করছেন না। আবার কখনো তথ্য দিলে তা ভুলে ভরা থাকে। সকালের তথ্য বিকেলে, বিকেলের তথ্য পরদিন সকালে দিচ্ছেন। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক সার্জন ও করোনা চিকিৎসা মনিটরিং কমিটির সদস্য ডা. সুদীপ হালদার জানান, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের কথা। কিন্তু তারা নমুনা সংগ্রহ করছেন না। শুধু সিভিল সার্জন নয়, জনবল সংকটের দোহাই দিয়ে জেনারেল হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন, পুলিশ হাসপাতাল নমুনা সংগ্রহ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে চাপ পড়ছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওপর। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, নগরীর নমুনা সংগ্রহের কথা সিটি করপোরেশন। তারা নমুনা সংগ্রহ করছে না। আমাদের পক্ষেও নেয়া সম্ভব নয়, কারন নগরীতে কোনো জনবল নেই। তাই সিটিবাসীর নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পড়ে সিটি এলাকায় থাকা শের-ই বাংলা মেডিকেল এবং জেনারেল হাসপাতালের। জেনারেল হাসপাতালে একজন মাত্র টেকনোলজিস্ট। তার একার পক্ষে পুরো সিটি এলাকার নমুনা সংগ্রহ অসম্ভব। সিভিল সার্জন আরো বলেন, বানারীপাড়ার ইউএনও’র নমুনা তার কার্যালয়ে ৩দিন পড়ে থাকার অভিযোগ সত্য নয়। তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখেননি। এটা একটা ভুল। এ কারণে জেলা প্রশাসক ক্ষুব্ধ হতে পারেন।